রূপক মুখার্জি, লোহাগড়া প্রতিনিধি : শেষ মুহুর্তে জমে উঠেছে দিঘলিয়া ইউপি’র চেয়ারম্যান পদের উপ-নির্বাচন। তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনী মাঠে নিরুত্তাপ থাকলেও শেষ মুহুর্তে নির্বাচন জমজমাট আকার ধারণ করেছে।  লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নিহত চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান পলাশের স্ত্রী নীনা ইয়াছমিনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনজন চেয়ারম্যান প্রার্থী। আগামি ১৫ মে দিঘলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নীনা ইয়াছমিনসহ নির্বাচনে চার প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সাধারণ ভোটাররা মুখ না খোলায় শেষ পর্যন্ত কে বিজয়ী হবে- তা জানার জন্য ফলাফল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সংখ্যালঘুদের ভোট যে প্রার্থী বেশী পাবে, সেই প্রার্থী বিজয়ী হবে বলে ভোটারদের ধারণা।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ্যে লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে দিঘলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক লতিফুর রহমান পলাশকে (৪৮) গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে নিহত পলাশের বড় ভাই জেলা পরিষদের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা সাইফুর রহমান হিলু বাদী হয়ে জেলা আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরীফ মনিরুজ্জামান মনি, দিঘলিয়া ইউনিয়ন আ’লীগ সভাপতি স ম ওহিদুর রহমানসহ ১৫ জনের নামে লোহাগড়া থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর নির্বাচন কমিশন গত ৫ এপ্রিল দিঘলিয়া ইউনিয়নের উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে।

নির্বাচনে আ’লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী নীনা ইয়াছমিন বলেন, নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে আমি ভোট প্রার্থনা করছি। ভালো সাড়া পাচ্ছি। বিজয়ী হলে আমার স্বামীর অসমাপ্ত কাজ গুলো সম্পূর্ণ করে ইউনিয়নবাসীর সেবা তথা অসহায় মানুষের পাশে থাকতে চাই।

এদিকে বিএনপি প্রার্থী এস এম মাকছুদুল হককে (ধানের শীষ প্রতীক) ভোটের মাঠে তেমন একটা দেখা যায়নি। নির্বাচনের ব্যাপারে মোবাইল ফোনেও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহ প্রকাশ করেননি। এজন্য তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বিএনপির প্রার্থী গোপনে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাচ্ছেন।

তবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নীনা ইয়াছমিনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসাবে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন দিঘলিয়া ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি স ম ওহিদুর রহমানের (আনারস প্রতীক) সমর্থকেরা। তিনি (ওহিদুর) পলাশ হত্যা মামলার আসামি হওয়ায় বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছেন।

এছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসাবে ‘চশমা’ প্রতীক নিয়ে মাঠে আছেন তালবাড়িয়া গ্রামের সন্তান জাতীয় শ্রমিক লীগ লোহাগড়া উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি সাহিদুল আলম।

এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান প্রার্থী ওহিদুর রহমানের ভাই মুক্তিযোদ্ধা সরদার আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা আনারস প্রতীকের জন্য ইউনিয়নের প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় ভোট চাচ্ছি। সঠিক ভাবে নির্বাচন হলে আমাদের প্রার্থী বিজয়ী হবে ইনশাল্লাহ। তিনি দাবি করো বলেন, আমার ছোট ভাই ওহিদুরের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে পলাশ হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে। তাকে বিজয়ী করে ভোটাররা এ ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ জানাবেন বলে আমরা আশাবাদী। আমার ভাই বিজয়ী হলে ইউনিয়নে বিভিন্ন ধরণের উন্নয়ন হবে।

কারাবন্ধী চেয়ারম্যান প্রার্থী ওহিদুর রহমানের পরিবারের সদস্যসহ তার সমর্থকেরা বলেন, বিজয়ের মাধ্যমে তারা প্রমাণ করতে চান; ওহিদুর রহমান এলাকার জনপ্রিয় ও যোগ্য ব্যক্তিত্ব।

‘চশমা’ প্রতীকের প্রার্থী সাহিদুল আলম বলেন, প্রশাসনের কাছে আমরা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আশা করছি। এক্ষেত্রে প্রতিটি কেন্দ্রে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকার আহবান জানাচ্ছি। আমি বিজয়ী হলে মাদক, সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত জনপদসহ প্রতিহিংসার রাজনীতি দুর করব।

গত সোমবার দিঘলিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে পেশাজীবী মানুষসহ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্বাচনে নীনা ইয়াছমিন, ওহিদুর রহমান ও সাহিদুল আলমের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হবে। বিশেষ করে নীনা ইয়াছমিন ও ওহিদুর রহমানের ক্ষেত্রে এ নির্বাচন মর্যাদার লড়াই হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বামী হারানো বেদনার পাশাপাশি চেয়ারম্যান পদটি যেমন পুনরুদ্ধার প্রয়োজন, তেমনি বিজয়ের মধ্য দিয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে দলীয় আস্থা অর্জন করা।
কারণ ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে

চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হন নীনার স্বামী লতিফুর রহমান পলাশ। ওই নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেয়েছিলেন আ’লীগ নেতা মাসুদুজ্জামান মাসুদ। তিনিও (মাসুদ) পলাশ হত্যা মামলার আসামি।

লোহাগড়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সেলিম রেজা জানান, প্রতীক বরাদ্দের পর দিঘলিয়া ইউনিয়নের উপ-নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এখানে ভোটার সংখ্যা ১৭ হাজার ৯৪৭। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮ হাজার ৯৮৬ এবং নারী ভোটার ৮ হাজার ৯৬১।

লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, সুষ্টু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পিপিএম বলেন, সুষ্ঠু সুন্দর ভাবে নির্বাচনের লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দিঘলিয়া ইউনিয়নবাসী নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে পারবেন বলে তাদের আশ্বস্ত করছি।

(আরএম/এসপি/মে ০৭, ২০১৮)