স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীতে রেল ওভারপাস নির্মাণের জন্য ক্রমাগত যানজটের ভোগান্তির পরিপ্রেক্ষিতে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আগামী ২৫ দিনের মধ্যে ওভারপাসের নির্মাণ কাজ শেষ হবে।

রবিবার সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী এ কথা জানান।

এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলমান যানজট নিরসনের দাবিতে সোমবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাস না চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর ফতেহপুর এলাকায় রেল ওভারপাস নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। সেখানে জনদুর্ভোগ হচ্ছে। দীর্ঘ যানজট হচ্ছে। প্রতিদিন মিডিয়ায় খবর আসছে।’

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তিনটি রেল ওভারপাস হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তিনটির মধ্যে কুমিল্লারটি কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেছেন। আরেকটি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এলাকায় সেটা কোনো সমস্যার কারণ হচ্ছে না। সেটার কাজও শেষ হওয়ার পথে। আরেকটি হচ্ছে ফেনীতে, ফেনীর রেল ওভারপাসটি একেবারেই প্রথম অবস্থায় কাজ স্লো হওয়ায় পিবিএল থেকে নিয়ে আমরা সেনাবাহিনীতে কাজটি দিয়েছি।’

‘কারণ এই গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে আমরা যদি আবার টেন্ডার করতে যাই তাহলে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ব্যাপার। সেজন্য ডিপোজিট ওয়ার্ক হিসেবে, ডেলিগেটেড ওয়ার্ক হিসেবে সেনাবাহিনীকে দিয়েছি। সবগুলোর কাজও মোটামুটি শেষ হয়েছে।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা প্রবলেমে পড়ে গেছি ফেনী ওভারপাস নিয়ে, যেখানে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। আমি আপনাদের জানাচ্ছি, সেনাপ্রধান নিজেই বিষয়টি তদারকি করছেন। এই রেল ওভারপাসের দুটি লেন রয়েছে, একটি পার্ট ১৫ মে উদ্বোধন হবে। এতে যানজট ও ভোগান্তি রিডিউসড হয়ে যাবে। ঈদের আগে তারা সম্পূর্ণ কাজটি সমাপ্ত করবে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘সেনাবাহিনী আমাদের কথা দিয়েছে এই ঈদের আগে রোজার মধ্যে ওভারপাস নির্মাণ কাজ কমপ্লিট হয়ে যাবে। আগামী ২৪/২৫ দিনের মধ্যে তারা পুরো কাজটি শেষ করবেন।’

‘এখন যানজটের কারণে আমাদের পণ্য পরিবহন বিঘ্নিত হচ্ছে। বিকল্প কোনো বাইপাস করারও সুযোগ সেখানে নেই। সেই কারণে আমরা সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখিত’ বলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমি আশা করি এখানে (ফেনীতে ওভারপাস নির্মাণস্থলে) ঈদের সময় ভোগান্তি আর থাকবে না। আর কয়েকটি দিন ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার অনুরোধ করছি।’

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চারলেন হলেও এই মহাসড়কের কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতী সেতু দুই লেনের জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘নির্মাণাধীন দ্বিতীয় কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতী সেতুর কাজ বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে জাপানিরা। এখানে ভালো খবর হচ্ছে, এই তিনটি ব্রিজের নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময়ের ছয় মাস আগেই আগামী ডিসেম্বরে শেষ হচ্ছে। এবং এই তিনটি ব্রিজ নির্মাণের প্রাক্কলিত ব্যয় সাড়ে ৭০০ কোটি টাকা কমে যাবে। এই তিনটি সেতুর প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল পাঁচ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা।’

পদ্মা সেতুর পঞ্চম স্প্যান বসবে জুনে
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতুতে এখন পিয়ারের উপর স্প্যান বসানোরে কাজ চলছে। রবিবার সকাল ৮টায় ৪০ ও ৪১ পিয়ারের উপর চতুর্থ স্প্যান বসেছে। সাকসেসফুলি ইন্সটলড হয়েছে। প্রায় ২০/২১ দিন চেষ্টার পর আজ সকালে সফল হয়েছেন সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়াররা। আবহাওয়ার কারণে বারবার চেষ্টা করে পারা যাচ্ছিল না।’

তিনি বলেন, ‘আগামী জুন মাসে পঞ্চম স্প্যান বসবে। জাজিরার শেষ প্রান্তে পিয়ারের উপর এই স্প্যানটি বসবে।’

রাজধানীতে পরিবহন ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি আছে
রাজধানীর যানজট ক্রমেই অসহনীয় হয়ে উঠছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার একটা চেষ্টা আছে। আমরা প্রতিনিয়ত স্টেক হোল্ডারদের ডাকছি। তাদের সঙ্গে কথা বলছি, চেষ্টার কোনো কমতি নেই।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকায় বিভিন্ন সংস্থা জড়িত। পরিবহন ছাড়া ব্যবস্থাপনায় সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কোনো এখতিয়ার নেই। পরিবহন যে রাস্তায় চলে সেটা হচ্ছে সিটি কর্পোরেশনের অথবা গণপূর্তের। পরিবহনের ব্যবস্থাপনায় একটা গ্যাপ আছে, পরিবহনের ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে হচ্ছে এটা আমি দাবি করি না, এতে অনেক ঘাটতি আছে। এখানে পুলিশের একটা বড় ভূমিকা আছে। সবকিছু সমন্বয় করা একটা চেষ্টা আমরা দীর্ঘদিন করে যাচ্ছি।’

‘যারা যার দায়িত্ব নিয়ে মানুষের ভোগান্তি লাঘবে যেটুকু উদ্যোগ প্রয়োজন সেটার একটা ঘাটতি আছে।’

উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক মারা যাওয়ার পর সেখানকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের গতি ধীর হয়ে গেছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি একটা সত্য কথা বলি- আগামী জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত এসব সমস্যা খুব একটা গতি পাবে বলে আমি মনে করি না। যতটা সম্ভব এগুলোকে একটা টলারেবল লেভেলে রাখার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

নির্বাচনকালীন সরকার ছোট হবে
নির্বাচনকালীন সরকার কত সদস্য বিশিষ্ট হবে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকার কত সদস্যের হবে সেটা প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। তবে সাইজটা ছোট হবে। এত বড় ক্যাবিনেট থাকবে না।’

খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সরকার ফলাফল নিজেদের পক্ষে নেয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ইলেকশনের রেজাল্ট বিএনপির অনুকূলে না আসা পর্যন্ত তাদের নালিশনামা অব্যাহত থাকবে। এটা তাদের পুরনো অভ্যাস। এটা ভাঙা রেকর্ডের মতো তারা বাজাবেই। নয়াপল্টনের অফিসে তো একজন বসেই থাকে এগুলো বলার জন্য। যদি ক্ষমতায় যায় হিটলারের গোয়েবলকেও সে হার মানাবে।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের আরও বলেন, ‘ফখরুল ইসলাম সাহেব বলেন লেভেন প্লেইং ফিল্ড। আওয়ামী লীগের জেনারেল সেক্রেটারি যেতে পারছে না, আপনি ওখানে (খুলনায়) দিব্যি ক্যাম্পেইন করছেন। আর কী সুবিধা চান?’

(ওএস/এএস/মে ১৩, ২০১৮)