হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : হবিগঞ্জে বিরল প্রজেরিয়া রোগে আক্রান্ত শিশু নিতু’র পাশে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ জেলা প্রশাসন। আজ মঙ্গলবার হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির, জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ নিতুর শায়েস্তানগরস্থ বাসয় যান। 

এ সময় তারা নিতুর পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেন। এমপি তার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা নিতুর হাতে তুলে দেন। এ ছাড়াও তিনি প্রধানমন্ত্রী’র পক্ষ থেকে নিতুর পরিবারের থাকার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করে দেয়ার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, প্রতিবন্ধিরা সমাজের বোঝা নয়। প্রতিবন্ধিদের পাশে বিত্তবানসহ সমাজের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। তাদের কোন ধরণের অবহেলা করা যাবে না।

জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা প্রদান করেন এবং পরবর্তীতে আরো ১০ হাজার টাকা দেয়ার আশ্বাস দেন। এছাড়াও তিনি নিতুকে সার্বিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। এ সময় হবিগঞ্জের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী দেওয়ান মিয়া নগদ ১০ হাজার টাকা নিতু ও তার পরিবারের সদস্যদের কাছে তুলে দেন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসম শামছুর রহমান ভূইয়া, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ মাদকবিরোধী শক্তি কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী জান্নাত রাখী, স্থানীয় কাউন্সিলর উম্মেদ আলী শামীমসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

সহযোগিতা পেয়ে নিতুর মা জোৎস্না বেগম আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এবং সহযোগিতার জন্য গণমাধ্যমকর্মীসহ সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

উল্লেখ্য, ১১ বছর বয়সী শিশু নিতু দেখতে অনেকটাই বুড়োদের মতো। চিকিৎসকরা বলছেন, এ রোগে আক্রান্তদের গড় আয়ু মাত্র ১৩ বছর। জীবনের শেষ সময়টুকুতে সন্তানকে প্রাপ্য সেবা দিতে পারছেন পিতা মাতা। নিতুর চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রায় সর্বশান্ত পরিবারটি। এ নিয়ে সম্প্রতি টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে স্থানীয় এমপিসহ বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসে।

নিতু ১১ বছরের হলেও চুলহীন মাথা আর ভাজপড়া চামড়া দেখে তা বুঝার উপায় নেই তার বয়স কত। বিরল প্রজেরিয়া রোগে আক্রান্ত সে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের হিসাবে ৪০ লাখ মানুষের মধ্যে এমন রোগাক্রান্ত লোকের সংখ্যা মাত্র একজন। অল্প বয়সে বুড়িয়ে যাওয়ার এ রোগে আক্রান্তদের গড় আয়ু সাধারণত ১৩ বছর। এরই মধ্যে শারীরিক নানা জটিলতায় ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ছোট্ট এ শিশুটি।

৬ সন্তানের মধ্যে ৩য় নিতুর চিকিৎসার খরচ যোগাতে তার পরিবার এখন প্রায় নিঃস্ব। বাবার ব্যবসাও লাটে উঠেছে। চিকিৎসকেরা অনেক আগেই আশা ছেড়ে দিলেও মেয়ের জন্য স্বপ্ন দেখেন তার মা-বাবা।
সম্প্রতি নিতুর দায়িত্ব নিয়েছেন নারী সমাজকর্মী চৌধুরী জান্নাত রাখী। এখন নিতুর অধিকাংশ কাটে রাখী’র বাসায় তার সন্তানদের সাথে খেলা করে। তার শিশু সন্তানরাও নিতুকে আপন করে নিয়েছে বোনের মতো। নিতুরা যেন সমাজে স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা করতে পারে, এমন প্রত্যাশা এই সমাজকর্মীর।

(এমইউএ/এসপি/মে ০১, ২০১৮)