স্টাফ রিপোর্টার : টাঙ্গাইলের মধুপুরের কলেজছাত্রী রুপা খাতুনকে চলন্ত বাসে গণধর্ষণ করার পর হত্যা, ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরাম হত্যা ও রংপুরের মসজিদের খাদেম হত্যা এবং ৭ জঙ্গির মামলায় বিচারিক আদালতের ডেথ রেফারেন্স ও নথিপত্র হাইকোর্টে এসেছে। এখন এসব মামলায় পেপারবুক তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। হাইকোর্টের মামলার শুনানির পরেই রায় ঘোষণার মাধ্যমে ঠিক করা হবে আসামিদের ভাগ্যনির্ধারণী।

মামলায় পেপার বুক প্রস্তুত করার পরেই প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নির্ধারিত করে দেয়া হাইকোর্টের বেঞ্চে মামলাগুলোর শুনানির জন্য আসবে।

হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আলোচিত এসব মামলার পেপারবুক প্রস্তুত হওয়ার পরেই হাইকোর্টে করা আপিল শুনানির জন্য বেঞ্চ নির্ধারণ করে দিবেন প্রধান বিচারপতি।

নিয়ম অনুযায়ী, নিম্ন আদালতে কোনো মামলায় আসামির মৃত্যুদণ্ড হলে সে মামলার নথি সংশ্লিষ্ট আদালত আপনাআপনিই হাইকোর্টের পাঠিয়ে থাকে। আসামির মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয় যা ডেথ রেফারেন্স হিসেবে পরিচিত। এখন সরকার যদি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব ডেথ রেফারেন্সের শুনানির জন্য রেজিস্ট্রার কার্যালয় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়ে থাকে। এর আগে যে সব গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি হয়েছিল সেগুলো হলো- বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় করা হত্যা মামলা, সৌদি দূতাবাস কর্মকর্তা খালাফ এস আলী হত্যা মামলা ও ব্লগার রাজীব হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্সের ক্ষেত্রে।

কলেজছাত্রী রুপা ধর্ষণ ও হত্যা মামলা :

টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে কলেজছাত্রী রুপা খাতুনকে গণধর্ষণ ও হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স গত ১৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আসে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে কলেজছাত্রী রুপা খাতুনকে গণধর্ষণ ও হত্যা মামলায় চার আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং একজনের সাত বছরের কারাদণ্ড দেন টাঙ্গাইলের আদালত।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাসের হেলপার শামীম (২৬), আকরাম (৩৫) ও জাহাঙ্গীর (১৯) এবং চালক হাবিবুর (৪৫)। এছাড়া সুপারভাইজার সফর আলীকে (৫৫) সাত বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জব্দকৃত ছোঁয়া পরিবহনের বাসটি রূপার পরিবারকে সাতদিনের মধ্যে হস্তান্তরের নির্দেশও দেন আদালত।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৫ আগস্ট বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে রুপা খাতুনকে চলন্ত বাসে পরিবহন শ্রমিকরা ধর্ষণ করে। পরে তাকে হত্যা করে টাঙ্গাইলের মধুপুর বন এলাকায় ফেলে রেখে যায়। পুলিশ ওই রাতেই তার মরদেহ উদ্ধার করে। ময়নাতদন্ত শেষে পরদিন বেওয়ারিশ মরদেহ হিসেবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় অরণখোলা পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে মধুপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।

ফেনীর একরাম হত্যা মামলা :

রুপা হত্যার রায়ের নথিপত্র হাইকোর্টে আসার পরে ফেনীর ফুলগাজীর উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও মামলার নথিপত্র গত ১৮ মার্চ হাইকোর্টে এসে পৌঁছায়।

বিচারিক (নিম্ন) আদালত থেকে ডেথ রেফারেন্স ও মামলার নথিপত্র হাইকোর্টে পাঠানো হয়। গত ১৩ মার্চ ফেনীর ফুলগাজীর উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক হত্যা মামলার রায়ে ৩৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। এই মামলায় বিএনপি নেতা মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ওরফে মিনার চৌধুরীসহ ১৬ জনকে খালাস দেন আদালত। ফেনী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আমিনুল হক এ রায় দেন।

২০১৪ সালের ২০ মে ফেনী শহরের একাডেমিস্থ বিলাসী সিনেমা হলের সামনে ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি একরামুল হক একরামকে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে কুপিয়ে হত্যা করে।

রংপুরের খাদেম হত্যা মামলা :

গত ২৯ মার্চ রংপুরের কাউনিয়ায় মাজারের খাদেম রহমত আলী (৬০) হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাত জেএমবি জঙ্গির ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে এসে পৌঁছেছে।

গত ১৮ মার্চ রংপুরের কাউনিয়ায় মাজারের খাদেম রহমত আলী (৬০) হত্যা মামলায় সাত জেএমবি জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। একইসঙ্গে প্রত্যেকের ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- জেএমবির রংপুর অঞ্চলের কমান্ডার মাসুদ রানা ওরফে মন্ত্রী, এছাহাক আলী, লিটন মিয়া ওরফে রফিক, বিজয় ওরফে আলী ওরফে দর্জি, সাখাওয়াত হোসেন, সরওয়ার হোসেন ওরফে সাবু ও চান্দু মিয়া। তাদের মধ্যে ছয়জন রংপুর কারাগারে রয়েছেন। আর পীরগাছার চান্দু মিয়া (২০) পলাতক। রায়ে চারজনকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ১০ নভেম্বর রাতে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি, পল্লী চিকিৎসক ও সুরেশ্বরী পীরের মতাদর্শের মাজারের খাদেম রহমত আলী খুন হন। স্থানীয় বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে চৈতার মোড়ে জেএমবির সদস্যরা তাকে গলা কেটে হত্যা করে।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ৩০, ২০১৮)