লাইফস্টাইল ডেস্ক : যে কোনো বয়সেই রোজা রাখা যায়। তবে সারাদিন উপবাসের পর ইফতার করতে বসে দেখতে হবে খাবার যেন খুব বেশি বা খুব কম না হয়ে যায়। অন্যান্য সময় যতটুকু খাবার খাওয়া হয় রোজার সময় সেই পরিমাণ খাবারই খেতে হবে।

কিশোর-কিশোরীদের রোজার খাবার

এই বয়সে খেলাধুলা, পড়াশোনা অন্যান্য কাজের জন্য শক্তি প্রয়োজন। এরা রোজা রাখলেও তাদের খাবারের প্রতি অভিভাবকদের দৃষ্টি দিতে হবে। খাবারে পর্যাপ্ত আমিষ জাতীয় খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হবে।

ইফতারে যা থাকতে হবে

শরবত (বিভিন্ন ধরনের), লাচ্ছি, লাবাং বা বিভিন্ন ফলের জুস, ছোলা ভুনা, ঘুঘনি, মুড়ি, পেঁয়াজু, আলুর চপ, কাবাব, বেগুনি, সবজির চপ, জিলাপি, খিচুড়ি, হালিম, খেজুর ও অন্যান্য ফল। বিকল্প হিসেবে থাকছে ফ্রায়েড রাইস, নুডলস, চিকেন ফ্রাই, স্যুপ, সঙ্গে খেজুর ও অন্যান্য ফল। ফল খেতে না চাইলে ফলের কাস্টার্ড বা ফালুদা দিতে পারেন। ফ্রায়েড রাইসের সঙ্গে সবজি, ডিম ও মুরগির মাংস দিতে হবে। নুডলসের সঙ্গে সবজি, ডিম ও মুরগির মাংসও মন্দ নয়।

সন্ধ্যারাতে যা থাকতে হবে

সন্ধ্যারাতে ভাত খেতে না চাইলে রুটি বা লুচি এবং মাংস দেওয়া যেতে পারে। সঙ্গে সালাদ দিতে হবে। দুধ সেমাইও খেতে পারে তারা। সন্ধ্যারাতে মাছ থাকলে ভালো হয়।

ভোর রাতে যা থাকতে হবে

ভাত, মাংস, সবজি, ডাল, দুধ দিতে হবে। এ সময় দুধ-কলা-ভাতও চমৎকার খাবার। রোজায় যতটুকু সম্ভব পানি পান করতে হবে। কিশোর-কিশোরীদের খাবারের বেলায় তাদের রুচি ও পছন্দের দিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে। তবে তারা যাতে সেহরির খাবার বাদ না দেয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এ সময় ডিম খাওয়া হয় না বলে তিনবারের যে কোনো সময় একবার ডিম খেতে দিতে হবে।

মধ্যবয়সে রোজার খাবার

কর্মব্যস্ততার জন্য এ বয়সী মানুষের সঠিক পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার প্রয়োজন। ইফতারের খাবার ভাজা-পোড়া বাদ দিয়ে বেছে খেতে হবে। এই সময় ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়ামের ঘাটতি বেশি দেখা দেয়। দুধ, ডিম, তিন বারের যে কোনো এক সময় খেতে পারলে ভালো হয়। অনেকে ঘুমের ব্যাঘাত হবে তাই সেহরি বাদ দেন। শরীর এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো অবস্থাতেই তা সমর্থনযোগ্য নয়।

ইফতারে বিভিন্ন ধরনের খাবার- কাঁচা ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, ঘুঘনি, মুড়ি, হালিম, খেজুর, শরবত, লাচ্ছি, মাঠা, মাঝে মাঝে ফালুদা বা বিভিন্ন ফলের জুস খেতে পারে। আবার কোনো কোনো দিন খিচুড়ি বা দই চিড়াও খেতে পারে। যে কোনো মৌসুমি ফলও খেতে পারে। শসা শরীরের পানির ঘাটতি অনেকটা মিটাবে। কোনো বাসী খাবার খাওয়া যাবে না।

