এম কফিল উদ্দিন বাহাদুর


কক্সবাজার সী-বীচের পাশে রাত ১টার দিকে এক ভদ্রলোক বাইক থেকে নামল। অকথ্য ভাষায় পথচারীদের গালি গালাজ শুরু করল। মনে করলাম কোন প্রভাবশালী লোক হবে। তাই যা ইচ্ছে করতেছে যে কোন কারণে। এক ব্যক্তির কাছে জানতে চাইলাম কারণ কি ? সে জানালো স্থানীয় প্রভাবশালী লোক। নেশা করে অাসছে। নেশার ঘোরে এমন করতেছে। এরকম চিত্র দেশের প্রায় স্থানে দেখা যায়। তখন সাধারণ জনগণ তা সহ্য করতে না পারলেও নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। 

অামার এলাকার শাহেদ নামের এক লোক মাদক ব্যবসায়ী। ইয়াবা ট্যাবলেট বিক্রি করে। অনেকবার জেল খেটেছে। অাইনের ফাঁক দিয়ে বের হয়ে অাবারো একই ব্যবসায় জড়িত হয়ে যায়। ইয়াবা শাহেদ নামে চিনেও তাকে সবাই। এতে সে মোটেও লজ্জিত নয়! সে মানসিকভাবে তৈরী করে নিয়েছে নিজেকে ইয়াবা ব্যবসায়। এলাকায় তার কিছু বাস্তব ঘটনা নিয়ে এলাকাবাসীরা রসালো গল্পও করে।

একদিন কোন না কোন কারণে বেশ কিছু ইয়াবা ট্যাবলেট ভিজে গেছে। ভিজে যাওয়ায় বাড়ির এক কোনায় শুকাতে দিল। তার স্ত্রী কবুতর পালত। কবুতরগুলো ট্যাবলেট খেয়ে ফেলে। এতে তার অনেক কবুতর মারা যায়। অারেকবার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে অাসল। তার স্ত্রীর ধস্তাধস্তিতে ঐ ব্যবসায়ী পালানোর সুযোগ পেয়েছিল। এরকম অহরহ ঘটনা ঘটে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে।

অারেকজন ব্যবসায়ীর নাম কুলসুমা। মহিলাটি অামার জানা মতে অনেকবার গাঁজাসহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। যতবার জেলে যায় ততবার মাস দুয়েক পরে জামিনে বের হয়ে এই ব্যবসা চালিয়ে যায়। একজন মহিলা হয়ে বারবার জেলে যাওয়ার পরেও একই ব্যবসা করার কারণটা হল সে এটাকে স্বাভাবিক ব্যবসা হিসেবে নিয়েছে।

সাংবাদিকদের লেখনীর মাধ্যমে উঠে অাসে কিছু পুলিশেরও সহযোগিতার কথা। যা খুবই দু:খজনক। একটি মাসহারা পায় তারা। এতে অারো বেপরোয়া হয় ব্যবসায়ীরা। হাতেগোনা কিছু মানুষের জন্য সমাজ দিন দিন ধ্বংসের পথে যাচ্ছে। যা চাইলে সবাই মিলে প্রতিরোধ করা যায়।

গত কয়েকদিন মাদক ব্যবসায়ীরা বন্দুকযুদ্ধে মারা যাচ্ছে। অবশ্যই বিচার পাওয়ার অধিকার সবারই আছে। বিচার বহির্ভূত এই বন্দুকযুদ্ধ উচিৎ নয়। তবে বৃহৎ স্বার্থে অনেক কিছু হতে হয়। তাই বলছি এই যুদ্ধ জাতির স্বার্থে অব্যাহত থাকুক। উদাহরণ হোক- বাংলাদেশ মাদক নির্মূলে শক্ত হাতে এ্যাকশন নিতে পারে।

তবে এভাবে কি অাসলেই মাদক নির্মূল হবে? প্রশ্নটা রয়েই যায়। কারণ মাদক ব্যবসায় অনেক শক্তিশালী সিন্ডিকেট অাছে। এতে অাছে রাজনীতিক ব্যক্তিরাও। ছোটখাট ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি শক্তিশালী ব্যবসায়ীদেরও খতম করতে হবে। উপরে উল্ল্যেখ করা ব্যবসায়ী দুইজন অবশ্যই খুচরা ব্যবসায়ী। অহরহ খুচরা ব্যবসায়ী গ্রামেগঞ্জে, শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অাছে।

যারা পাইকারী ব্যবসা করে, যারা বার্মা থেকে মাদক সাপ্লাই করে, যারা কোটি কোটি টাকার মাদকের চালান দেয় তাদেরও খতম করা হোক। যুদ্ধটা সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হোক। প্রশাসনে যারা মাদক ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করতেছে তাদের বিরুদ্ধেও এ্যাকশন নেয়া হোক।

অনেক সময় নিজেরাই নষ্ট করেছি। সমাজ মাদকের অাঘাতে জর্জরিত। অার সময় নষ্ট নয়। যুদ্ধটা নিজেদের স্বার্থে অব্যাহত থাকুক সারাদেশে।

লেখক : সভাপতি, পেকুয়া উপজেলা ছাত্রলীগ, কক্সবাজার।