হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : টানা বৃষ্টিতে হবিগঞ্জ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সার্কিট হাউজ, জেলা প্রশাসকের বাসভবন, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বাসা-বাড়ির সামনে পানি জমে রয়েছে। এতে জনসাধারণকে চলাচলে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। শনিবার থেকে রবিবার দিনভর এবং সোমবার থেমে থেমে হবিগঞ্জে প্রবল বৃষ্টি হয়। শহরে পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। 

জলাবদ্ধতার কাঁদা পানি মারিয়ে লোকজনদের চলাচল করতে হচ্ছে। আর এসব পানি বিষাক্ত হওয়ায় লোকজনদের শরীরে চর্মরোগ সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া বাসাবাড়ির সামনে জমে থাকা ময়লা পানি থেকে মশা, মাছিসহ বিভিন্ন ধরণের পোকা-মাকড় বাসায় প্রবেশ করছে। মশার কামড়ে লোকজন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শহরের চৌধুরী বাজার, ঘাটিয়া বাজার, কালীবাড়ি ক্রস রোড, প্রধান সড়কের জেলা পরিষদের কার্যালয়ের সামন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সার্কিট হাউজ, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, মোহনপুর, শ্যামলী, নোয়াহাটি, শায়েস্তানগরের ভেতরের রাস্তা, টাউন মডেল সরকারি বালক ও বালিকা স্কুলের রাস্তা, নোয়াহাটি, নাতিরপুর, বাতিপুর, গানিংপার্ক, টাউন হল রোড, বগলা বাজার থেকে গরু বাজার পর্যন্ত, চৌধুরী বাজার কাঁচামাল হাটা, হাসপাতাল থেকে অনন্তপুর, ঘাটিয়া বাজার থেকে বাইপাস সড়ক, কামারপট্টিসহ পৌরসভার অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া শহরের বিভিন্ন গলিতে পানি জমে গেছে।

এলাকার জলাবদ্ধতার সৃষ্টির কারণ হিসেবে পরিবেশবিদরা শহরের পুরাতন খোয়াই নদী দখল, শহরের বাইপাস রোডে রেলের খাল দখলসহ পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকাকে দায়ী করছেন। গতকাল বিক্ষুব্ধ হবিগঞ্জ শহরবাসী অনেকেই তাদের ফেসবুক আইডিতে জলাবদ্ধতার করুণ চিত্র তুলে ধরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এম এ সৈকত জানান, গতকাল সকালে হাটু পানি ভেঙ্গে অফিসে প্রবেশ করতে হয়েছে। আমরা সারাদিন পানিবন্দি ছিলাম। তিনি বলেন- শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন করতে পরিকল্পিত উদ্যোগ নিয়ে ড্রেনগুলো পরিস্কার পরিচ্ছিন্ন রাখতে হবে। পাশাপাশি জনসাধারণকে নীতিমালা অনুযায়ী বাসা-বাড়ি নির্মাণ করতে হবে। সকলে মিলে পরিকল্পিত উদ্যোগ নিলে জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল জানান, বৃষ্টির পানি ধারনের আধার পুকুর, নদী, জলাশয় দখল ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে কয়েক বছর ধরে হবিগঞ্জ শহরের অধিকাংশ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে শহরের বৃষ্টির পানি ধারণ ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় পুরাতন খোয়াই নদীর ভুমিকা ছিল অপরিসীম। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ৫ কিঃমিঃ লম্বা শহরের প্রধানতম জলাধার পুরাতন খোয়াই নদীর অধিকাংশ এলাকা ভরাট ও দখল হওয়ার ফলে অল্প বৃষ্টিপাতে শহরের বিভিন্ন একালায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।

ভুক্তভোগী এলাকার মানুষকে দুর্গন্ধময় ও আবর্জনা মিশ্রিত পানিতে আবদ্ধ অবস্থায় চলাচল এবং বসবাস করতে হয়। অথচ দুঃখের বিষয় কয়েক বছর ধরে চলে আসা এসব সমস্যা দূরীকরণে কার্যকর কোন পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বর্তমানে জলাবদ্ধতার এই শহরে চরম আকার ধারণ করে মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। তিনি বলেন- পুরাতন খোয়াই নদী ও শহরের বাইপাস সড়কের খাল দখলমুক্ত হলে জলাবদ্ধতা নিরসন হবে।

(এমইউএ/এসপি/মে ০১, ২০১৮)