স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসকরা তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে যেসব বক্তব্য তুলে ধরছেন, সেগুলো জামিন পাওয়ার কৌশল বলে আদালতকে জানিয়েছেন মাহবুবে আলম।

রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ এই আইন কর্মকর্তা সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে জামিন দিয়ে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল শুনানিতে মঙ্গলবার এ কথা বলেন।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হওয়ার পর থেকে ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন বিএনপি নেত্রী। গত ২৮ মার্চ তার অসুস্থতার গুঞ্জন ছড়ায়। পরদিন ঢাকার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে চিকিৎসকদের একটি দল কারাগারে গিয়ে খালেদা জিয়ার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আসে।

১ এপ্রিল বিএনপি প্রধানের চিকিৎসায় গঠন করা হয় চার সদস্যের মেডিকেল বোর্ড। আর এই এ বোর্ডের পরামর্শে ৭ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে এনে তার বেশ কিছু এক্সরে করা হয়।

আর ৩০ মার্চ খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার দাবি তুলে বিএনপি। কিন্তু এ নিয়ে রাজনীতিতে নতুন গুঞ্জন শুরু হওয়ার পর বিএনপি অবস্থান পাল্টে দেশে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার দাবি করে।

এর মধ্যে গত ২৮ এপ্রিল বিএনপির এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া মুক্ত থাকা অবস্থায় তার চিকিৎসায় নিয়োজিত কয়েকজন ডাক্তার তাদের মতামত তুলে ধরেন।

এদের মধ্যে নিউরো মেডিসিনের অধ্যাপক ওয়াহিদুর রহমান বলেন, ‘তার (খালেদা জিয়া) কোমরের হাড়ও ক্ষয়ে যাচ্ছে। এতে তার প্যারালাইসিস (পক্ষাঘাত) হওয়ার আশঙ্কা করছি।’

চক্ষু বিশেষজ্ঞ আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘তার (খালেদা জিয়া) সুচিকিৎসা করানো না হলে চোখের কর্নিয়া নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তিনি অন্ধ হয়ে যেতে পারেন।’

অন্য একজন চিকিৎসক বলেন, ‘তার (খালেদা জিয়া) প্রস্রাব, পায়খানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’

এই শুনানির তিন দিন আগে ৫ মে খালেদা জিয়ার পাঁচজন আইনজীবী কারাগারে তার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাদেরকে তার অসুস্থতার বিষয়টি আদালতকে জানানোর নির্দেশ দেন।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে ২৮ এপ্রিল বিএনপির ব্রিফিংয়ে কথা বলেন তিন চিকিৎসক

কারাগার থেকে বের হয়ে এসে খালেদা জিয়ার আইনজীবী আবদুর রেজ্জাক খান সাংবাদিকদের বলেন, “ম্যাডাম বলেছেন, ‘আমি অত্যন্ত গুরুতর অসুস্থ- এটা কোর্টকে জানাবেন’।”

খালেদা জিয়াকে গত ১২ মার্চ হাইকোর্ট যেসব যুক্তিতে জামিন দিয়েছিল তার একটি ছিল শারীরিক অসুস্থতা।

তবে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, অসুস্থতা বিএনপি নেত্রীর জন্য নতুন কিছু নয়।

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের মতামতের বিষয়ে মাহবুবে আলম বলেন, ‘ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা আবার বাইরে এসে প্রেস কনফারেন্স করেছেন। যেটা উদ্দেশ্যমূলক করেছেন। জামিন পাওয়ার জন্য এটা করেছেন।’

‘আর উনার যে সমস্ত শারীরিক সমস্যা আছে এগুলো ৩০ বছর যাবত, ২০ বছর যাবত, ১০ বছর যাবত। এটা নতুন কিছু না।’

আদালতে শুনানি শেষে নিজ কার্যালয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদেরকে বলেন, ‘উনার চিকিৎসার ব্যাপারে যে কথাটা বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে আমি দেখিয়েছি, উনাদের নিয়োজিত চিকিৎসকই উনাকে শুধুমাত্র একটি নাপা খেতে বলেছেন। ব্যাথার ওষুধ।’

‘এও আমি বলেছি, উনার ইচ্ছামত উনাকে একজন সেবিকা (ফাতেমা) দেয়া হয়েছে। যেটা জেলকোডের বিধান নাই। আর উনার ইচ্ছামত উনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক উনাকে দেখেছেন।’

খালেদা জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তার দলের দাবি নিয়েও কথা বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল। বলেন, ‘উনার যদি এমআরআই দরকার হয় বা সিটি স্ক্যান দরকার হয়, উনি যেই হাসপতালে পছন্দ করবেন সেই হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু উনাকে বাইরে কোনো হাসপাতালে রাখা যাবে না উনার নিজের নিরাপত্তার জন্য।’

‘সর্বশেষ আমি বলেছি, রাষ্ট্র একটি মেডিকেল বোর্ডও করেছেন। মেডিকেল বোর্ড সেই রকম কোনো পরামর্শ দেয় নাই যে উনাকে বাইরের কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হবে।’

(ওএস/এসপি/মে ০৮, ২০১৮)