সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া  (নেত্রকোণা) : জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ঝড়ে ভেঙ্গে পড়া একটি গাছের ডাল কাটাকে কেন্দ্র করে চার মাসের অন্তস্বত্তা এক নারীকে সন্ত্রাসী কায়দায় বেদড়ক মারপিট করেছে প্রতিপক্ষের প্রভাবশালী লোকেরা। 

আহত অবস্থায় ওই নারীকে প্রথমে কেন্দুয়া উপজেলা হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার অবস্থা আশংকাজনক দেখে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার সন্ধার আগে নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার ৬ নং সান্দিকোনা ইউনিয়নের বিরামপুর গ্রামে।

বিরামপুর গ্রামের মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে হাসেন আলী (হাছু মিয়া) ও আব্দুল কদ্দুছের নিকট থেকে ৬২ শতাংশ পুকুরের মধ্য থেকে পুকুর পাড়ের ৫ শতাংশ ভূমি কিনে নেন প্রতিবেশী গোলাম বক্সের ছেলে মিলন গংরা।

হাছেন আলী ও তার স্ত্রী সাহেদা আক্তার জানান মিলন, সালাম ও খালেকরা অত্যন্ত প্রভাবশালী। তারা পুকুর পাড়ের ৫ শতাংশ ভূমি কিনে নিলেও লাঠির জোরে পুরো ৬২ শতাংশ ভূমিই তাদের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে বলে প্রচার দিয়ে দখলে নিতে বারবার আমাদের ওপর হামলা করছে।

সাহিদা জানান, তার চার মাসের অন্তস্বত্তা শিউলিকে বেদড়ক মারপিট করেছে।

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে হাসেন আলীর কন্যা চার মাসের অন্তস্বত্তা আহত শিউলি জানান, শুক্রবার অনুমান সাড়ে ৫ টার দিকে পুকুরের এক পাশে ঝড়ে ভেঙ্গে পড়া একটি কড়ই গাছের ডাল কেটে বাড়িতে আনতে যান। এ সময় মিলন, সালাম খালেকসহ অন্যান্যরা ধারালো অস্ত্র ও লাঠি সোটা নিয়ে অতর্কিতে তার ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালায়। তার আর্তচিকিৎকারে আশে পাশের লোকজন এসে ঘটনা স্থল থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

শিউলি আরও বলেন, আমরা গরীব মানুষ আমাদেরকে বসত বাড়ী থেকে উচ্ছেদের জন্য বারবার আমাদের ওপর হামলা করছে। এর আগেও মিলনরা তাকে মরাপিট করেছে বলে জানান তিনি।

সান্দিকোনা ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মনির খান বলেন, ঘটনাটি খুবই অমানবিক। তিনি শিউলিকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন।

ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি ও কমিউনিটি পুলিশের সদস্য মতিউর রহমান বলেন, একজন অন্তস্বত্তা নারীর উপর এ রকম অমানবিক, মারপিটের ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। তিনি অন্তস্বত্তা ওই নারীকে বেদড়ক মারটিপের ঘটনার নিন্দা জানান।

হাছেন আলীর স্ত্রী শাহেদা আক্তার জানান, গত কিছু দিন আগে মিলন, খালেক, সালাম গংরা তাদের পুকুর থেকে জোর করে মাছ ধরে নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় তিনি থানা পুলিশের কাছে লিখিত দেওয়ায় তারা আরও ক্ষিপ্ত হয়েছে। শাহিদা জানান আমাদেরকে বসত বাড়ী থেকে উচ্ছেদ করতেই একের পর এক হামলা করছে তারা। শুক্রবার সন্ধ্যার আগে তার মেয়েকে মারপিটের পর হামলাকারীরা তাদের বসত বাড়ীতে ভাংচুর করতে এসেছিল। কিন্তু গ্রামের লোকজন তাদেরকে বাধা দেয়ার পরও তারা দুটি ল্যাট্রিন ভেঙ্গে ফেলেছে। তিনি তার মেয়ের উপর সন্ত্রাসী হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেন।

কেন্দুয়া থানা পুলিশের এসআই আবুল বাশার জানান, কিছু দিন আগে শাহিদা মাছ ধরে নেয়ার বিষয়ে মিলনদের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। অভিযোগটি তদন্তকালে তিনি প্রশিক্ষণে চলে যান।

কেন্দুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ ইমরাত হোসেন গাজী শনিবার দুপুরে বলেন, নারীর উপর হামলার ঘটনার খবর শুনে আহত নারীকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিল পুলিশের সদস্যরা। এ ঘটনায় তিনি কোন লিখিত অভিযোগ পান নি, অভিযোগ পেলেই সঙ্গে সঙ্গে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানান তিনি।

(এসবি/এসপি/মে ১২, ২০১৮)