মাদারীপুর প্রতিনিধি : শুভ। নামটা শুনলেই যেন কত কল্যান, আনন্দ আর সুখের মনে হয়। ছিলোও তাই। আনন্দ আর দুরন্তপনায় ভরে ছিলো কিশোরী শুভ আক্তারের জীবন। অভাবের সংসার হলেও সুখ ছিলো, শান্তি ছিলো। আর যে বয়সে ছুটে বেড়াবে। দৌড়োদৌড়ি করবে। এ বাড়ি ও বাড়ি যাবে, দুষ্টুমি করবে। রঙ্গিণ স্বপ্ন আর আদরে ভরে থাকবে জীবন। সেই কিশোরী বয়সেই একটি দুর্ঘটনা জীবন থেকে সব কেড়ে নিলো।  ডান পা হারিয়ে সে আজ বাকরুদ্ধ। বেচে থাকার স্বপ্নই যেন হারিয়ে গেছে। এক মাস ধরে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা সেই শুভ আক্তার এবারের এসএসসি পরীক্ষায় মাদারীপুরের আলগী হাই স্কুল থেকে জিপিএ-৩.২২ পেয়ে পাস করলেও কোন আনন্দ নেই। 

মাদারীপুর সদর উপজেলার হুগলীর আদিত্যপুর গ্রামের শাজাহান খোয়াজের মেয়ে শুভ আক্তার একটি পা হারিয়ে হাসপাতালের বেডে সুয়ে চোখের জল ফেলছে। কলেজে ভর্তি হওয়াও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
শুভ আক্তার মোবাইল ফোনে কেদে কেদে বলে, অনেক স্বপ্ন নিয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলাম। পাসও করলাম। কিন্তু সেই সংবাদটি আমাকে হাসপাতালের বেডে বসে শুনতে হয়েছে। জানিনা এখন কিভাবে কলেজে ভর্তি হবো। এক পা নিয়ে কিভাবে হেটে কলেজে যাবো। পড়াশুনা আমি চালিয়ে যেতে চাই। চিকিৎসার টাকা জোড়ার করতেই সমস্যা হচ্ছে। তাই কলেজে ভর্তি, বইপত্র কিভাবে জোগার হবে জানিনা। তবে আমি দুপায়ে দাড়াতে না পারলেও পরিবার-সমাজের বোঝা না হয়ে পড়াশুনা করে নিজেই স্বাবলম্বী হতে চাই। জানিনা এই স্বপ্ন পূরণ হবে কিনা।

শুভ এর চাচাতো ভাই আজিজুর রহমান আজিজ বলেন, এবার এসএসসি পরিক্ষা শেষ করে ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যায় শুভ। কিছু দিন বেড়িয়ে ৬ এপ্রিল ভ্যানগাড়িতে করে নিজ বাড়িতে ফেরার পথে হুগলী গ্রামের মোল্যাবাড়ির সামনে আসলে জমি চাষের ট্রাক্টর চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার ডান পা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ঐ দিনই তাকে প্রথমে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে পরে ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে সেখানে তার চিকিৎসা চলছে। ইতিমধ্যে কয়েবার অপারেশনও করাতে হয়েছে।

৬ ভাই বোনের অভাবের সংসারে অসুস্থ বেকার বাবা নিজেই চলতে পারেনা, সেখানে মেয়ের চিকিৎসার খরচসহ অন্যন্যা চাহিদাগুলো কিভাবে মেটাবে এবং কলেজে ভর্তি ও বইপত্র কেনার টাকা কোথায় পাবে তাই ভাবছে পরিবারসহ স্থানীয়রা।

(এএসএ/এসপি/মে ০৬, ২০১৮)