স্টাফ রিপোর্টার : দুই বাসের রেষারেষিতে হাত হারানোর পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া রাজীবের দুই ভাইকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে বিআরটিসির আবেদনের ওপর আজও শুনানি হয়েছে। এ বিষয়ে আগামীকাল  আদেশ দেবেন আপিল বিভাগ।

সোমবার সকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হাসানের নেতৃত্বধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে বিআরটিসির পক্ষে ছিলেন এ বি এম বায়েজিদ, স্বজন পরিবহনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আবদুল মতিন খসরু। রাজীবের পরিবারের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।

শুনানিতে বিআরটিসির পক্ষের আইনজীবী এ বি এম বায়েজিদ বলেন, ‘মাই লর্ড, আমরা তো ওই দিন অপরাধ করিনি। স্বজন পরিবহন বাম দিক থেকে ধাক্কা দিয়েছিল।’

এ সময় স্বজন পরিবহনের পক্ষে আইনজীবী আব্দুল মতিন খসরু বলেন, ‘মাই লর্ড, আমরা বলছি ওই ঘটনাটা হৃদয় বিদারক। কিন্তু আমরা আপাতত পাঁচ লাখ টাকা জমা দিতে চাই।’

এ সময় আদালতে রাজীবের ক্ষতিপূরণের পক্ষে থাকা আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘মাই লর্ড, হাইকোর্ট বিভাগ রুলে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের কথা বলেছেন। টাকা জমা রাখার জন্য এরই মধ্যে একটা যৌথ অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে।’

এরপর আদালত বলেন, ‘কারো ওপর অবিচার হোক আমরা তা চাই না। হাইকোর্টের আদেশটা সংশোধন করতে হবে। আর ক্ষতিপূরণের টাকা যে রাজীবের দুই ভাই পাবে সেটা নিশ্চিত করাটা খুব কঠিন।’

এর আগে গত ১৭ মে আপিল বিভাগে এ বিষয়ে শুনানি হয়। ওই দিন আদালতে বিআরটিসির পক্ষের আইনজীবী এ বি এম বায়েজিদ বলেছিলেন, তারা ওই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী না। স্বজন পরিবহনের গাড়িটি ওই দিন বাম দিক থেকে ওভারটেক করে এসে বিআরটিসির গাড়িসহ রাজীবকে ধাক্কা দেয়। বিআরটিসি দায়ী না হলে ক্ষতিপূরণের টাকা কেন দেবে বলে প্রশ্ন রাখেন তিনি।

গত ৮ মে রাজীবের দুই ভাইকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের মালিককে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই আদেশটি দিয়েছিলেন। এরপর এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি)।

গত ৩ এপ্রিল দুই বাস চালকের বেপরোয়া গাড়ি চালানো শিকার হন রাজীব। দুই বাসের চাপে হাত কাটা পড়ে রাজীবের। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর ৪ এপ্রিল রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।

হাইকোর্ট অন্তবর্তীকালীন নির্দেশনার পাশাপাশি রুল জারি করেন। রাজীবের চিকিৎসার খরচ স্বজন পরিবহন মালিক এবং বিআরটিসিকে বহনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে এক কোটি টাকা দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, সাধারণ যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিদ্যমান আইন কঠোরভাবে কার্যকর করতে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না এবং প্রয়োজনে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আইন সংশোধন বা নতুন করে বিধিমালা প্রণয়নের কেন নির্দেশ দেওয়া হবেনা তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়। রাজীব ১৬ এপ্রিল সোমবার দিবাগত রাত ১২টা ৪০ মিনিটে মারা যান। এরপর ৬ মে এ তথ্য আদালতকে অবহিত করেন আইনজীবী।

(ওএস/এএস/মে ২১, ২০১৮)