রঞ্জন কৃষ্ণ পন্ডিত, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাতুলী ইউনিয়নের চৌবাড়িয়া গ্রামে বুধবার (২মে) দুপুরে প্রতিপক্ষের দ্বিতীয় দফা হামলায় নারী সহ একই পরিবারের পাঁচ জন আহত হয়েছেন।

আহতরা হচ্ছেন, ওই গ্রামের আব্দুল আলিম, তার বাবা মুন্নাফ আলী, মা শান্তি বেগম, বোন এইচএসসি পরীক্ষার্থী মিনা আক্তার ও ভাই রফিকুল ইসলাম। আহতরা টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

জানা গেছে, সদর উপজেলার চৌবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল আলিমদের সাথে প্রতিবেশী মৃত দানেছ আলীর ছেলে জহিরুল ইসলামদের জমি-জমা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। ওই বিরোধ নিস্পত্তির জন্য গ্রাম্য সালিশ হলেও জহিরুল ইসলামরা তা অমান্য করে। এরই মধ্যে গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর সকালে আব্দুল আলিমের ছোট ভাই আব্দুল বারেকের মরদেহ ঘরের আড়ার(ধর্ণার) সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।

এ সময় মেঝেতে রক্তের দাগও দেখা যায়। এ নিয়ে আব্দুল আলিম তার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালতে মামলা দায়ের করায় আব্দুল আলিম সহ তার পরিবারের সদস্যদের উপর একাধিকবার জহিরুলরা হামলা করে। বাধ্য হয়ে তারা বাড়ি ছেড়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে একই গ্রামে ভিন্ন পাড়ায় অপর একটি বাড়িতে বসবাস শুরু করে। ওই বাড়িতে থাকাকালে আব্দুল আলিমকে স্থানীয়ভাবে চিহ্নিত অপরাধী জহিরুলরা একাধিকবার খুন করার হুমকি দেয়। এ বিষয়ে আব্দুল আলিম টাঙ্গাইল মডেল থানায় পর পর তিনটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

আগের শত্রুতার জের ধরে বুধবার (২মে) দুপুরে মৃত দানেছ আলীর ছেলে জহিরুল ইসলাম(৩৫), তার ভাই শাহ আলম(২২) ও নুরুল ইসলামের (৩০) নেতৃত্বে ১০-১২জন লোক দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে আব্দুল আলিমদের দ্বিতীয় বাড়িতে হামলা চালিয়ে বাড়ির সবাইকে পিটিয়ে আহত করে। আব্দুল আলিম (৩৬), তার বাবা মুন্নাফ আলী (৬০), মা শান্তি বেগম (৫৫), বোন এইচএসসি পরীক্ষার্থী মিনা আক্তার (১৮) ও ভাই রফিকুল ইসলাম (১৭)। এ সময় স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। আহতদের মধ্যে মুন্নাফ আলীকে টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও অন্যদের স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আশরাফ আলী জানান, জহিরুলের বাবা এলাকায় চিহ্নিত চোর হিসেবে পরিচিত ছিল। জহিরুল ইয়াবা বিক্রি সহ স্থানীয় নানা অপরাধের সাথে জড়িত। ইতোপূর্বে নানা ঘটনায় তাকে এলাকাবাসী পুলিশে সোপর্দ করেছে, র‌্যাব তাকে ধরে নিয়ে গেছে। কিন্তু তার সাজা হয়নি। ফলে বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে। তিনি এখন পুলিশের সোর্স হিসেবে নিরীহ লোকদের পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে দিয়ে পুলিশ দিয়ে আটক করিয়ে ফায়দা লুটে থাকে। বুধবার আব্দুল আলিমদের বাড়িতে হামলা করে তারা বাড়ির সবাইকে গুরুত্বরভাবে আহত করেছে।

টাঙ্গাইল মডেল থানার উপ-পরিদর্শক(এসআই) আব্দুল আওয়াল জানান, আব্দুল বারেকের মৃত্যুর ঘটনায় মেডিকেল রিপোর্টের ভিত্তিতে আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। হামলার বিষয়ে তাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি, অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। তবে, নিরাপত্তাহীনতার বিষয়ে পর পর তিনটি সাধারণ ডায়েরির বিষয়ে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি।

(আরকেপি/এসপি/মে ০৩, ২০১৮)