সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : সিরাজগঞ্জ জেলায় গত ক’দিনের টানা বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমাট বাধার ফলে ক্ষেতেই ঝরে পড়ছে পাকা ধান। চলতি মৌসুমে ধান কাটা শুরু হয়েছে। কিন্তু নিচু এলাকার পাকা ও আধা পাকা ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়ে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হলেও শ্রমিক সংকটে তা কেটে ঘরে তুলতে পারছে না কৃষক।

এ বছর সিরাজগঞ্জ জেলায় চলতি মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও হঠাৎ করে ঝড়ো বৃষ্টির প্রভাবে অধিকাংশ জমির পাকা ও আধা পাকা ধান নিয়ে শ্রমিক সংকটে বিপাকে রয়েছে কৃষকরা।

জেলার প্রধানত রায়গঞ্জ, কাজিপুর, উল্লাপাড়া, বেলকুচি, শাহাজাদপুর, তাড়াশ, কামারখন্দ উপজেলাসহ সলঙ্গা থানায় বোরো প্রধান এলাকায় চাষিরা এখন ধান কাটার সময় শ্রমিক সংকটে পড়েছে।

পাকা ধান ক্ষেতেই পেকে ঝরে যাচ্ছে কৃষকের ফসল । এ জেলায় ৫০ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে চলতি মৌসুমে আমনের আবাদ করা হয়েছিল। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরও ধানের বাজার ভাল থাকায় বোরো চাষীরা লাভের স্বপ্ন দেখছিল।

কিন্তু চাষিরা দৈনিক ৫’শ থেকে ৭’শ টাকা মজুরি দিয়েও কৃষি শ্রমিক পাচ্ছে না কৃষক। আর এ কারণে মাঠের ধান মাঠেই ঝরে পড়ছে। তবে শ্রমিক সংকটের অন্যতম কারণ হিসেবে অনেকে মনে করছেন, এলাকায় মাত্রাতিরিক্ত অবৈধ ইটভাটা স্থাপিত হওয়ার ফলে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। কেননা প্রতিটি ইটভাটা'র প্রতিদিন কমপক্ষে ৩ শতাধিক লোক কাজ করে।

এই ভরা মৌসুমে ইটভাটা ছেড়ে কৃষি কাজে নিয়োজিত হলে ইটভাটা'য় আর নেয়া হবে না বলে শ্রমিকরা বাধ্য হয়ে ইটভাটা'য় কাজ করছে বলে জানান, রায়গঞ্জ উপজেলার ব্রম্মগাছা ইউনিয়নের কৃষক রফিকুল ইসলাম।

এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, আগামীতে শ্রমিক সংকট আরও বড় আকার ধারন করবে। আর সেদিক বিবেচনা করে কৃষকদের দলবদ্ধ করে চাষা বাদকে যান্ত্রিকতার আওতায় আনার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

সে লক্ষে ইতিমধ্যে প্রতিটি উপজেলায় কৃষকদের উপস্থিতিতে কম্বাইন্ড হারবেস্টার, ডিপার মেশিন- এই যন্ত্রগুলো দিয়ে কৃষকের মাঠের ধান কর্তন করে মাঠ দিবস করা হচ্ছে। একই সঙ্গে যন্ত্রের উপকারিতা ও অর্থনৈতিক সাশ্রয় বিষয় তুলে ধরা হচ্ছে।

অত্র জেলার কয়েকজন কৃষক জানান, এ বছর বোরো আবাদ ভালো হয়েছে কিন্তু দৈনিক ৫'শ থেকে ৭'শ টাকা মজুরি দিয়েও আমরা শ্রমিক পাচ্ছি না। আর এ কারণে মাঠের ধান মাঠেই ঝরে পড়ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বলেন,কৃষি শ্রমিকের সংকটের বিষয়টি মাথায় রেখেই চাষাবাদে কৃষকদের যান্ত্রিকতায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য রিপার মেশিন ও কম্বাইন্ড হারবেষ্টার সহ কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয় শুরু করা হয়েছে।

কৃষকরা বলছেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও বোরোধানের বাম্পার ফলন হলেও আমাদের সেই স্বপ্ন কষ্টার্জিত ধান এখন কাঁদা পানিতে লেপ্টে আছে। আশানুরূপ ফলন থেকে এবার আমাদের
বঞ্চিত হওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে।

বৃষ্টি লাগাতার অব্যাহত থাকলে ক্ষেতের ধান সঠিকভাবে কেটে ঘরে তোলা অসম্ভব বলে মনে করছে কৃষকরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসাধরণ সূত্রে জানা যায় , এ জেলায় ৫০ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে চলতি মৌসুমে বোরো আবাদ করা হয়েছে। কয়েক দিনের বর্ষণে প্রায় ২৩৭০ হেক্টর জমির আমন ধান হেলে পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এদিকে ধানের খড়কুটা পচে যাওয়ায় ও কর্দমাক্ত হওয়ায় গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিবে বলেও মনে করছে কৃষকরা। কৃষকরা লোকসান মুখে পড়বে বলেও ধারনা তাদের।

রায়গঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল হক মন্ডল জানান, কৃষকদের পাকা ধান কাটা এবং নিচু জমির পানি সরিয়ে দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। শ্রমিক সংকটে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে কৃষকদের।

(এমএএম/এসপি/মে ০৫, ২০১৮)