রূপক মুখার্জি, লোহাগড়া (নড়াইল) : আগামীকাল বুধবার  ২৩ মে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ইতনা গণহত্যা দিবস। এ দিন পাক-সেনারা নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ৩৯ জন গ্রামবাসীকে নির্মমভাবে হত্যা করে। গণহত্যার শিকার ৩৯টি পরিবার আজও শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি পায় নাই।

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, ২২ মে ইতনা গ্রামের ঠিক বিপরীতে মধুমতি নদীর ওপারে চর ভাটপাড়া গ্রামে পাক-সেনারা চালায় গণহত্যা ও অগ্নিসংযোগ । চর-ভাটপাড়া গ্রামের কৃষক অনিল কাপালী পাক-সেনাদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে খালি হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে এক পাক-সেনার কাছ থেকে রাইফেল ছিনিয়ে নিয়ে মধুমতি নদীতে ঝাঁপ দিয়ে এপারের ইতনা গ্রামে চলে আসে।

পরের দিন ২৩ মে ভোর বেলা পাক-সেনারা অনিল কাপালীকে ধরার জন্য চর-ভাটপাড়া গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালায় এবং ঘরবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আত্ম রক্ষার জন্য চর-ভাটপাড়া গ্রামবাসীরা বলে অনিল কাপালীর বাড়ি ইতনায়।

এ সময় পাক-সেনারা ইতনায় গণহত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। পাক-সেনারা ২৩ মে কাক ডাকা ভোরে ৫টি নৌ-বহর নিয়ে পুরো ইতনা গ্রাম ঘিরে ফেলে। তারা ৫ ভাগে বিভক্ত হয়ে ঢুকে পড়ে গ্রামের ভেতর। এ সময় গ্রামবাসীদের কেউ কেউ ফজরের নামাজ পড়ার জন্য ঘুম থেকে উঠেছে। পাক-সেনারা প্রথমেই হেমায়েত মিনাকে গুলি করে, তখন সে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বীর দর্পে “জয় বাংলা” বলে চিৎকার দিয়ে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়ে। যতক্ষন সে জয়বাংলা বলেছে, ততবারই পাক-সেনারা তাকে গুলি করেছে।

এরপর পাক-সেনারা গুলি চালিয়ে হাফিজুর রহমান হিরু মাষ্টার, হাবিবর রহমান শিকদার, ওলিয়ার শিকদার, হাদিয়ার শিকদার, আতিয়ার শিকদার, হেমায়েতুল ইসলাম, দারু মিনা, হেমায়েত মিনা, সৈয়দ শওকত আলী, ইসমত আলী, রাশেদ গাজী, বাদল শেখসহ ৩৯ জন পুরুষ-মহিলা ও শিশুকে গুলি করে হত্যা করে। গুলিবিদ্ধ হয়ে বেঁচে যান বজলার রহমান, জলিল, হারুন শেখ সহ অনেকে। ইতনা হয়ে পড়ে ভুতুড়ে গ্রাম। চার দিকে লাশ আর লাশ। লাশ দাফন করার মত কোন মানুষই ছিল না ইতনা গ্রামে।

এমতাবস্থায় গ্রামবাসীরা ধর্মীয় সকল নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে কোন মতে শহীদদের দাফন করে গ্রাম ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। ২৩ মে উপলক্ষে শহীদদের স্মরনে ইতনা চৌরাস্তায় ও ইতনা গণ-গ্রন্থাগারে আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

(আরএম/এসপি/মে ২২, ২০১৮)