সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) : মাছুয়াইল বিলের পাকা বোরো ফসল তলিয়ে গিয়ে তিনটি ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের ১ হাজারেরও বেশি কৃষক পরিবারের সর্বনাশ করেছে রঙ্গিখালি খাল। মাত্র দেড় কিলোমিটার রঙ্গিখালি এই খালটি দীর্ঘদিন ধরে পলি জমে গিয়ে বিলের নিচু জমি থেকে উচু হয়ে যায়। বিলটি খনন না করার কারণে বৃষ্টির পানি বেতাই নদীতে নিষ্কাশন হতে পারে না। এর ফলে বিলের পানি উপচে গিয়ে পাকা বোরো ফসলের পুরো মাঠ তলিয়ে যায় প্রতি বছর। এর ফলে ১০টি গ্রামের ১ হাজরেরও বেশি কৃশক পরিবারের মাথায় হাত পরে। এবারও ওই বিলের প্রায় ৫ শতাধিক একর পাকা বোরো জমির ফসল চোখের পলকেই তলিয়ে গিয়ে ১০ গ্রামের কৃষকের বিপুল পরিমান ক্ষতি হয়েছে।

কেন্দুয়া উপজেলার সদর থেকে দক্ষিণ পশ্চিম সিমান্তে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে মাছুয়ালই বিলের অবস্থান। বিলের বেশির ভাগ জমির অংশ পড়েছে কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি আমতলা ও সান্দিকোনা ইউনিয়নের সিমানায়। বাকি অংশ পড়েছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারোবাড়ি ইউনিয়নের সীমানায়।

রোয়াইলবাড়ি আমতলা ইউনিয়নের কৈলাটি,ফতেপুর, দ্বিগর, এবং সান্দিকোনা ইউনিয়নের মুকন্দবাদ, হারারকান্দি, বিরামপুর আঠারবাড়ি ইউনিয়নের শ্রীদেবপুর, রায়পুর, বাগরা, সহ আশেপাশের আরো কয়েকটি গ্রামের এক হাজারেরও বেশি কৃষক পরিবারের বোরো জমি এই মাছুয়াইল বিলে। আর প্রতিবছর এই বিলটির সর্বনাশ ডেকে আনে রঙ্গিখালি খাল। মাত্র দেড় কিলোমিটার খাল খনন করলেই শত শত কৃষক পরিবারের মুখে ফুটবে হাসি। কিন্তু এই খালকে খনন না করায় মাছুয়াইল বিলের পাকা বোরো ফসলের মাঠ এবার চোখের পলকেই তলিয়ে গেছে। অনেক কৃষক জীবন বাচাতে কোমর পানি ও পেট পানিতে নেমে পানির নিচ থেকে পাকা ধান কেটে ডিঙ্গি নৌকায় তুলছেন। তবে বেশিরভাগ কৃষক তলিয়ে যাওয়া ফসলের মাঠ শুধু তাকিয়েই দেখছেন। কাটতে পারেননি।

কৃষক আব্দুল হান্নান জানান তার ২৫০ শতাংশ জমি স্থানীয় ভাষায় ২৫ কাটা জমিতে গাজী, হাইব্রিড ও দেশীয় জাতের ধানের চারা রোপন করে ছিলেন। ফলনও হয়েছিল বাম্পার। তবে পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মাত্র দুই তিন কাটা জমি তিনি কাটতে পেরেছেন। তিনি বলেন ১০টি গ্রামের অনেক কৃষকের পাঁকা ধান পানির নিচে। তারা জমি থেকে এক মুঠো বীজ ধানও আনতে পারেননি।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, কৃষকের এত বড় সর্বনাশ হলেও কৃষি বিভাগের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা আমাদের কি পরিমান ফসলের ক্ষতি হয়েছে এর কোন তথ্য নিতেও আসেননি।

রোয়াইলবাড়ি আমতলা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের মেম্বার সুরুজ আলী ২ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আবেদ আলী এবং ৩ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মাছুয়াইল বিল পারের বিরামপুর গ্রামের বাসিন্দা মনির খান বলেন, আমাদের কয়েকটি গ্রামের কৃষকের সর্বনাশ রঙ্গিখালি খাল। এই খালটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি জমে গিয়ে মাছুয়াইল বিলের পাকা অধিকাংশ বোরো ধান তলিয়ে গেছে। কিন্তু প্রশাসন বা কৃষি বিভাগের কেউ ক্ষতির পরিমান দেখতে পর্যন্ত আসেনি।

মাছুয়াইল বিলে ফসলের ক্ষতির ব্যপারে জানতে চাইলে ওই এলাকায় কর্মরত উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা শামসুল আলম বলেন, বিলের জমি তলিয়ে গিয়ে তেমন বেশি ক্ষতি হয়নি। এ রিপোর্টটিই তিনি কৃষি কর্মকর্তাকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন।

রোয়াইলবাড়ি আমতলা ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান এস.এম. ইকবাল রুমি সান্দিকোনা, ইউনিয়ন পরিষদের ৫ বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল ইসলাম ও আঠারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান মো: আলমগীর বলেন, মাছুয়াইল বিলের জমি অধিকাংশ জমি রোয়াইলবাড়ি সান্দিকোনা ইউনিয়নের সিমানায় আছে। তবে আঠারোবাড়ি ইউনিয়নের শ্রীদেবপুর, রায়পুর ও বাগরা সহ আশে পাশের আরো কয়েকটি গ্রামের কৃষকের ৫ শতাধিক একর বোরো জমি রয়েছে। এই মাছুয়াইল বিলের সর্বনাশ ডেকে আনে রঙ্গিখালি খাল। মাত্র দেড় কিলোমিটার খালটি খনন করলেই ১ হাজারেরও বেশি কৃষক পরিবারের মুখে হাসি ফুটবে। ফসল কেটে তারা ঘরে তুলতে পারবেন। চেয়ারম্যান আলমগীর এই খালটি খনন করে কৃষকদের বাঁচানোর জন্য সরকারের নিকট অনুরোধ জানান।

সান্দিকোনা ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল ইসলাম ক্ষোভে দুঃখে শুক্রবার বলেন, আমি ৫ বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। বরাবরই এই রঙ্গিখালি খালটি খনন করার জন্য আবেদন নিবেদন করেছি। কিন্তু কোন ফল হয় নি।

তিনি বলেন, এই খালটি খনন করলেই বিলের পানি বেতাই নদীতে গিয়ে পড়বে। কৃষকরা মনের সুখে বোরো ধান কেটে ঘরে তুলতে পারবেন। তাদের আর কোন কষ্ট থাকবে না। এবারও তিনি খালটি খনন করার জন্য প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

রোয়াইলবাড়ি আমতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস.এম ইকবাল রুমি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষমতা থাকলে আমরা নিজেরাই এই খালটি খনন করার ব্যবস্থা করতাম কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদের এমন কোন নিজস্ব অর্থ নেই, যা দিয়ে খালটি খনন করা যায়। তিনি কৃষি বিভাগের মাধ্যমে এই খালটি খনন সহ ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা তৈরি করে সরকারের নিক তুলে ধরার দাবী জানান।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা চন্দন কুমার মহাপাত্র বলেন, এই ব্লকে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামসুল আলম যেরকম ক্ষতির তথ্য দিয়েছেন সে রকম তথ্যই আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, এই বিলের ফসল বাচাতে রঙ্গিখালি খালটি খননের যে দাবী উঠেছে লিখিত আকারে পেলে তা তিনি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন বলে জানান।

(এসবি/এসপি/মে ১১, ২০১৮)