উজ্জ্বল হোসাইন : মেঘনা নদীর ওপর স্থাপিত চাঁদপুর-শরীয়তপুর ফেরি সার্ভিস গত সতের বছরেও স্বাভাবিক হতে পারেনি। এর কারণ সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব, নদী ভাঙন, ঘাট সমস্যা, গর্তে ভরা ভাংগা রাস্তা,নেই রো-রো ফেরী এবং থাকছে প্রতিবছর ফেরি নৌ চ্যানেলে নাব্যতা সংকট। এসব সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতার মধ্যে ফেরী কার্যক্রম অব্যাহত থাকায় দিন দিন এ পথে গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু আবার রাস্তা সমস্যার দরুন প্রায় বন্ধ এ রুটের ফেরি চলাচল। 

গতবছর ছিলো চাঁদপুর সড়ক বিভাগের ভাটিয়ালপুর থেকে ফেরিমুখী প্রায় ১২ কি.মি.রাস্তার অচলাবস্থা। সাংবাদিকদের ব্যাপক লেখালেখিতে এ বছরের শুরুতে এ রাস্তা সংস্কারের উদ্যোগ নেয় চাঁদপুর সড়ক বিভাগ, যার কাজ চলমান। এ সমস্যা সমাধান না হতেই এবার দেখা দিয়েছে শরীয়তপুর রাস্তার সমস্যা। সেই সমস্যা এতটাই ভয়াবহ বন্ধ হয়ে গেছে এ পথের গাড়ি চলাচল।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফেরিঘাট থেকে শরীয়তপুরের আঙ্গারিয়া পর্যন্ত ৩৫ কি.মি. রাস্তার খুবই খারাপ অবস্থা। বৃষ্টির পানি রাস্তার গর্তে জমে খাল-নালায় পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভোক্তভুগীরা। গাড়ি চালকদের ভোগান্তি আর জনদুর্ভোগ চরমে। দুই পাড়ে গাড়ির সিরিয়াল চোখে পড়ছে না। ফেরিঘাট টার্মিনাল মাঠ এখন গাড়ি শূন্য। কমে গেছে বিআইডাব্লিউটিসির এই ফেরীঘাটের দুই-তৃতীয়াংশ রাজস্ব। যেখানে প্রতিদিন এ রুটে তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ গাড়ি ফেরী পারাপার হতো। এখন তা প্রায় শূন্যের কোঠায়।

বিআইডাব্লিউটিসির চাঁদপুর ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) পারভেজ খান জানান, শরীয়তপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের অত্যন্ত দুরাবস্থার কারণে বিআইডাব্লিউটিসির চাঁদপুর-শরীয়তপুর ফেরি সার্ভিসের রাজস্ব আয় অনেকাংশে কমে গেছে। শরীয়তপুর ফেরিঘাট থেকে আঙ্গারিয়া পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কি.মি. রাস্তা যানবাহন চলাচলের জন্য এখন সম্পূর্ণ অনুপযোগী কেতকী, করবী ও কস্তুরী আমাদের এ তিনটি ফেরী চলমান, গাড়ি না আসায় ফেরীগুলো ঘাটে বসে থাকতে হয়।

বিআইডাব্লিউটিসির শরীয়তপুর ফেরীঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) আঃ ছাত্তার জানান, গাড়ি নাই, ফেরী বসে আছে। রাস্তা খারাপ সেই কারণে গাড়ি আসছেনা। ফেরিঘাট থেকে শরীয়তপুরের ৩৬ কি.মি. রাস্তার মধ্যে কাশিমপুর হতে ফেরিঘাট পর্যন্ত ৯ কি.মি.সড়ক রাস্তার ভয়াবহ অবস্থা। রাস্তা খাল হয়ে আছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ রাস্তা ঠিক করছে না।

এ পথে চলাচলকারী এবং সরকারি মালামাল পরিবহনের সাহারা কার্গোর ড্রাইভার আলমগীর (২৫) জানায়, শরীয়তপুর-মাদারীপুর যাইতে রাস্তা এতটাই ভাংগা না জেনে যারাই এ পথে আসবে গাড়ি ভেঙ্গেচুরে রাস্তায় পড়ে থাকতে হবে।

চট্টগ্রাম-খুলনা রুটের খুলনা মেট্টো ট-১১-১০৫৪ খোলা ট্রাকের ড্রাইভার আকাশ (৪৫) জানান, শরীয়তপুর ঘাটের পর থেকেই রাস্তায় বড় বড় গর্ত। একটু বৃষ্টি হলেই কাদা পানিতে একাকার। সেখানে মাছ চাষ করলে, মাছ বড় হয়ে যাবে।

এদিকে সারা দেশে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করছে। গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে সেখানকার রাস্তার আরো করুণ পরিণতি। এমন পরিস্থিতিতে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের সাথে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের পঁচিশ জেলার সহজ সড়ক যোগযোগ এখন প্রায় অচল। মেঘনা নদীর এ ফেরি রুটে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন প্রায় বন্ধ রয়েছে। কবে নাগাদ শরিয়তপুরের রাস্তা সড়ক বিভাগ পুনঃ নির্মাণ করবে । রাস্তায় আবার আগের মতো গাড়ি চলবে, ফেরি পারাপার হবে। সেটাই দেখার অপেক্ষা।

উল্লেখ্য, ২০০০ সালের প্রথম দিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ বন্দরের সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা সমূহের সহজ সড়ক যোগাযোগের জন্য চাঁদপুর-শরীয়তপুর রুটে মেঘনা নদীর ওপর এই ফেরী সার্ভিস চালু করেন। এর গুরুত্ব এবং চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পেলেও বিরাজমান সমস্যাতে জনস্বার্থে পুরোপুরি কাজে আসছেনা দুর্ভোগ, দুর্দশা আর ভোগান্তি যেন মানুষের নিত্য সঙ্গী। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা ভোক্তভুগীদের।

(ইউএইচ/এসপি/মে ০৬, ২০১৮)