চৌধুরী আবদুল হান্নান


মাদ্রাসার শিক্ষক, মসজিদের ঈমামের কাছে তার শিশু ছাত্রী যখন নিরাপদ নয় তখন অন্যদের কথা আর কি বলা যায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণ পিতৃতুল্য, সেখানেও ছাত্রীরা তাদের কাছে যৌন লালসার শিকার হয়। তারা শিক্ষার আলো ছড়ানোর পরিবর্তে দুর্গন্ধ ছড়িয়েছে। মেয়েরা কোথাও নিরাপদ নয়, পথে পথে ওত পেতে আছে ভয়ংকর সব নেকড়ে।

চলন্ত বাসে নারীকে যৌন আক্রমন খবরে আসে। ২০১২ সালে দিল্লির একটি চলন্ত বাসে মেডিকেল ছাত্রী জ্যতি সিং পান্ডের (২৩) বাস শ্রমিকদের দ্বারা গ্যাং রেপের ঘটনায় মৃত্যুর খবরে শুধু ভারতে নয়, বিশ্বব্যাপী তোলপাড় হয়েছিল। গত বছরের ২৫ আগস্ট বগুড়ার-ময়মনসিংহ রোডে সিরাজগঞ্জের মেয়ে আইনের ছাত্রী জাকিয়া সুলতানা রূপা (২৭) কে চলন্ত বাসে হেলপার, কন্ডাকটার, চালক মিলে ধর্ষণ করে হত্যা করে।

আমাদের হৃদয় আজ রক্তাক্ত, অবিরাম রক্তক্ষরণ। আমাদের মেয়েরা চোখের সামনে লাঞ্চিত হচ্ছে, নরক যন্ত্রনায় বসবাস আমাদের। নারীর প্রতি নিষ্ঠুর লাঞ্চনার স্মৃতি নিয়ে আমরা ঘুমাতে যাই, সকালে ঘুম থেকে উঠে খবরে আরও ভয়ংকর ঘটনা দেখে দিন শুরু করি।

রোগের ধরণ ও মাত্রা বুঝে ঔষধ দিতে হবে। বিদ্যমান বাস্তবতায় দেশে কার্যকর একটি বিশেষ বাহিনী র‌্যাবের সহোযগিতা নেওয়ার সময় এসেছে। আইন শৃংখলার চরম অবনতি রোধে ও সন্ত্রাস দমনের জন্য ২০০৪ সালে এই এলিট ফোর্সর সৃষ্টি হয়েছিল এবং সাফল্যের সাথে তারা কাজ করে চলেছে। দেশ-বিদেশে এই বাহিনীর বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ উঠেছিল। এমনকি আর্ন্তজাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিইম্যান রাইর্টস ওয়াচ ২০১৪ সালে র‌্যাবকে ঘাতক বাহিনী উল্লেখ করে বিলুপ্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহবান জানিয়েছিল নিউইয়র্ক ভিত্তিক সংস্থাটি। কিন্তু সরকার কিছুতেই পিছ পা হয়নি। আসামী ধরতে গিয়ে র‌্যাবের ক্রসফায়ারের কোনো গুরুতর অপরাধী বা হত্যা মামলার আসামী মারা গেলে কেউ দুঃখ প্রকাশ করেনি বরং স্বস্তি পেয়েছে । ক্রসফায়ার নিয়ে রাজনীতির মাঠ গরম করার চেষ্টা হয়নি, তাও নয়। তবে র‌্যাব এখনও সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য বাহিনী এবং সন্ত্রাসীদের কাছে এক আতংকের নাম।

পরিস্থিতি মোকাবেলায় আনেক সময় কঠিন পদক্ষেপ নিতে হয়। দেশকে মাদকমুক্ত করতে অভিযান চালিয়ে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রোদ্রিগো দুতারতে (জড়ফৎরমড় উঁঃবৎঃব) ক্ষমতায় আরোহনের ১০০ দিনের মধ্যে ৩৬০০ মাদক ব্যবসায়ীকে হত্যা করেন (সমকাল ১২.১০.১৬)। তার বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও তিনি মাদক বিরোধী অভিযান বন্ধ করেননি । প্রতিজ্ঞা দেশকে মাদক মুক্ত করা, যুব সমাজকে রক্ষা করা।

“নারীর প্রতি নিষ্ঠুরতা” কে আমাদের প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে সংক্ষিপ্ত আদালতে স্বল্পতম সময়ে মৃত্যুদ- কার্যকরের বিধান রেখে কঠিন আইন প্রনয়ন করলে মানুষের বিক্ষুব্ধ হৃদয় কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে এবং আমাদের মেয়েরা সুরক্ষা পাবে, সরকারের জনপ্রিয়তাও নিঃসন্দেহে বৃদ্ধি পাবে।

অনেক সময় মেয়েরা যৌন হয়রানীর শিকার হয়ে লোক লজ্জায় তা লুকিয়ে যায়, বিচার চাইতে গেলে পুনরায় ধর্ষণের মত পরিস্তিতি মোকাবেলা করতে হয়। এমনকি বহু নারী, কিশোরী বখাটের অত্যাচারে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। কিন্তু তারা বুঝতে পারে না যে, এ লজ্জা তার নয়, লজ্জা ওই কাপুরুষটির । তাই নারীদের সচেতন হতে হবে । আর নয় অপমান সহ্য করা, প্রতিবাদ, প্রতি আক্রমন করতে হবে। নারী বিজয়ী হবে, কাপুরুষদের কখনও বিজয় হয় না।

সম্প্রতি বাংলাদেশসহ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নারী শিক্ষার উন্নয়নে এবং ব্যবসায়িক উদ্যোগে ভূমিকার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে “গ্লোবাল উইমেনস লিডারশি অ্যাওয়ার্ড” দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে নারী নির্যাতন বন্ধে তিনি একটু বাড়তি ভূমিকা রাখলে তার অ্যাওয়ার্ড দেশে-বিদেশে আর দ্যুতি ছড়াবে। অবস্থা এমন দাড়িয়েছে যে, কোনো কিছুই যেন হতে চায় না প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া।

তাই আমরা প্রত্যাশা করি “নারীর প্রতি নিষ্ঠুরতা” বন্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃষ্টি দেবেন।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার