গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : কুয়েত থেকে দেশে এসে পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদ করা হলো না নজরুলের। কুয়েত প্রবাসী নজরুল এবার ঈদের আগেই বাড়ি ফিরবেন। স্ত্রী, সন্তানসহ আত্মীয় স্বজনদের সাখে ঈদ করবেন তিনি। সন্তানদের পছন্দের ঈদের জামাকাপড়ও কিনেছেন। শুক্রবার (১জুন) ইফতারের পর স্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলে এটাই জানিয়ে ছিলেন তিনি। মায়ের কাছ থেকে জোর করে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে বাবার সাথে কথা বলেন দু’সন্তানও। এটাই তাদের বাবার সঙ্গে শেষ কথা বলা। ওই দিন রাতে কুয়েতে কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার পথে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নজরুল ইসলাম (৪৮) নিহত হন। তিনি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের অষ্টগড় গ্রামের ফকিরবাড়ির মৃত আব্দুর রাশিদের ৩য় পুত্র।

তিনি কুয়েতের ইফতি সামাদ ক্লিনিক এন্ড হাসপাতাল কাজ করতেন। শুক্রবার সেখানে ডিউটি শেষে রাতে বাসায় ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। মৃত্যুর সংবাদটি তাঁর পরিবারের কাছে পৌছার পর সন্তান হারিয়ে মা, স্বামী হারিয়ে স্ত্রী আর প্রিয় বাবাকে হারিয়ে সন্তানরা বারবার মোর্চা যান।

নিহতের ভাই আজিজুল হক জানান, শনিবার (২জুন) ভোরে মৃত্যুর সংবাদটি জানতে পারেন। তাঁর ভাই নজরুল প্রায় ২৪বছর যাবত কুয়েত প্রবাসী ছিলেন। সর্বশেষ তিনি প্রায় দুই বছর আগে বাড়িতে এসেছিলেন। ১১জুন তিনি বাড়ি ফিরবেন। তাকে বরণ করতে মা জুবেদা খাতুনও সন্তানের প্রিয় খাবারগুলো তৈরিও করে রেখেছেন।

তাঁর স্ত্রী আছমা বেগমও পথচেয়ে বসে আসেন। দীর্ঘ দুই বছর পর স্বামী ফিরবেন। প্রতিদিন ক্যালেন্ডারে দিনগুলির দিকে চেয়ে থাকেন। গণনার দিন যেন শেষ হয় না। তার সাথে শুক্রবার ইফতারের পর কথা হয়, ঈদে কার জন্য কি কিনেছেন, কার কি পছন্দ, সবকিছু নিয়েই বাড়ি ফিরবেন। পরিবারের সাথে ঈদের আনন্দ উপভোগ আসবেন।

আছমা বেগম জানান, কতো কথাই হয়েছে। কখনও ভিডিও কল দিলে মোবাইলের স্কিনে সন্তানরা তার বাবাকে স্পর্শ করতো। ওরা কতো স্বপ্ন এঁকে রেখেছিলো, বাবাকে কাছে পেলে এই করবে, সেই করবে। সব স্বপ্ন আজ কেড়ে নিলো।

নজরুল ইসলামের দু’পুত্র। মোঃ আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রহমান। দু’জনই গৌরীপুর পৌর শহরের সুরযবালা পৌর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র।

তার ভাই আজিজুল হক জানান, তারা ৪ ভাই ও ৫ বোনের মাঝে সে ছিলো তৃতীয়। আমরা কুয়েতে যোগাযোগ করেছি। লাশ পাঠানোর জন্য প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে। তবে কখন এসে পৌঁছবে এটা এখনো কেউ বলতে পারছে না। কুয়েতের বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে।

(এসআইএম/এসপি/জুন ০৫, ২০১৮)