স্টাফ রিপোর্টার : ঈদুল ফিতরে বাড়ি ফেরা মানুষরা যানজটে পড়বে না বলে নিশ্চয়তা দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ জন্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নানা উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন তিনি।

তবে ঈদ যাত্রা শুরু হলে যান চলাচল কিছুটা ধীরগতির হবে, এটা আগেই জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।

ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে গাজীপুর অংশ, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে নিত্য যানজট নিয়ে এবারের ঈদ যাত্রা নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা।

এই প্রেক্ষিতে সড়ক মন্ত্রী তার ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে লিখেছেন। এ নিয়ে ‘বিভ্রান্তিকর’ তথ্য না ছড়ানোরও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

মন্ত্রী লিখেন, ‘ঢাকার চারপাশের যানজটপ্রবণ এন্ট্রি এবং এক্সিট পয়েন্টগুলোর ব্যবস্থাপনায় নেয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগ।’

‘এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে মন্ত্রণালয় সজাগ রয়েছে। বৃষ্টিজনিত ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতে দেয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা। অতিবৃষ্টিতে যান চলাচলে ধীরগতি হলেও যানজট হবে না। আমাদের প্রচেষ্টা অবিরত, অব্যাহত।’

গত কয়েক বছর ধরেই ঈদের আগে যানজটের আশঙ্কা নিয়ে গণমাধ্যমে নানা প্রতিবেদন প্রকাশ হয়ে এসেছে। তবে সড়কে পুলিশের ব্যবস্থাপনা তুলনামূলক ভালো দেখা গেছে। আর ধীরগতি থাকলেও তেমন যানজটের ভোগান্তিও দেখা দেয়নি ঈদের আগে।

মন্ত্রী লিখেন, ‘আশা করা যাচ্ছে, এবারের ঈদযাত্রা গতবারের চেয়ে আরও স্বস্তিদায়ক হবে। এ নিয়ে কোনো ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করে সড়ক সম্পর্কে কোনরুপ আতঙ্ক সৃষ্টি না করতে জনস্বার্থে সকলের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।’

বর্ষায় অতিবর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত জেলা সড়কের মেরামত কাজ আগামী ৮ জুনের মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক প্রসঙ্গ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটের যেসব কারণ আছে, তার মধ্যে একটির সমাধান ঈদের আগেই হয়ে যাবে বলেও জানান কাদের।

‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী রেলওয়ে ওভারপাসের দুই লেন ইতোমধ্যে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। সেখানে এখন আর যানজট হচ্ছে না। ১৫ জুনের মধ্যে নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ হবে। তখন সম্পূর্ণ যানজটমুক্ত হবে ফেনী রেলওয়ে ওভারপাস এলাকা।’

‘ইন্ডিয়ান লাইন অব ক্রেডিট এর আওতায় ময়নামতি-সরাইল সড়কের নির্মাণকাজ শুরু প্রক্রিয়াধীন। আপাতত এ সড়কের মেরামত ও সংস্কার কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’

মেঘনা ও গোমতি সেতুর টোল প্লাজার কারণে তৈরি হওয়া যানজটের বিষয়ে মন্ত্রী লিখেন, ‘মেঘনা ও গোমতি সেতুর টোলপ্লাজায় টোল আদায় ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত করা হয়েছে।’

তবে এই মহাসড়ককে পুরোপুরি নির্বিঘ্ন করতে ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, সেটিও জানিয়ে দেন সড়ক মন্ত্রী।

‘আগামী ডিসেম্বর নাগাদ দ্বিতীয় কাঁচপুর, দ্বিতীয় মেঘনা ও দ্বিতীয় গোমতী সেতুর নির্মাণকাজ নির্ধারিত সময়ের ছয় মাস আগে শেষ হতে যাচ্ছে।’

ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক

যানজটপ্রবণ এই দুটি মহাসড়কের বিষয়েও লিখেন মন্ত্রী। জানান, জয়দেবপুর-এলেঙ্গা মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। এরই মধ্যে এ মহাসড়কে ২৬টি সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে।

‘যানজটপ্রবণ চন্দ্রা মোড় প্রশস্তকরার পাশাপাশি বাইলেন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ১১টি উড়ালসেতু ও রেল ওভারপাস এবং ১০টি আন্ডারপাস নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে।’

‘এয়ারপোর্ট-জয়দেবপুর বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট-বিআরটি প্রকল্পের সড়ক অংশের কাজ ঈদকে সামনে রেখে জনদুর্ভোগ লাঘবে আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’

বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প

মন্ত্রী তার লেখায় তার মন্ত্রণালয়ের অধীন চলমান নানা উন্নয়ন প্রকল্প কোন পর্যায়ে আছে, সেটারও বর্ণনা দেন। জানান, পদ্মাসেতুর চারটি স্প্যান স্থাপন করা হয়েছে। এরই মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ ৫৫ ভাগ শেষ হয়েছে।

ঢাকায় যানজন নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে, এমন দুটি প্রকল্প নিয়েও জানান মন্ত্রী।

‘তরুণ প্রজন্মের প্রকল্প মেট্রোরেল-৬ এর নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে। মেট্রোরেলের আরও চারটি রুটের কাজ প্রক্রিয়াধীন।’

‘ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজের প্রথমধাপের কাজ ৩০ ভাগ শেষ হয়েছে।’

‘চট্টগ্রামবাসীর স্বপ্নের প্রকল্প কর্ণফূলি টানেলের নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে। শাহ আমানত শাহ সেতুর দুপ্রান্তের সড়ক ছয়লেনে উন্নীতকরণ কাজ এগিয়ে চলেছে।’

‘নিজস্ব অর্থায়নে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ কাজ প্রক্রিয়াধীন।… সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়কের নির্মাণকাজ এগিয়ে চলেছে। আগস্ট মাসে কালনাসেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হতে যাচ্ছে।’

‘গাজীপুর-মদনপুর দেশের প্রথম পিপিপিভিত্তিক এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ আগামী অক্টোবরে শুরু হবে। পোস্তগোলা-ভাঙ্গা দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।’

‘কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ দৃষ্টিনন্দন মেরিন ড্রাইভ ইতোমধ্যে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে।’

‘বাগেরহাট-চিতলমারি-পাটগাতি সড়কের কাজ শুরু হয়েছে। যশোর-বেনাপোল, যশোর-ঝিনাইদহ এবং যশোর-মাগুরা সড়কের কাজ শেষ হয়েছে।’

‘টেকেরহাট -বাকেরগঞ্জ সড়কের দেড় কিলোমিটারের কাজ চলমান রয়েছে, এছাড়া সড়কের বাকি অংশ সচল রয়েছে।’

পর্যায়ক্রমে উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের আপডেট জানানো হবে বলেও শেষে জানিয়ে দেন ওবায়দুল কাদের।

(ওএস/এসপি/মে ২৮, ২০১৮)