রঞ্জন কৃষ্ণ পন্ডিত, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলে এবার ধানের বাম্পার ফলন হলেও শ্রমিক সঙ্কট ও অতিরিক্ত মজুরির কারণে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে আধুনিক কৃষিযন্ত্র কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার। 

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার ১২টি উপজেলায় হাইব্রিড, ঊফশী ও স্থানীয় জাতের বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও কালবৈশাখী, অনাকাঙ্খিত বৃষ্টি ও বজ্রপাতের ফলে ধানকাটা শ্রমিকরা মাঠে যেতে অনীহা প্রকাশ করায় স্বপ্নের ফসল অনেক কৃষকই সঠিক সময়ে ঘরে তুলতে পারেনি। ধান কাটা শ্রমিকের সঙ্কট ও অতিরিক্ত মজুরির কারণে জমি তৈরি থেকে ধান কাটা পর্যন্ত যে খরচ হয় উৎপাদিত ধানে সে খরচ ওঠেনা। ফলে কিছু ধান ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে যায়। ফলে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় এক লাখ ৭০ হাজার ৬২৩ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে। জেলায় মোট ৬ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বছরের এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে এ মৌসুমে ধান কাটা শুরু হয়েছে। গত প্রায় এক মাসেরও অধিক সময়ে টাঙ্গাইলের মোট আবাদের প্রায় ৯০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে।

একজন শ্রমিক দিনে সর্বোচ্চ ২ থেকে ৩ মন ধান কাটতে পারেন। সেজন্য তাকে মজুরি দিতে হয় ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। এক বিঘা জমিতে ধান হয় সর্বোচ্চ ২৫ মন। ২৫ মন ধান কাটতে মোট শ্রমিকের প্রয়োজন হয় ১০ থেকে ১২ জন। এক বিঘা জমিতে ধান কাটতে খরচ হয় সাত হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। চাষ, বীজ, সার খরচের সাথে কাটা, মাড়াই ও অন্যান্য প্রক্রিয়াজাতকরণ খরচ যোগ করলে ধানের যে দাম পড়ে, আর ধানের যে বাজার মূল্য তাতে কৃষক প্রতিনিয়ত ধান চাষের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।

অপরদিকে, একটি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার মেশিন দিয়ে একজন শ্রমিক দিনে ১০ থেকে ১২ বিঘা জমির ধান কাটতে পারেন। প্রতি বিঘা জমির ধান কাটতে খরচ হয় ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা। সাথে বাড়তি পাওনা মাড়াই, ছাটাই ও বস্তা ভর্তিকরণ। কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার দিয়ে একই সাথে ধান কাটা, ছাটাই বা মাড়াই, পরিষ্কার ও বস্তায় ভর্তি করে দেয়া হয়।

কৃষকরা জানায়, ক্রমাগত শ্রমিক সঙ্কট ও অতিরিক্ত মজুরির কারণে দিনে দিনে চাষাবাদ যান্ত্রিকীকরণের দিকে ধাবিত হচ্ছে। তারা জানায়, ধান রোপণ থেকে শুরু করে ধান কাটা, ছাটাই বা মাড়াই ও বস্তায় ভর্তি করা সবই মেশিন দিয়ে করা যায়। এজন্যই কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার মেশিনের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এই রকম মেশিন যদি কৃষকদের মাঝে স্বল্পমূল্যে সরবরাহ করা হয় তবে কৃষকরা আরও লাভবান হবে। ধানের উৎপাদন খরচ কমে যাবে।

এ প্রসঙ্গে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক কৃষির যান্ত্রিকীকরণের উপর জোর দিয়ে বলেন, কম্বাইন্ড হারভেস্টার যন্ত্রটি দিয়ে প্রতি ঘণ্টায় ৩৩ শতাংশ জমির ধান ও গম কেটে মাড়াই ও পরিষ্কার করে বস্তায় ভর্তি করা যায়।

তিনি জানান, ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের এ যন্ত্রটি ৫০% হারে উন্নয়ন সহায়তা (ভর্তুকি)’র আওতায় মাত্র ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকায় কৃষকের মাঝে প্রদান করা হয়ে থাকে। এছাড়া ধান রোপণ করার সময় রাইচ ট্রান্সপ্লাণ্টার সরবরাহ করা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে জানান কৃষি বিভাগের এ কর্মকর্তা।


(আরকেপি/এসপি/জুন ০৫, ২০১৮)