প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) : ‘কত চেয়ারম্যান এ্যালো গ্যালো, মোর প্রানের পতির একনা কার্ড কায়ো জোগাড় করি দ্যাইল না। কত মানষের কার্ড হয়, হামার বোলে কারো হয় না।’ কথাগুলো বলছিলেন, রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের ছত্রজিৎ মৌজার মুড়িয়াপাটকি পাড়া এলাকার বাসিন্দা  বয় বৃদ্ধ বাক প্রতিবন্ধী দেবেন্দ্র নাথ রায়ের স্ত্রী কৌশল্যা রাণী (৬৫)। 

তিনি আরো বলেন, ভিক্ষা করার মন চায় না বাহে, তবু না করি আর কি করমো। এসময় তার পাশে দাঁড়িয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে শুনে তার স্বামী দেবেন্দ্র নাথ রায়(৭১) চোখের জল মুছছিলেন। সে এ সময় এক হাতে লাঠি, কাঁধে ভিক্ষার ঝুঁলি, আর চোখে-মুখে হতাশার ছাপ, সামনে শুধুই অন্ধকার দেখছেন। ১ ছেলে ও ১ কন্যা থাকলেও অভাবের তাড়নায় বিয়ের পর তারা তাদের বৃদ্ধ বাবা-মাকে রেখে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে স্বামী-স্ত্রীর দু’জনের সংসার।

পৈত্রিক সূত্রে একচিলতে ভিটে-মাটি থাকলেও অভাবের তাড়নায় পূর্বেই বিক্রি করে দেয়। ভিটে-মাটি বলতে আর কিছুই নেই তাদের। বসবাস সরকারি রাস্তার ধারে একটি ঝুঁপড়ি ঘরে। একটু বৃষ্টি হলেই ঘরে ঝর ঝর করে পানি পড়ে। দু’জন মিলে প্রতিদিন কাকডাকা ভোর হতেই ভিক্ষার ঝুঁলি কাঁধে নিয়ে মানুষের দারে দারে উপস্থিত হয়ে ইশরায় ভিক্ষা চান তিনি। ৪ বছর পূর্বে বাকশক্তি হারিয়েছেন তিনি। ইশারা-ইঙ্গিতে চলছে দেবেন্দ্র নাথের চলাফেরা।

স্ত্রী কৌশল্যা রাণী (৬৫) বলেন, চেয়ারম্যান-মেম্বার হামাক চোখ তুলেও দেখ্যান না, পতি ক্যা নিয়া বড় কষ্টে দিন পার করছং। কারণ জানতে চাইলে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, চেয়ারম্যানোক চেনং না, নেম্বরক চেনং। ভোটের পর এই এলাকার নেম্বর জিতেন্দ্রনক বয়স্ক ভাতা কার্টের জন্য মোর ভাগ্নে ভ্যালং মারফত ৩হাজার টাকা জোগাড় করে দিছং। ৬ মাস পর নেম্বর ২৫’শ টাকা ফিরি দিছে। কইছে তোমার বয়স্ক ভাতা হবার নয়। পাশাপাশি এখন পর্যন্ত ওই পরিবারটির ভাগ্যে জুটেনি সরকারি কোন ধরনের সাহায্য সহযোগিতা বলে জানান কৌশল্যা রাণী।

এ ব্যাপারে ওই ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জিতেন্দ্র নাথ রায় টাকা গ্রহণ করার কথা অস্বীকার করে জানান, দেবেন্দ্র নাথের ভাগ্নে ভ্যালংকে বলেছি, বয়স্ক ভাতা হবে না, দেখি আগামীতে প্রতিবন্ধী ভাতা করে দিবো।

ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান হক বুলু বলেন, তার সম্পর্কে ইতিপূর্বে কেউ আমাকে জানায়নি। এখন বিষয়টি জানা থাকলো, পরবর্তীতে আমি দেখবো।

২১ মে সোমবার এ ব্যাপারে রাজারহাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আবুল হাসেম জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান বা ইউপি সদস্যরা তার বয়স্ক বা প্রতিবন্ধী কার্ড করে দিতে পারতো। এখন বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ব্যবস্থা নিব।

(পিএমএস/এসপি/মে ২১, ২০১৮)