স্বাস্থ্য ডেস্ক : গরমকালে বেশি ঘাম হয় এবং শরীর ভেজা থাকে। ঘাম এবং ভেজা শরীরই হলো ছত্রাক জন্মানোর জন্য উপযোগী। গরমকালে এ রোগটি সাধারণত বেশি হয়। তবে যারা এয়ারকুলার ব্যবহার করেন তাদের ঘাম হয় না। রোগটিও তাদের ক্ষেত্রে কম হয়। যারা পরিষ্কার-পরিছন্নতা সম্পর্কে ততটা সজাগ নন এ রোগটি তাদের বেশি হতে দেখা যায়। বিশ্বব্যাপী পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এক-তৃতীয়াংশ লোক এ রোগে আক্রান্ত হয়। 

গ্রীষ্মপ্রধান দেশে এ রোগে আক্রমণের হার শীতপ্রধান দেশের চেয়ে বেশি। আমাদের দেশে অন্তত ৭০ থেকে ৮০ হাজার লোক প্রতি বছর এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। ছত্রাকজনিত যেসব চর্মরোগ আমাদের দেশে বেশি দেখা যায় সেগুলোকে মূলত তিনটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন— দাউদ, ছুলি ও ক্যানডিডিয়াসিস। এ তিন ধরনের ছত্রাক প্রজাতির সবই মূলত ত্বকের বাইরের অংশকে আক্রমণ করে এবং সেই আক্রমণ স্যাঁতসেঁতে, নোংরা, ঘর্মাক্ত দেহে সবচেয়ে বেশি হতে দেখা যায়।

দাদ

দাদ দেহের যে কোনো স্থানে দেখা দিতে পারে। যে স্থানে দেখা যায় সেই স্থানটিতে গোলাকার চাকার মতো দাগ দেখা যায়। যার মধ্যখানের চামড়া প্রায় স্বাভাবিক আকারে দেখা গেলেও গোল দাগের পরিধিতে ছোট ছোট গোটা দেখা যায়। এ দাগের পরিধিতে উঁচু বর্ডার লাইন আকারে থাকে এবং চুলকালে সেখান থেকে কষ ঝরতে থাকে। শরীরের যে কোনো স্থানে এর আক্রমণ ঘটতে পারে। তবে দেখা গেছে, তলপেট, পেট, কোমর, নিতম্ব, পিঠ, মাথা, কুঁচকি ইত্যাদি স্থান বেশি আক্রান্ত হয়। আক্রমণের স্থান লক্ষ্য করে একে স্থানভিত্তিক বিভিন্ন নামে নামকরণ করা হয়েছে। যেমন— মাথায় যখন ডার্মাটোফাইট জাতীয় ছত্রাকের আক্রমণ হয় তখন তাকে বলা হয় টিনিয়া কেপিটিস। ঠিক তেমনিভাবে যদি পায়ে হয় তখন বলা হয় টিনিয়া পেডিস ক্রুরিস, হাতে হলে বলা হয় টিনিয়া ম্যানাস, নখে হলে তাকে বলা হয় টিনিয়া আংগুয়াম, শরীরের অংশবিশেষ আক্রান্ত হলে বলা হয় টিনিয়া কর্পোরিস।

টিনিয়া ভারসিকলার বা ছুলি

এটিও একটি ছত্রাকজনিত রোগ। গরমকালে এ রোগে রোগী বেশি আক্রান্ত হয়, শীতকালে আবার এমনিতেই যেন মিলিয়ে যায়। আবার গরম এলে গায়ের চামড়া ভিজে থাকে, তখনই আবার দেখা দেয়। হালকা, বাদামি, সাদা গোলাকৃতি দাগ দেখা যায়। বুকে, গলার দুই পাশে, ঘাড়ের পেছনে, পিঠে, বগলের নিচে, এমনকি সারা শরীরেও হতে পারে। এতে ত্বক দেখতে সাদা হয়। তাই অনেকেই আবার একে শ্বেতী রোগ ভাবতে শুরু করেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শ্বেতীর সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।

লেখক : ডা. দিদারুল আহসান, চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ, আল-রাজী হাসপাতাল, ফার্মগেট, ঢাকা।