স্বাস্থ্য ডেস্ক : পবিত্র মাহে রমজান। মহান আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার মাস। এ মাসে মানুষ নিজের গুনাহ হতে ক্ষমা প্রার্থনার বিশেষ সুযোগ পান এবং আল্লাহর প্রকৃত বান্দা এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পূর্বেকার সকল পাপ ও পঙ্কিলতা হতে মুক্ত হয়ে সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার দিকে ধাবিত হয়। ফলে এই মাসে সকলেই নামাজের প্রতি তুলনামূলকভাবে বেশি বেশি গুরুত্ব দেন। যেহেতু রমজানে তারাবি নামাজ দীর্ঘসময় ধরে পড়া হয় সেজন্য আমাদের কোমরের মাংসপেশি ও মেরুদণ্ডের ওপরে অতিরিক্ত চাপ পড়ে।

ফলে কোমর ব্যথা হতেই পারে। তাছাড়া রমজানে আমরা পানি পান কম করে থাকি, ফলে মাংসপেশিতে পানি স্বল্পতা দেখা দেয়, যা কোমর ব্যথা তৈরি করে বা বাড়িয়ে দেয়। রমজানে সারাদিন সংযম এর পাশাপাশি যেকোনও অসুস্থতাই আমাদের জীবনকে অনেক কষ্টদায়ক করে তুলতে পারে। তবে সেই কষ্ট যদি হয় ব্যথাজনিত অসুস্থতা। সেজন্য রহমত, বরকত ও নাজাতের দিনগুলো অসহনীয় হতে পারে নিমিষেই।

রমজানে কোমর ব্যথা হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে অসঠিক ভঙ্গি, হঠাৎ করে বেশি সময় নামাজ আদায় করা, দাঁড়িয়ে থাকা, দিনের বেলায় কম পানি পান করা। অন্যদিকে রোজা রাখার জন্য ১৬-১৭ ঘণ্টা না খেয়ে থাকতে হয়, সে কারণে আমাদের শরীরের অধিকাংশ চর্বিগুলো ভেঙে যায়। এই চর্বির মধ্যে যে টক্সিন থাকে সেই টক্সিন আমাদের ব্যাকপেইন তৈরি করে। যেমন- আমাদের লোয়ার ইন্টেস্টাইন এর ব্লাড ভেসেল, লাম্বো স্যাকরাল স্পাইনের নার্ভ এর কাছাকাছি থাকে। সেক্ষেত্রে স্পাইনের ব্লাড ভেসেলগুলো তার খাদ্য হিসেবে নিউট্রিশন বা ব্লাড এর পরিবর্তে টক্সিন নিয়ে থাকে। এই টক্সিন-ই রমজানে কোমর ব্যথা তৈরি করার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম। ফলে আমরা কোমর ব্যথায় ভুগে থাকি।

কোমর ব্যথার স্থানে ঠাণ্ডা সেক দিন ১৫ মিনিট করে দিনে ২ বার। সেক দেওয়ার পূর্বে নারিকেল তেল ও রসুন একসাথে গরম করে (কিছুক্ষণ গরম করার পর ব্রাউন কালার হলে তা ঠাণ্ডা করুন) ওই স্থানে হালকা লাগিয়ে ঠাণ্ডা (ভেজা সুতি কাপড়ের উপর দিয়ে বরফ লাগিয়ে) সেক দেবেন।

আমার দীর্ঘ তিন যুগ-এর চিকিৎসার অভিজ্ঞতায় দেশে-বিদেশে দেখেছি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা রমজানে ব্যথার রোগীর জন্যে অত্যন্ত ফলদায়ক। ফিজিওথেরাপি মোডালিটিস-এর আল্ট্রাসাউন্ড, স্ট্রেসিং, স্ট্রেন্দ্রেনিং, স্ট্যাবেলাইজেশন, মায়োফেসিয়াল রিলিজ এবং পরিশেষে, মাসেল অ্যাক্টিভেশন চিকিৎসা অত্যন্ত কার্যকরী। যেমন- ঠাণ্ডা সেক নেওয়ার পরে বালিশ ছাড়া উপুর হয়ে শোবেন। এরপর দুই হাত কোমরের উপর রেখে মাথা এবং কাঁধ উঠাবেন ১০-১৫ বার।

প্রতিবার হোল্ড বা ধরে রাখবেন ৫ সেকেন্ড থেকে শুরু করে ১৫ সেকেন্ড পর্যন্ত। এক্সারসাইজটি দিনে ২ বার করুন। এছাড়া প্রতিটি ভঙ্গি বা মুভমেন্ট এর সময় পেটের মাংস শক্ত করে আপনার ভঙ্গি পরিবর্তন করুন। যেমন- বিছানা থেকে উঠার সময় পেটের মাংস শক্ত করে উঠে বসুন। অবশ্যই নিকটস্থ ব্যাকপেইন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

খাদ্য তালিকায় একটু পরিবর্তন আনতে হবে যেমন- ইফতার ও সেহরির সময় প্রচুর পানি বা জুস পান করুন। অতিরিক্ত তৈলাক্ত ও ভাজা খাবার কম খান। ধূমপান বর্জন করুন।

ফিজিওথেরাপি বিজ্ঞানী এবং নন সার্জিকেল সলিউশন ফর দ্যা স্পাইন-এর বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনও এমন ওষুধ তৈরি হয় নাই যে ওষুধ খেলে আপনার দীর্ঘ দিনের ব্যথা কমে যাবে, আপনার মাংস পেশী লম্বা হবে, শক্তিশালী হবে এবং আপনার জয়েন্ট মবিলিটি বেড়ে যাবে। তবে ফিজিওথেরাপি বা এক্সারসাইজ- ইজ এ মেডিসিন যা আপনাকে এই কষ্টগুলো থেকে মুক্তি দেবে। সুতরাং সম্পূর্ণ চিকিৎসা পেতে হলে আপনাকে সঠিক মোবালাইজেশন, স্ট্রেসিং এবং স্ট্রেন্দেনিং এর মতো এক্সারসাইজ চিকিৎসা করতেই হবে।

লেখক: ব্যাকপেইন বিশেষজ্ঞ, লেজার ফিজিওথেরাপি সেন্টার, ৪৪/৮, পশ্চিম পান্থপথ, ঢাকা।