ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: বিশ্ব কাঁপানো ফুটবলার মেসি কিংবা নেইমারের মত ফুটবল জগতে নিজের নাম লেখানোর স্বপ্ন দেখছেন মুনমুন বেগম। সে লক্ষ্যে চালিয়ে যাচ্ছেন অনুশীলনও। মহিলা ফুটবলে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের নাম ছড়িয়ে দিতে চান তিনি। ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার অজো পাড়াগাঁ রামদেরপুর ফুটবল দলের সেই মুনমুন বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের খেলোয়ার হিসেবে ইতিমধ্যে দেশের মাটিতে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন।

নিজের পাশাপাশি রামদেবপুর মহিলা ফুটবল দলকেও নিয়ে যেতে চান অনেক দুর। মুনমুনকে ঘিড়ে রামদেব পুরের মহিলা ফুটবল টিমের সদস্যদের মধ্যেও সঞ্চার হয়েছে আশার আলোর। জাতীয় দলে না হলেরও এ দলের বেশ কয়েকজন সদস্য ঢাকার আবাহনী, মহামেডান ও আরামবাগ ক্লাবের হয়ে জাতীয় পর্যায়ে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। খেলেছেনও কয়েক বার। কিন্তু বর্তমানের পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সম্ভাবনাময় এই মহিলা ফুটবল দলটিতে কিছুটা হলেও টান পড়েছে।

নারীরাও কিছু করতে পারে এমন প্রত্যাশা নিয়ে ২০০৯ সাল রামদেবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের নিয়ে ঐ বিদ্যালয়ের শিক্ষক বাদশারুল ইসলাম গড়ে তুলেন একটি মহিলা ফুটবল টিম। সে বছরই ঠাকুরগাঁও জেলা দলের হয়ে ঢাকায় জাতীয় মহিলা ফুটবল টুর্নামেন্টে আংশ নেন তারা। শুরুতে ভাল করতে না পারলেও পিছপা হননি তারা। চালিয়ে যেতে থাকেন অনুশীলন। এর পর বিভিন্ন লীগ ও জেলা এবং বিভাগীয় পর্যায়ে চাম্পিয়ন হন তারা। ২০১২ সালে ঢাকার মহামেডান ক্লাবের হয়ে মনসা এবং মৌসুমী ও আবাহনী ক্লাবের হয়ে মুনমুন এবং আরামবাগ ক্লাবের হয়ে জফুরা, হামিদা, সন্ধা, মনিকা, মনসা, বেবী ও খুকুমনি জাতীয় পর্যায়ের ফুটবল খেলায় অংশ নেয়। খেলায় ভাল অবদান রাখায় সেবছরই জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের বাছাইয়ে জায়গা করে নেন মুনমুন। সেই যে সামনের দিকে পথ চলা। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি মুনমুনকে।

দেশের জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের হয়ে ভারত, শ্রীলংকা ও মালয়েশিয়ায় খেলায় অংশ নিয়েছেন মুনমুন। সে সময় জেলা প্রশসনের পক্ষ খেতে তাকে সংবর্ধনা দেন তৎকালী জেলা প্রশাসক শহিদুজ্জামান। এখন ঢাকায় অনুশীলনের পাশাপাশি রামদেবপুর মহিলা দলের সহকর্মীদের অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। আগামীতে কুয়েতে বাংলাদেশ দলের হয়ে প্রীতি ফুটবল ম্যাচে অংশ নিতে যাচ্ছেন তিনি। বৃহস্পতিবার এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় মুনমুনের, তিনি এখন বিশ্ব কাপানো ফুটবলাদের মত নিজেকে গড়ে তুলতে চান। বিশ্বের দরবারে উজ্জল করতে চান দেশের সুনাম। রমজান উপলক্ষে বাড়িতে এসে লেগে পড়েছেন রামদেবপুরের সেই মতীর্থ ফুটবল খেলোয়াড়দের নিয়ে নিয়মিত অনুশীলন। দিচ্ছেন নির্দেশনা। জাগিয়েছেন ফুটবলের মোহ। তার অনুপ্রেরনায় আশায় বুক বেধেছে এক সময়ের সহকর্মীরা। তারাও এখন নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন ফুটবল নিয়ে।

মুনমুনের পথ অনুসরণ করছেন তারা। কিন্তু পৃষ্টপোষকতার অভাবে তা বাধা গ্রস্থ হচ্ছে। শিক্ষক বাদশারুল ইসলাম জানান, সবার আগ্রহ ও অনুপ্রেরণা আছে। পরিবারের সম্মতি আছে। কিন্তু অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে বেশী আগানো যাচ্ছে না। তার স্বপ্ন, এই গ্রামের দলের মুনমুন এখন জাতীয় দলে খেলছেন। তার বিশ্বাস, এদলের সদস্যরাই একদিন দেশের মানচিত্র বিশ্বের দরবারে উচু করে তুলে ধববেই।
জেলা ক্রীড়া অফিসার আবু মহিউদ্দীন জানান, সম্ভাবনাময় এই রামদেবপুর মহিলা পুটবল দলকে এগিয়ে নিয়ে নানা সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। তারপরও তারা এগিয়ে গেছে। আরো আগাবে। এর জন্য সকল প্রকার সহযোগিতা করা হবে বলে তিনি জানান।

পীরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল ইসলাম জিয়া জানান, আমাদের উপজেলার একজন জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের হয়ে খেলছেন, এটা গর্বের বিষয়। আরো কয়েকজন ঢাকার সেরা ক্লাবগুলিতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছেন এটা কম নয়। তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে।

(জেএবি/জেএ/জুলাই ১০, ২০১৪)