স্টাফ রিপোর্টার : ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদ অনুসারে টার্মিনেশন অথবা পদত্যাগজনিত চাকরিকালীন পাওনা এবং বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে বসুন্ধরা গ্রুপের অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম- এর চাকরিচ্যুত ও চাকরি ছেড়ে আসা সাংবাদিকরা দ্বিতীয় দফায় মানববন্ধন করেছেন।

বৃহস্পতিবার (৭ জুন) বেলা ১২টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন থেকে সাতদিনের মধ্যে বাংলানিউজ থেকে চাকরিচ্যুত ও চাকরি ছেড়ে আসা সাংবাদিকদের সমস্ত পাওনা পরিশোধের জন্য বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি আহ্বান জানান বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল।

বাংলানিউজের পাওনা বঞ্চিত সাংবাদিকদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে দেশের সাংবাদিক সমাজের এই শীর্ষনেতা বলেন, ঈদের আগে দেশের সবচেয়ে বড় শিল্পগ্রুপ বসুন্ধরা তাদের সাংবাদিকদের পাওনা বঞ্চিত রেখেছে, এটি মর্মান্তিক। যারা সাংবাদিকতা করেন, তারা উচ্চশিক্ষিত ও সমাজের অগ্রসর মানুষ। আবার বাংলানিউজকে যারা বছরের পর বছর ধরে ব্র্যান্ডিং করেছেন, তাদেরকেই বঞ্চিত করেছে বসুন্ধরা গ্রুপ। কাজেই, বসুন্ধরা গ্রুপ এই সাংবাদিকদের সঙ্গে যে অন্যায় আচরণ করছেন, তা দুর্ভাগ্যজনক ও মর্যাদাহানিকর। সাংবাদিকদের সম্মান, সাংবাদিকদের মর্যাদা, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে তাদেরকে দেওয়া হবে না।

তিনি বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপ আরও বড় হোক, এটা আমরা চাই। এক সপ্তাহের মধ্যে পাওনা বুঝিয়ে দিন, তাহলে আমরাও আপনাদেরকে সহযোগিতা করবো, ডিস্টার্ব করবো না। কিন্তু পাওনা না দিলে বা এ অন্যায় অব্যাহত রাখলে যা যা করার তা করতে বাধ্য হবো আমরা।

বিএফইউজের সকল অঙ্গ ইউনিয়ন তথা সকল সাংবাদিক বাংলানিউজের এই সহকর্মীদের সঙ্গে একাত্ম উল্লেখ করে বুলবুল বলেন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংগ্রামী সংগঠন। এক সপ্তাহের মধ্যে সাংবাদিকদের ন্যায্য পাওনা বুঝিয়ে না দিলে এ সংগঠন যে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেবে, বিএফইউজে ও সকল অঙ্গ ইউনিয়ন তার সঙ্গে থাকবে।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি আবু জাফর সূর্য বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপকে সাংবাদিকদের পাওনা টাকা অবশ্যই দিতে হবে।

সাংবাদিকদের রুটি-রুজির আন্দোলন-সংগ্রাম ও অধিকার আদায়ে দেশের সবচেয়ে বড় ট্রেড ইউনিয়ন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন বাংলানিউজের পাওনা বঞ্চিত সাংবাদিকদের পাশে আছে জানিয়ে আবু জাফর সূর্য বলেন, আন্দোলন করেই ইতোমধ্যেই বন্ধ করে দেওয়া কয়েকটি মিডিয়ার সংবাদকর্মীদের ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদ অনুসারে চাকরিকালীন সমস্ত পাওনা ও বকেয়া বেতন-ভাতাদি পরিশোধে মালিকপক্ষকে বাধ্য করা হয়েছে। এবারও বাংলানিউজের মালিক প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপকে পাওনা পরিশোধে বাধ্য করা হবে। সাতদিনের মধ্যে এবং ঈদের আগেই পাওনা না দেওয়া হলে আরো কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার হুশিয়ারিও উচ্চারণ করেন তিনি।

পাওনা বঞ্চিত সাংবাদিকদের নিয়ে প্রয়োজনে বসুন্ধরা গ্রুপের ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের সামনে অবস্থান নিয়ে দাবি আদায় করা হবে বলে মানববন্ধনে হুশিয়ারি দেন বিএফইউজের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব অমিয় ঘটক পুলক। তিনি বলেন, এ গ্রুপের ছয়টি মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এর আগেও আন্দোলন করে কয়েকটি থেকে সাংবাদিকদের ন্যায্য পাওনা বুঝিয়ে দিতে বাধ্য করা হয়েছে। এবারও হবে। আমরা চাই না, বাংলানিউজের সাংবাদিকদের আর একদিনও ন্যায্য অধিকার পেতে রাস্তায় দাঁড়াতে হোক। কিন্তু তা করতে হলে কঠোর হওয়া ছাড়া আমাদের উপায় থাকবে না।

বিএফইউজের সাবেক সদস্য খায়রুজ্জামান কামাল বলেন, আমরা জানি, সাংবাদিকবান্ধব একটা শিল্পগ্রুপ। সাংবাদিকদের কল্যাণে তারা অনেক কিছু করেছে। অনেক সাংবাদিককে তারা সহযোগিতা করেছে। আমাদের মনে হচ্ছে, বাংলানিউজের সাংবাদিকদের ব্যাপারে তাদেরকে কেউ মিসগাইড করছে। আমরা প্রত্যাশা করব, আগামী ৭ দিনের মধ্যে বাংলানিউজ সাংবাদিকদের সমুদয় পাওনা বুঝিয়ে দেবে বসুন্ধরা গ্রুপ। অন্যথায় সাংবাদিকরা আরো কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।’

ডিইউজের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেন বলেন, প্রয়োজনে ঈদের দিনও আমরা রাস্তায় দাঁড়াবো। ২৫/৩০ জন সাংবাদিক ন্যায্য পাওনা না পেয়ে ঈদের আনন্দ বঞ্চিত হবেন, তা হতে পারে না। বাংলানিউজের সাংবাদিকদের পাওনা পরিশোধে বসুন্ধরা গ্রুপকে বাধ্য করতে প্রধানমন্ত্রীসহ শীর্ষ কর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

সাংবাদিকের পাওনা বুঝিয়ে দিতে সমস্যা কোথায়? অনতিবিলম্বে সমুদয় পাওনা বুঝিয়ে না দিলে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।’

পাওনা বঞ্চিত সাংবাদিকদের এই মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন বাংলানিউজের সাবেক চিফ অব করেসপন্ডেন্ট আহমেদ রাজু। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বাংলানিউজের সাবেক সিনিয়র স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট মান্নান মারুফ।

(বিজ্ঞপ্তি/এসপি/জুন ০৭, ২০১৮)