সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) : মাগো, এখানে আমি আর থাকতে পারছিনা। আমার আর একদম ভালো লাগছে না। যেভাবেই পারো আমাকে বাংলাদেশে তোমার কাছে নিয়ে যাও। এইরকম অনেক আকুতি জানিয়ে মুঠো ফোনে মা মদিনা বিবি ওরফে মদিনা আক্তার খাতুনের সঙ্গে কথা বলেছেন হাদিসা আক্তার খাতুন। তার বয়স অনুমান ২২ বছর।

৩ বছর আগে নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি আমতলা ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের বাবার বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয় হাদিসা আক্তার। তার বাবার নাম আব্দুল কাদির মা মদিনা বিবি ওরফে মদিনা আক্তার খাতুন। বাবা আব্দুল কাদির মারা গেছেন হাদিসা বাড়ি থেকে নিখোঁজের কিছুদিন আগেই।

হাদিসার মা মদিনা বিবি জানান, তিন ভাই চার বোনের মধ্যে হাদিসা আক্তার তৃতীয়। তিন বছর আগে যেদিন বাড়িতে তার বাবার চল্লিশার মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছিল সে দিনই হাদিসা নিখোঁজ হয় বাড়ি থেকে। এর পর অনেক খোঁজাখোঁজি করে ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত মদিনা বিবি। ওই নিখোঁজ মেয়ের জন্য কাঁদতে কাঁদতে এখন আর তার চোখে পানি নেই।

মেয়ের বাড়ি ফিরে আসা একরম ছেড়ে দেয়ার মতই। কিন্তু কিছুদিন আগে কেন্দুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ এর ব্যবহৃত সরকারি মুঠোফোন ০১৭৩৫৩৭৩৫১১ নম্বরে হাদিসা সম্পর্কে তার ঠিকানা দিয়ে একটি বার্তা আসে।

বার্তায় জানানো হয়, ভারতের পশ্চিম বঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার উর্মিতা (ঘরলড়ষড়ু ঐড়স ডরভ) অবস্থান করছে। এই বার্তার সূত্র ধরে কেন্দুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ রোয়াইলবাড়ি আমতলা ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো: ফারুক আহম্মদকে জানান। ইউপি সদস্য হাদিসা আক্তার খাতুনের নিখোঁজের ঘটনার সত্যতা পেয়ে যায় যায় দিন পত্রিকার স্থানীয় সংবাদদাতা রফিকুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে গত ৬ মে সকালে ছুটে যান নেত্রকোনা পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরীর কাছে।

মদিনা বিবি পুলিশ সুপারকে জানান, ৬/৭ দিন আগে +৯১৮২৫০৩৯৪৯৭৮ নম্বর থেকে তার মেয়ে হাদিসার সঙ্গে মুঠোফোনে তার কথা হয়েছে। হাদিসা দেশে ফিরে আসার জন্য ব্যকুল হয়ে উঠেছে। তিনি পুলিশ সুপারের কাছে তার মেয়েকে ফিরিয়ে আনার জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন। বিষয়টি অবগত হয়ে ওই দিনই পুলিশ সুপার কেন্দুয়া থানা ওসিকে সরেজমিন তদন্ত করে হাদিসা আক্তার নিখোঁজের ঘটনাটি সম্পর্কে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। এরই প্রেক্ষিতে কেন্দুয়া থানা পুলিশের এস.আই. তারেক মুহাম্মদ মাসুদ সরেজমিন তদন্তে যান।

তারেক মুহাম্মদ মাসুদ জানান, তিন বছর আগে হাদিসা আক্তার খাতুন তার বাবার বাড়ি হরিপুর গ্রাম থেকে নিখোঁজ হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদে সত্যতা মিলেছে। হাদিসা বর্তমানে ভারতে জলপাইগুড়ি জেলা থেকে মুঠোফোনে তার মা মদিনা আক্তারের সঙ্গে কথাও বলেছেন।

এ ব্যাপারে মদিনা বিবি ওরফে মদিনা আক্তার গত ৮ মে মঙ্গলবার কেন্দুয়া থানায় একটি সাধারন ডায়রী করেছেন। ডায়রী নং ২৯২। মদিনা বিবি জানান, আমি খুব গরিব মানুষ, আমার অন্যান্য ছেলে-মেয়েরা ঢাকায় অবস্থান করে। মেয়েরা গার্মেন্টসে চাকরি করে এবং ছেলেরা রিকসা চালায় তিনি তার মেয়ে হাদিসাকে ফিরে পেতে সরকারের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।

কেন্দুয়া থানা অফিসার ইনচার্জ ইমারত হোসেন গাজী বলেন, পুলিশ সুপার মহোদয়ের মাধ্যমে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আশাকরি এই প্রক্রিতেই হাদিসা ভারতের জলপাইগুড়ি থেকে জন্মভূমি বাংলাদেশে মায়ের কোলে ফিরে আসতে পারবেন। বুধবার সন্ধ্যা ৭ টার দিকে মুঠোফোনে পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরীর সঙ্গে হাদিসার দেশে ফিরে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমরা হাদিসার সব তথ্য পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠিয়েছি, সেখান থেকেই সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।


(এসবি/এসপি/মে ০৯, ২০১৮)