স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীতে দুই বাসের রেষারেষিতে হাত হারানোর পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী রাজিব হাসানের মৃত্যুতে মর্মাহত হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।

আজ সোমবার আদালতে রিট আবেদনকারী আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল শুনানি করার সময় আদালত এ কথা বলেন।

আইনজীবী বলেন, রাজীবের মামার কাছে শুনেছি তাদের কোনো সম্পত্তি নাই; শুধু একটু জায়গা আছে। তবে ঘর নাই; ১৪ ও ১২ বছরের দুই ভাই আছে। কিন্তু বাবা মা নেই, রাজীবই তাদের দেখাশুনা করত।

তখন আদালত বলেন, রুল শুনানি তো হবে, তবে এখন কীভাবে অন্তর্বর্তীকালীন তার পরিবারকে রিলিফ (মুক্তি) দেয়া যায় সেটা দেখতে হবে।

এ সময় আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, রুল জারি করার পর বিআরটিসির (বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন) আইনজীবী মনিরুজ্জামান আমার সঙ্গে দেখা করেছেন, বলেছেন বিআরটিসি ২০ হাজার টাকা দিয়েছে। এ ছাড়া স্বজন পরিবহনের একজন পরিচালকও আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তারাও ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন। বিষয়টি রাজীবের খালা আমাকে ফোনেও জানিয়েছেন। অন্যদিকে, রাজিবের চিকিৎসা দেয়া হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে- সেখানে যত খরচ হয়েছে তার বহন করেছে সরকার।

এ সময় আদালত বলেন, রাজীবের মৃত্যুতে পরিবারের যে ক্ষতি হয়েছে তাতে আমরা মর্মাহত। টাকা দিয়ে তো জীবনের মূল্য হয় না। যদি কোটি টাকাও ক্ষতিপূরণ দিতে বলি, তাতে তো আর জীবন ফিরে পাবে না। এরপরও পরিবারের বিষয়টি দেখতে হবে।

রুহুল কুদ্দুস বলেন, এই ঘটনার আইনের মধ্য দিয়ে বিচার হতে হবে। তখন আদালত নজির হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, মিশুক মুনীরের মামলাটা দেখতে পারেন।

এ সময় রুহুল কুদ্দুস বলেন, পাইপে পড়ে নিহতের ঘটনায় শিশু জিহাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।

তখন আদালত বলেন, সেটা তো ঠিকাদার বা সংশ্লিষ্টদের বলেছেন। এখন দেখতে হবে যদি কেউ ইনটেনশনালি মার্ডার (ইচ্ছাকৃত হত্যা) করে তখন তো ৩০২-তে (হত্যার অভিযোগ) মামলা আসা অমূলক নয়।

রুহুল কুদ্দুস বলেন, আইন কমিশন চেয়ারম্যান (বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক) প্রধান বিচারপতির (সৈয়দ মাহমুদ হোসেন) সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। তিনি ট্রাফিক আইনের সংশোধন চেয়েছেন। তার মানে এই ঘটনা সবাইকে স্পর্শ করেছে।

শুনানির এক পর্যায়ে আদালত জানতে চান রাজীবের দুই ভাইয়ের বয়স কত? জবাবে রুহুল কুদ্দুস বলেন, একজনের ১৪ ও অপরজনের ১২ বছর। তখন আদালত বলেন, আমরা দুই ভাইয়ের জন্য ক্ষতিপূরণের আদেশ দেব; কিন্তু গার্ডিয়ান (অভিভাবক) কে? কার অনুকূলে দেব?

রুহুল কুদ্দুস বলেন, তাদের মামা ও খালা আছে। আদালত বলেন, খালাকে আগামীকাল (মঙ্গলবার) নিয়ে আসেন এবং একটি আবেদন দেন কী পরিমাণ দেয়া যায়।

আদেশের পর আদালত থেকে বেরিয়ে রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, রাজীবের খালাকে নিয়ে আসতে বলেছেন আগামীকাল। এরপর আদালত ক্ষতিপূরণে আদেশ দেবেন।

গত ৩ এপ্রিল রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় দুই বাসের রেষারেষিতে হাত কাটা পড়ে রাজীবের। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর ৪ এপ্রিল রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।

হাইকোর্ট এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের রুল জারিসহ রাজীবের চিকিৎসার খরচ দুই বাস মালিক স্বজন পরিবহন এবং বিআরটিসিকে বহনের নির্দেশ দেন। রুলে তাকে (রাজীব) ক্ষতিপূরণ হিসেবে এক কোটি টাকা দিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, সাধারণ যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিদ্যমান আইন কঠোরভাবে কার্যকর করতে কেন নির্দেশনা দেয়া হবে না এবং প্রয়োজনে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আইন সংশোধন বা নতুন করে বিধিমালা প্রণয়নের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না-তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

এ রুল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় গত ১৬ এপ্রিল (সোমবার) দিবাগত রাত ১২টা ৪০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাজীব।

কোর্টের অবকাশ শেষ হওয়ার পর ৬ মে রোববার বিষয়টি আদালতকে জানান রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টাররুহুল কুদ্দুস কাজল।

(ওএস/এসপি/মে ০৭, ২০১৮)