সন্ধ্যারাতের খাবার- ভাত, মাছ, শাক-সবজি অথবা রুটি, মাছ, সবজি। যেহেতু ইফতারের সময় তেমন সবজি খাওয়া হয় না, তাই সন্ধ্যারাতে সবজির দিকে নজর দিতে হবে।

ভোররাতের খাবার- ভাত, মাছ বা মাংস, ডাল, দুধ ১ কাপ যদি হজমের সমস্যা থাকে তাহলে আধা কাপ দই খেতে পারেন।

গর্ভাবস্থায় রোজা

গর্ভাবস্থাকে মোট তিন ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথম তিন মাস, দ্বিতীয় তিন মাস এবং শেষ তিন মাস। দ্বিতীয় তিন মাস ও শেষ তিন মাস গর্ভস্থ শিশুর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময় মাকে পুষ্টিকর খাবার বিশেষ করে আমিষ, লৌহ ও ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার বেশি খেতে হয়। গর্ভাবস্থায় রোজা রাখতে চাইলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোজা রাখা উচিত। যে মায়েদের খাবারে অরুচি ভাব এবং গর্ভাবস্থায় অন্য কোনো জটিলতা থাকে না তারা রোজা রাখতে পারেন। তাদের ইফতার, সন্ধ্যারাতের খাবার ও ভোর রাতের খাবার অন্যদের মতোই হবে। তবে তাদের খাবারে পর্যাপ্ত পানি, দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, ডাল থাকতে হবে। এ সময় টক ফল বা লেবু খুব উপকারী। এ সময় কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে বলে শাক-সবজির দিকে জোর দিতে হবে। অনেকের গ্যাস্ট্রিক আলসারের সমস্যা থাকে সেজন্য তেলে ভাজা খাবার না খাওয়াই ভালো।

বার্ধক্যে রোজা

ষাটোর্ধ্ব লোকের রোজা রাখাটা অনেকের ক্ষেত্রে কষ্টকর হয়ে পড়ে। কারণ এ সময় বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতা ও খাবার গ্রহণের ক্ষমতা অনেকখানি কমে যায়। ত্রিশ দিন একটানা রোজা রাখতে গিয়ে তারা খুবই দুর্বল হয়ে পড়েন। এজন্য তাদের ইফতার, সন্ধ্যারাতের খাবার ও সেহরির খাবার হতে হবে একটু ভিন্নতর।

ইফতারের খাবার- চিড়া ভিজানো, দুধ, কলা, সিদ্ধ ডিম, খেজুর, শরবত অথবা নরম খিচুড়ি, সিদ্ধ ডিম, শরবত, খেজুর, ফল অথবা ঘুঘনি, বেগুনি, আলুর চপ, শরবত, পুডিং ইত্যাদি। দাঁতের সমস্যা থাকে বলে নরম ও সহজ খাবারই তাদের জন্য ভালো। তবে তাদের রুচি ও ইচ্ছাকে অবশ্যই প্রাধান্য দিতে হবে। খুব ঝাল খাবার তাদের না দেওয়াই ভালো।

সন্ধ্যারাতের খাবার- অল্প ভাত, মাছ ও সবজি, আলু ভর্তা।

সেহরির খাবার- ভাত, মুরগির মাংস, ডিম, সবজি, দুধ-১ কাপ হজমের সমস্যা থাকলে আধা কাপ দই দেওয়া যেতে পারে।

অথবা দুধ-কলা-ভাত দিয়েও সেহরি সারতে পারেন। পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে এবং বাসি খাবার খাওয়া যাবে না।

আসলে একেক বয়সে মানুষের খাবার একেক রকম হয়ে থাকে। পরিমাণ ও খাবারের ধরন একরকম নাও হতে পারে। ইফতারিতে নানা পদের খাবার তৈরি করা হয়। খাবারের এই বৈচিত্র্য মাসব্যাপী থাকাটা শ্রেয়।

লেখক : আখতারুন নাহার আলো, প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান, পুষ্টি বিভাগ বারডেম হাসপাতাল।