চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের চুন্নাপাড়া মুনিরুল ইসলাম সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটি ও অধ্যক্ষের বিরোধের জেরে দীর্ঘদিন পর্যন্ত “হ য ব র ল” অবস্থায় চলছে শিক্ষা ব্যবস্থা। হচ্ছে না নিয়মিত শিক্ষার্থীদের পাঠদান। বেশির ভাগ শিক্ষক ক্লাসে অনুপস্থিত।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চুন্নাপাড়া মুনিরুল ইসলাম সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার বিগত পরিচালনা কমিটি ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন হাশেমীকে সাময়িক বরখাস্ত ও শেখ কামালকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলে অধ্যক্ষের সাথে পরিচালনা কমিটির দন্ধ শুরু হয়।

সে থেকে দীর্ঘ দেড় বছর ধরে মাদ্রাসার শিক্ষকদের দু’গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে। মাদ্রাসার শিক্ষকরা অধ্যক্ষ ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের গ্রুপের বিভক্ত হওয়ার জের ধরে ক্লাসে আসছে না শিক্ষকরা।
অনুপস্থিত থাকার কারণে ক্ষতির সম্মূখিন হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাদ্রাসায় দু’ভাগে ভাগ হয়ে দুই কক্ষে অধ্যক্ষের সাথে কিছু, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের সাথে কিছু শিক্ষক বসে আছে। শূণ্য ক্লাস রুমে হৈ চৈ করে দিন কাঠাচ্ছে মাদ্রাসার ছাত্র ছাত্রীরা।

কয়েকটি রুমে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে তড়িগড়ি করে ক্লাস রুমে আসতে দেখা গেছে শিক্ষকদের। তৃতীয় শ্রেণীর ক্লাসে ঢুকলে কয়েকজন ছাত্র খেলতে দেখা গেছে।

বাহাউদ্দীন মাহমুদের কাছে গেলেই সে বলে, প্রতিদিন এইভাবে খেলা করি। হুজুরেরা ক্লাসে আসে না।
নবম শ্রেণীর ছাত্র মো. এহছান উদ্দিন জানায়, প্রথম ঘন্টার পরে কোন শিক্ষক ক্লাসে আসেনি। সামনে অর্ধ বার্ষিকী পরীক্ষা। সিলেবাস এখনো অনেক বাকি কিভাবে পরীক্ষা দিবো জানি না।

অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী সায়মা আকতার জানায়, আমরা সামনে জেডিসি পরীক্ষা দিবো, নিয়মিত ক্লাস হয় না। দু’পক্ষের মারামারি কারণে মাঝে মধ্যে মাদ্রাসা বন্ধ থাকে। তাই পরীক্ষা কি ভাবে দিবো জানি না। আমরা অনেকদিন ধরে উপবৃত্তির টাকাও পাচ্ছি না।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একজন অভিভাবক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মাদ্রাসায় অধ্যক্ষের সাথে দন্ধের কারণে লেখা পড়া হচ্ছে না। আমাদের ছেলে মেয়ে নিয়ে চিন্তায় আছি। খুব তাড়াতাড়ি এই বিরোধ সমাধান করা দরকার।

মাদ্রাসার সাময়িক বহিস্কৃত অধ্যক্ষ মহিউদ্দীন হাশেমী বলেন, সাবেক কমিটি আমাকে সাময়িক বহিস্কৃত করলেও এটা বিধি মোতাবেক না হাওয়ায় আমি স্ব-পদে বহাল আছি।

তাই কিছু শিক্ষক আমার নিয়ন্ত্রনে আছে আর কিছু শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পক্ষ হয়ে কাজ করে। এতে পাঠদানেও ব্যাহত হয়।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শেখ কামাল হোসেন বলেন, সাবেক কমিটি বিধি মোতাবেক আমাকে দায়িত্ব দিলে আমি তা যথাযত পালন করার চেষ্টা করছি।

বর্তমানে আমার স্বাক্ষরেই শিক্ষকদের বেতনভাতা উত্তোলিত হয়। এখানে দন্ধের কারণে শিক্ষার্থীদের লেখা পড়ার ক্ষতি হচ্ছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ড. সেলিম রেজা বলেন, আমি এখানে যোগদান করার পর থেকে শুনতেছি এই মাদ্রাসার বিরোধের কথা।

তবে এ মাদ্রাসার কিছু বিষয় নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ সমাধানের চেষ্টা করলে দু’পক্ষের অসযোগিতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে মাদ্রাসাটির শিক্ষা ব্যবস্থা হুমকির মুখে।

(জেএ/এসপি/মে ০৪, ২০১৮)