রূপক মুখার্জি, নড়াইল : মিনিকেট ধান চাল নিয়ে দেশে নানা যুক্তিতর্ক, আলাপ-আলোচনা, কথাবার্তা বেশ পুরানো। সেই আলোচিত মিনিকেট চাল নিয়ে খাদ্য কর্তৃপক্ষ দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে মিনিকেট ধান উৎপন্ন হলেও এই জাতের ধানের কোন নিবন্ধন নেই। বর্তমান বাজারে যে সব মিনিকেট চাল পাওয়া যাচ্ছে, তার পুষ্টিগুণ অনেক কম। তবে এর পরও এর(মিনিকেট চাল) যথেষ্ট পুষ্টিগুণ থাকে এবং দীর্ঘদিন খাওয়ার ফলে ক্যান্সার রোগের কোন রকম ঝুঁকি থাকে না। জনপ্রিয়তার কারণে একটি অসাধু ব্যবসায়ী চক্র সাধারণ জাতের সাদা, লম্বাটে চালকেও মিনিকেট চাল বলে বিক্রি করছে, যা প্রতারণার সামিল।

মিনিকেট চাল পলিশ করার সময় বিভিন্ন রাসায়নিক এর ব্যবহার এবং এ সব চাল দীর্ঘদিন খেলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি কতটুকু বা ক্যান্সার হতে পারে কি না-এমন আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ কমিটি গঠনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ঠ পরীক্ষাগারে দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

গঠিত কমিটি কুষ্টিয়ার রাইস মিল পরিদর্শন করে এবং সেখান থেকে মিনিকেট, বি আর-২৮ ও হাইব্রিড হীরা চালের নমুণা সংগ্রহ করে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনষ্টিটিউট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনষ্টিটিউট অব নিউট্রিশন এ্যান্ড ফুড সায়েন্সে পুষ্টিগুণ সহ বিভিন্ন বিষয়ে পরীক্ষা করা হয় সেই নমুনা গুলোর। মিনিকেট চালে প্রোটিনের পরিমাণ লাল চালের তুলনায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। একই ভাবে হ্রাস পায় ক্যালরি, কার্বো হাইড্রেড, ফ্যাট, ফাইবারের পরিমান।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গঠিত ১৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো: ইকবাল রউফ মামুন বলেন, ‘পরীক্ষায় এটা প্রমানিত হয়েছে যে, মিনিকেট বা সাদা চালে পুষ্টিগুণ অনেকটাই কমে যায়। তবে সেটা ষ্ট্যান্ডার্ড মানের চেয়ে বেশী। সুতরাং এই চাল খেলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বা ক্যান্সারের কোন সম্ভাবনা নেই। তাছাড়া এর কোন বিজ্ঞান ভিত্তিক তথ্য পাওয়া যায় নি ’।

চাল গুলো পরিষ্কার করার জন্য চাল কলের মালিকরা ইউরিয়া বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার করে থাকেন- এ অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখানে কোন রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারের সুযোগ নেই। মেশিনের মাধ্যমে চাল গুলো পরিষ্কার করা হয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মিনিকেট নামে এক ধরনের ধানের চাষ এ দেশে হয়, যার ফলন সীমিত। কুষ্ঠিয়া জেলাসহ অন্যান্য জেলায় এই ধান কম-বেশি উৎপন্ন হয়। তবে দেশে এই মিনিকেট নামের কোন জাতের নিবন্ধন নাই। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পশ্চিম বাংলায় ‘শতাব্দী’ নামের একটি জাত সে দেশে চাষিদের মাঝে পরীক্ষা মূলক ভাবে বিতরণ করে চাষ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে শতাব্দী জাতের চালই এ দেশে মিনিকেট বলে পরিচিতি লাভ করে। শুধু তাই নয়, এখনও এই জাতের বীজ ভারত থেকে এ দেশে আসে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কৃষকের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ফলন কম হওয়ায় চাষিরা এই ধান চাষ করতে আগ্রহী নয়। তা ছাড়া, মিনিকেট ধানের পরিচর্যা করতেও হয় বেশি। জনপ্রিয়তার কারনে বাজারে এক নম্বর, দুুই নম্বর মিনিকেট চাল দেদারসে বিক্রি হচ্ছে। আর এই বিষয়টি তদারকির দায়িত্ব জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের।

(আরএম/এসপি/মে ২৫, ২০১৮)