শেরপুর প্রতিনিধি : স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৭ বছর পর শেরপুরে ঝিনাইগাতীর জগৎপর গণহত্যা স্থলে অবশেষে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে মুক্তিসংগ্রাম জাদুঘর শেরপুর সদর নেটওয়ার্কি কমিটি।

জগৎপুর গণহত্যা দিবসে ৩০ এপ্রিল সোমবার বিকেলে সমাজকর্মী রাজিয়া সামাদ ডালিয়ার নেতৃত্বে ওই গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়। যেখানে জগৎপুর গণহত্যার ঘটনার বর্ণনা সহ শহীদদের নাম সম্বলিত ফলকটি স্থাপন করা হয়।

এসময় সেখানে এক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন জামালপুন মুক্তি সংগ্রাম জাদুঘরের ট্রাস্টি সদস্য হিন্দোল সরকার, সাংবাদিক উৎপল কান্তি ধর, শেরপুর প্রেসক্লাব সভাপতি রফকুল ইসলাম আধার, জনউদ্যোগ কমিটির আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, নেটওয়ার্কিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেন। এছাড়া অধ্যাপক শিব শংকর কারুয়া, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতিন, ঝিনাইগাতী উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শাওন, রজীবার সভাপতি সোহেল রানা, বিতার্কিক এমদাদুল হক রিপন, শহীদ পরিবারের সদস্য বিমল দে প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

আলোচনার একপর্যায়ে শহীদ ধরণী মোহন দে ও তাঁর স্ত্রী প্রয়াত সুভাসিনী দে’র নাতি স্কুল শিক্ষক বিমল চন্দ্র দে ও তার ভাই মিলে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য ২ শতাংশ জমিদান করেন। সমাজকর্মী রাজিয়া সামাদ ডালিয়া ব্যক্তিগতভাবে ৫০ হাজার টাকা দেবেন এবং আরও প্রয়োজনীয় অর্থ তিনি সংগ্রহ করবেন বলে জানান।

ঝিনাইগাতী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাওন স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে যতো পরিমাণ সিমেন্ট প্রয়োজন হয় তা দেবেন বলে ঘোষণা দেন। জামালপুর মুক্তি সংগ্রাম জাদুঘরের পক্ষ থেকে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে বলে দুই ট্রাস্টি সদস্য প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

১৯৭১ সালের এই দিনে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার জগৎপুর গ্রামে পাকবাহিনী শেরপুর শহর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে ঝিনাইগাতী উপজেলার ধানশাইল ইউনিয়নের নিভৃত পল্লী জগৎপুর গ্রাম। ১৯৭১ সালের ৩০ এপ্রিল পাকবাহিনী আর এদেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদররা গ্রামটিকে তিন দিক থেকে ঘিরে ফেললে প্রামের মানুষ প্রাণ বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাশের রঙ্গাবিলে। সেদিন নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয় ৩৫ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে। আহত হয় অর্ধশতাধিক মানুষ।

জ্বালিয়ে দেওয়া হয় জগৎপুর গ্রাম। এতে দুইশ’রও বেশি বাড়ি-ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। সেদিনের সেই ভয়াল স্মৃতি বুকে নিয়ে আজও বেঁচে আছেন অনেকেই। কিন্তু এ গ্রামের গণহত্যা কিংবা যুদ্ধদিনের স্মৃতি সংরক্ষণে সরকারি-বেসরকারি ভাবে দীর্ঘদিনেও কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অবশেষে এবার স্থানীয়ভাবেই শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

(এসআর/এসপি/এপ্রিল ৩০, ২০১৮)