উজ্জ্বল হোসাইন : সারাদেশে যখন মাদকবিরোধী অভিযান চলছে, ঠিক তখনই মধ্যে মাদকাসক্ত ছেলের হাতে বাবা খুন হয়েছেন। 

গতকাল রবিবার বিকেলে মর্মান্তিক এ ঘটনাটি ঘটে হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার ১০নং ওয়ার্ডের কাজিমউদ্দিন বেপারী বাড়িতে। হত্যাকা- ঘটিয়ে ঘাতক ছেলে সুমন (৩০) পালিয়ে গেছে। তবে তাকে আটকের জন্যে টিম কাজ করছে বলে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ জানিয়েছে। ছেলের হাতে নিহত এই হতভাগ্য পিতার নাম হচ্ছে তাজুল ইসলাম (৭০)।

স্থানীয়রা জানায়, তাজুল ইসলামের ছেলে সুমন দীর্ঘদিন ধরে মাদকসক্ত। তার সাথে এলাকার চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা ও সেবীদের সখ্যতা এবং নিয়মিত যোগাযোগ ও আড্ডা রয়েছে। সে আটক হয়ে জেলহাজতেও ছিলো। গত প্রায় ২ মাস পূর্বে জামিনে এসে সে ফের মাদকে জড়িয়ে পড়ে। ভালো হয়ে যাবে ভেবে তাকে তার পরিবার বিয়ে করায় ও ব্যবসা দিয়ে দেয়। মাদকাসক্তের কারণে সে তার বউ-ব্যবসা সবই হারায়। ইতিমধ্যে সে যতবার আটক হয়েছে, ততবার জামিনে এসেছে, কিন্তু এতটুকু পরিবর্তন ঘটেনি।

স্থানীয় মৃত রব মিয়ার ছেলে শুকু মিয়া জানান, আমি বিকেলে বাড়ির পাশের বায়তুল আকসা জামে মসজিদের সামনে খালে গোসল করতে নামি। এমন সময় সুমন বটি দা দিয়ে আমাকে আঘাত করার চেষ্টা করলে আমি ডুব দিয়ে পালিয়ে যাই। এরপরেই সে তার নিজ বাড়ির সামনে ডাকাতিয়ার পাশের খাল পাড়ে কাজ করা অবস্থায় তার বাবাকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রিক্সায় করে হাজীগঞ্জ বাজারের দিকে চলে যায়। তার হাতে বটি দা থাকার কারণে তাকে ধরতে কেউ এগিয়ে আসেনি। এর আগেও সে লাল মিয়া ও সুমনসহ বেশ ক’জনকে মাদকের টাকার জন্যে হামলা চালিয়ে আহত করে। এমনকি তার পরিবারের উপরও হামলা চালায়। যার কারণে তাকে কয়েকবার তার বাবা-মা পুলিশে দিয়েছে।

নিহতের আরেক ছেলে মোঃ মহসিন জানান, আমার ভাই সুমন মাদক সেবনকারী। তার অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ। আজ (রোববার) সে বাবার উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে দা দিয়ে কুপিয়ে বাবাকে গুরুতর আহত করে। উপর্যুপরি দায়ের কোপে বাবার শরীর থেকে বাম পা প্রায় বিচ্ছিন্ন এবং পেটের নাড়িভুড়ি বের হয়ে যায়। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে বাবার মৃত্যু হয়।

মহসিন আরো জানান, সুমনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে দু’তিনবার তাকে পুলিশের মাধ্যমে জেলহাজতে দিয়েছি আমরা। জেলে থাকতে সে ভালো হয়ে যাবে বলে আমাদের কাছে কান্নাকাটি করলে গত ২ মাস পূর্বে তাকে জেল থেকে ছাড়িয়ে আনি। কিন্তু তার কোনো পরিবর্তন হয়নি। জেল থেকে আসার পর আবারো মাদকে জড়িয়ে পড়ে। নিহতের মেয়ে হালিমা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, তার অত্যাচারে আমাদের সংসারটা তছনছ হয়ে গেলো। আমরা এমন ভাই চাই না, আমরা বাবা হত্যায় জড়িত ভাইয়ের ফাঁসি চাই।

হাজীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি ও স্থানীয় রান্ধুনীমুড়া গ্রামের মুন্সী মোহাম্মদ মনির বলেন, তাজুল ইসলাম হত্যার পর থেকে এলাকার বেশ ক’জন মাদকসেবী কৌশলে সুমনকে বাঁচিয়ে নিতে তাকে মানসিকভাবে অসুস্থ বলে প্রচার শুরু করে। তবে আমরা যতটুকু জানি সে মানসিক রোগী না, সে হচ্ছে মাদকসেবী।

হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ জাবেদুল ইসলাম জানান, নিহত তাজুল ইসলামের ছেলে মাদকাসক্ত সুমনকে বেশ ক’বার জেলে দেয়া হয়েছে। তার মা-বাবা তাকে জেলে দিয়ে আবার ছাড়িয়ে নিয়ে আসে। মূলত সে একজন মানসিক বিকারগ্রস্ত ব্যক্তি।

অপর এক প্রশ্নে এই কর্মকর্তা বলেন, নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্যে চাঁদপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। হত্যায় জড়িত সুমনকে আটকের জন্যে আমাদের টিম কাজ করছে।


(ইউএইচ/এসপি/জুন ০৪, ২০১৮)