রঞ্জন কৃষ্ণ পন্ডিত, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলের বিভিন্ন উপজেলায় মাঠে-মাঠে এখন পাকা ধান। শ্রমিক সংকটে সময়মতো ধান কাটাতে পারছে না অনেক কৃষক। ৬-৭’শ টাকায়ও মিলছে না একজন শ্রমিক। শ্রমিক মিললেও জনপ্রতি মজুরি দিতে হচ্ছে ৬৭০ থেকে ৭০০ টাকা। সঙ্গে দুই বেলা খাবার। এতে গৃহস্থের শুধু ধান কাটতেই প্রতি মণ ধানের খরচ পড়ছে ৮০০ টাকা। অন্যান্য খরচ যেমন জমি চাষ, সেচ, চারা, সার, কীটনাশক, শ্রমিক আছেই। চলতি বোরো মৌসুমে ঝড়, শিলাবৃষ্টি, পোকা-মাকড়, রোগ-বালাই নিয়ে কৃষকরা ছিল মহাবিপাকে। টাঙ্গাইলের বিভিন্ন উপজেলার বাজারে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা।

সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এ বছর শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি থাকায় অনেক স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ধান কাটার কাজ নেমে পড়েছে। প্রতিটি এলাকায় কম-বেশি বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে।

ধনবাড়ী উপজেলার পাইস্কা ইউনিয়নের কয়ড়া গ্রামের কৃষক মো. সবুর উদ্দিন জানান, আমি এবার ১০ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছি। শ্রমিক মূল্য বেশি হওয়ায় ধানের উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। এ কারণে ধান চাষ করে আমাকে লোকসান গুনতে হচ্ছে।

মধুপুর উপজেলার ফুলবাগচালা ইউনিয়নের ধানচাষী কালাম জানায়, ফলন ভাল হলেও শ্রমিক সংকটের কারণে সঠিক সময়ে ধান কাটতে পারছি না। দ্বিগুণ মজুরি দিয়ে ধান কাটার ফলে এ বছর লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ঘাটাইল উপজেলার দেউলাবাড়ী ইউনিয়নের চৈতঠ গ্রামের কৃষক আব্দুছ ছালাম জানায়, তিনি এ বছর ৫ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছিলেন। একটি জমিতে ব্লাস্টের আক্রমণ হলেও অন্য সব জমিতেই ভাল ফলন হয়েছে। শ্রমিক মজুরি দিতে গিয়ে আমি দিশেহারা হয়ে পড়েছি।

টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক জানান, চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লক্ষ ৬৬ হাজার ৯৮ হেক্টর কিন্তু বোরো চাষ হয়েছে ১ লক্ষ ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে। হেক্টর প্রতি গড়ে সাত থেকে আট মেট্রিক টন করে ফলন পাওয়া যাচ্ছে।

গত বছর এ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লক্ষ ৬৩ হাজার হেক্টর। বোরো চাষ হয়েছিল ১ লক্ষ ৬৬ হাজার ৩৬২ হেক্টর জমিতে। এ বছর ধানের দাম বৃদ্ধির কারণে কৃষকরা ধান চাষের প্রতি বেশি আগ্রহী হয়েছে। ব্লাস্ট নামক ছত্রাকের আক্রমণে কোনো কোনো স্থানে ধানের ফলন কম হলেও জেলার সার্বিক ফলন ভাল হয়েছে বলে তিনি জানান।

(আরকেপি/এসপি/এপ্রিল ২৮, ২০১৮)