বাগেরহাট প্রতিনিধি : কেন্দ্রীয় ছাত্রদল থেকে বাগেরহাটে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের আংশিক নতুন জেলা কমিটি ঘোষণার পর খোদ ছাত্রদলের নতুন ও পুরানো নেতাদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। 

বুধবার সন্ধ্যায় ছাত্রদলের পদ বঞ্চিত ক্ষুব্দ নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করে জেলা বিএনপি’র সভাপতি এম এ সালামের কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে। রাজনীতির মাঠে ভূমিকা নেই এমন ছেলেকে এই কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ায় দলের পদ বঞ্চিতরা হতাশ ও বিষ্মিত হয়েছেন। নতুন ঘোষিত কমিটির দুই ক্ষুব্দ নেতা ইতিমধ্যে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। পদ বঞ্চিত দলের নেতা ও সাবেক নেতারা এই কমিটিকে জেলা বিএনপি’র সভাপতি এম এ সালামের পকেট কমিটি বলে আখ্যায়িত কওে প্রত্যখ্যান করেছেন। তারা অবিলম্বে ঘোষিত কমিটি বাতিল করে যোগ্য নেতাদের নিয়ে কমিটি করার দাবি তুলেছেন। তবে জেলা বিএনপি’র সভাপতি এম এ সালাম ছাত্রদলের বর্তমান ও সাবেক নেতাদের করা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

সর্বশেষ ২০১২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারী মোল্লা সুজাউদ্দিন সুজনকে সভাপতি ও নূরে আলম ভূঁইয়া তানুকে সাধারণ সম্পাদক করে বাগেরহাট জেলা ছাত্রদলের ১৮১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘ সাত বছর পর ছাত্রদলের নতুন এই কমিটি ঘোষণা করা হয়। গত ৫ জুন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুনের স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বাগেরহাট জেলা ছাত্রদলের ছয় সদস্যের নাম ঘোষণা করা হয়।

নতুন কমিটিতে সভাপতি পদে ইমরান খান সবুজ, জেষ্ঠ্য সহ সভাপতি পদে মো. গোলাম রসুল তরফদার নেওয়াজ, সাধারণ সম্পাদক পদে আলী সাদ্দাম দ্বীপ, যুগ্ম সম্পাদক পদে দু’জন তালহা মাহী ও শেখ ফয়সাল মোর্শেদ এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আতিকুর রহমান রাসেলকে রাখা হয়েছে। এরমধ্যে সদ্য পদ পাওয়া জেলা ছাত্রদলের জেষ্ঠ্য সহ সভাপতি মো. গোলাম রসুল তরফদার নেওয়াজ এবং সাংগঠনিক সম্পাদক আতিকুর রহমান রাসেল পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।

নতুন কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পাওয়া আতিকুর রহমান রাসেল বলেন, জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ সালামের চাটুকাররা এই কমিটির বড় বড় পদ পেয়েছেন। যোগ্যদের পদ বঞ্চিত করে চাটুকারদের পদ দেওয়া হয়েছে। ছাত্রদলের রাজনীতিকে ‘বাগেরহাটে কবর দিতে’ এই কমিটি করা হয়েছে। আমি পদ থেকে পদত্যাগ চেয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে চিঠি পাঠিয়েছি। সেই সাথে আমি এই কমিটি প্রত্যাখ্যাান করছি।

নতুন কমিটির জেষ্ঠ্য সহ সভাপতি মো. গোলাম রসুল তরফদার নেওয়াজ বলেন, ছাত্রদলের গঠনতন্ত্রকে উপেক্ষা করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখানে তৃণমূলের কোন মতামত নেওয়া হয়নি। তাই কেন্দ্র ঘোষিত এই কমিটিকে আমি প্রত্যাখান করছি। সেই সাথে আমি পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মোরেলগঞ্জ উপজেলার দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন বিএনপির এক নেতা বলেন, এই কমিটির সভাপতি ইমরান খান সবুজের বাড়ি বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার দৈবজ্ঞকাঠি ইউনিয়নের জোকা গ্রামে। তার বাবা হাফেজ আলী খান এবং চাচা খান হাবিবুর রহমানসহ পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগের ঘোর সমর্থক। ভোটের সময় তারা নৌকা প্রতীকে ভোট দেন বলেও দাবী করেন ওই নেতা। এই ইমরান খানের হাতে দলের নেতৃত্ব গেলে ছাত্রদলের রাজনীতি হবে আওয়ামী ঘরানার তা বুঝতে বাকি নেই বলে মন্তব্য ওই নেতার।

জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান জেলা বিএনপি’র সহ ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ফোরকান আহমেদ বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল ঐতিহ্যবাহী একটি সংগঠন। বিগত দিনে বাগেরহাটে এই সংগঠনের দায়িত্ব যারা পালন করেছেন তারা সবাই ছিলেন দলের জন্য নিবেদিত। নতুন যে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে তাদের মধ্যে দুয়েকজন বাদে সবাই অযোগ্য। তৃণমূলের মতামতকে উপেক্ষা করে এই কমিটি দেওয়া হয়েছে। আমার জানা মতে বাগেরহাটে ছাত্রদলের এবারের কমিটি সবচেয়ে বাজে কমিটি যা এরআগে কখনো হয়নি বলে দাবী তার।

৯০ এর দশকের রাজপথ কাপানো জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খাদেম নিয়ামুল নাসির আলাপ বলেন, বিএনপির রাজনীতিতে ছাত্রদল সব সময় রোল মডেল। বিগত দিনে সরকার পতনসহ বিভিন্ন আন্দোলনে ছাত্রদল অগ্রণী ভূমিকা রেখে এসেছে। সেই ছাত্র সংগঠন যদি হয় নেতৃত্বশূন্য তাহলে বাগেরহাটের রাজনীতি হবে মেধাশূন্য। বিএনপি’র বর্তমান জেলা কমিটিকে অযোগ্য নেতৃত্বে পরিপূন্য মন্তব্য করে ওই নেতা আরও বলেন, এই নেতৃত্বের কাছে অযোগ্যরা যোগ্য হবে এটাই স্বাভাবিক। তাই ছাত্রদলের যে নতুন কমিটি কেন্দ্র ঘোষণা করেছে তা বাতিল করে যোগ্যদের নেতৃত্বে আনার দাবী জানিয়েছেন তিনি।

জেলা ছাত্রদলের সাবেক জেষ্ঠ্য সহসভাপতি ও মোল্লাহাট উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান শেখ হারুণ অর রশিদ বলেন, নতুন কমিটি দেখে আমি বিষ্মিত হয়েছি। এদের হাতে নেতৃত্ব গেলে ছাত্রদল তার পুরানো গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাস হারাবে। ছাত্রদলকে সংগঠিত করার সেই সাংগঠনিক যোগ্যতা এই কমিটির নেই। তাই এই কমিটি বাতিল করে নতুন যোগ্যদের নিয়ে কমিটি করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

জেলা ছাত্রদলের সদ্য বিদায়ী সভাপতি মোল্লা সুজাউদ্দিন সুজন বলেন, বাগেরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ সালাম তারেক রহমানের নির্দেশ উপেক্ষা করে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটিকে অবৈধ অর্থ দিয়ে ম্যানেজ করে তিনি তার আজ্ঞাবহ কমিটি এনেছেন বলে দাবি করেন ওই নেতা।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, এই কমিটির নেতৃত্ব যাদের হাতে দেওয়া হয়েছে তারা ছাত্রদলের ওয়ার্ড কমিটিতেও থাকার যোগ্য নয়। সুতরাং এরা আগামীতে ছাত্রদলের কি নেতৃত্ব দেবে তার প্রশ্ন বিএনপির কাছে ?

এ বিষয়ে কথা বলতে ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটির সভাপতি ইমরান খান সবুজ এবং সাধারণ সম্পাদক আলী সাদ্দাম দ্বীপের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

ছাত্রদলের নব গঠিত কমিটি সম্পর্কে জানতে চাইলে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ অস্বীকার করে বাগেরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ সালাম বলেন, আমি সম্প্রতি জেলা কমিটি করতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সাত সদস্যের নামের একটি তালিকা পাঠিয়েছি মাত্র। ছাত্রদলের কমিটি গঠনে আমার কোন হাত নেই। যারা এই কমিটির বিরোধীতা করে বিদ্রোহ করছেন তারা দলের বন্ধু হতে পারে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

(এসএকে/এসপি/জুন ০৭, ২০১৮)