রূপক মুখার্জি, নড়াইল : ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ সংক্ষেপে আইপিএল। আইপিএল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে জমজমাট জুয়া খেলা। জেলা শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে সর্বনাশা জুয়া খেলা। 

মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ঘরে বসে এই জুয়া খেলায় অংশ গ্রহন করা যায়। জুয়া খেলে অনেকে আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছে আবার অনেকে খেলায় হেরে সর্বস্ব খুইয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র মানবেতর ভাবে জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। সবকিছু মিলে, আইপিএল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে সারা দেশের ন্যায় নড়াইলেও জুয়া খেলা জমজমাট আকার ধারণ করেছে। অথচ, এ বিষয়টি দেখার জন্য কোন কর্তৃপক্ষ আছে বলে মনে হচ্ছে না।

খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, বিগত ২০০৮ সালে ভারতে আইপিএল ( ইন্ডিনিয়ান প্রিমিয়ার লীগ) ক্রিকেট খেলা শুরু হয়। শুরু থেকেই এটি লীগ ভিত্তিক ক্রিকেট খেলা। উত্তেজনা আর শ্বাসরুদ্ধকর এই লীগ খেলাকে কেন্দ্র করে ভারত জুড়ে চলে জমজমাট জুয়া খেলা।

গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবরাখবরও চোখে পড়ার মতো। ভারতের আইপিএল ক্রিকেট খেলার জনপ্রিয়তা এবং উন্মাদনার ঢেউ বাংলাদেশে আসতে বেশি সময় লাগে নাই। সাম্প্রতিক সময়ে জুয়া খেলা শুধু শহরে সীমাবদ্ধ থাকে নাই, গ্রামাঞ্চলে ও ছড়িয়ে পড়েছে এই সর্বনাশা জুয়া খেলা।

মূলত এই জুয়া খেলার ধরণ হলো কোন দল জিতবে, কোন দল হার হারবে। এই বলে ৪ নাকি ছক্কা , উইকেট পড়বে নাকি ১,২ রান হবে, রান আউট হবে নাকি ক্যাচ আউট হবে, নাকি নো বল হবে ইত্যাদি বিষয়ে টাকা দিয়ে জুয়া হচ্ছে। সর্বনিম্ন ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ২০/৩০ হাজার টাকার জুয়া খেলা হচ্ছে। তা ছাড়া, রেটের মাধ্যমেও এই জুয়া খেলা হচ্ছে। দুর্বল দলের পক্ষে ১০০ টাকায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ করে টাকা প্রদান করা হয়। জুয়া খেলার জন্য কেউ কেউ স্ত্রী, মা,বোনের স্বর্ণ বন্ধক রেখে মরণ খেলায় অংশ গ্রহণ করছে। আবার কেউ কেউ জুয়া খেলে হাজার হাজার টাকা কামিয়ে নিচ্ছে। ক্রিকেট খেলার এই ফাঁদে পড়ে অনেক ধারদেনা হয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। জনবহুল এলাকা গুলোতে আইপিএল ক্রিকেট জুয়া খেলা মারাত্বক আকার ধারণ করেছে। এতে দিন দিন বাড়ছে জুয়াড়ির সংখ্যা।

অনুসন্ধানকালে আরও জানা গেছে, জেলার লোহাগড়া উপজেলায় আইপিএল ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে জুয়া খেলা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সর্বনাশা এই জুয়া খেলায় হাজার হাজার টাকা হেরে বিশু বিশ্বাস নামের একজন সেলুন ব্যবসায়ী এলাকা ছেড়ে বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছে। লোহাগড়ার বিধান বিশ্বাস নামে এক যুবক জুয়া খেলে হেরে এখন মানবেতর ভাবে জীবনযাপন করছে। লোহাগড়ার পোদ্দার পাড়ার স্বর্ণের ব্যবসায়ী প্রতাপ সাহা ও বাপ্পারও একই অবস্থা। জয়পুর গ্রামের জাহিদ জুয়া খেলায় হাজার হাজার টাকা হেরে সেও মানবেতর জীবনযাপণ করছে।

নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন (পিপিএম) বলেন, সুনিদিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই জুয়াড়িদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(আরএম/এসপি/মে ০৫, ২০১৮)