ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : চলতি ২০১৭-১৮ আখ রোপণ মৌসুমে ঈশ্বরদীতে স্মরণকালের অতিবৃষ্টিতে পাবনা সুগার মিল জোন এলাকার আওতাধীন প্রায় ২০০ একর জমির আখ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। জলাবদ্ধতায় আখ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় ঋণগ্রস্থ ৩০০ জন চাষি চরম বিপাকে পড়েছেন। 

পাবনা সুগার মিল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মিল সূত্রে জানা যায়, চলতি ২০১৭-১৮ আখ রোপণ মৌসুমে মিল জোন এলাকায় চার হাজার পাঁচ একর জমিতে আখ চাষ করা হয়। এর প্রায় ৬০ ভাগই নামলা। সেপ্টেম্বর হতে ডিসেম্বর পর্যন্ত আখ রোপনের উপযুক্ত সময় হলেও জমি খালি না থাকায় অধিকাংশ জমিতে নামলা ফেব্রুয়ারি ও মার্চে আখ রোপণ করা হয়। নামলা আখের চারা গজানোর পরই শুরু হয় অসময়ের বৃষ্টি। এতে আখের গোড়ায় পানি জমে আখ মারা যায়। এছাড়াও জমিতে ব্যাপক আগাছা তৈরী হয। জলাবদ্ধতার কারণে এই আগাছা পরিস্কার বা জমির পরিচর্যা করা সম্ভব না হওয়ায় এবারে আখ চাষে ধ্বস নেমে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, জলবাযু পরিবর্তনে বৈরী পরিবেশের কারণে বিগত ২৬শে মার্চ হতে ২৯শে মে পর্যন্ত অব্যাহতভাবে ২২ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত হয়।

আবহাওয়া অফিস জানায়, বিগত ৩০ বছরের মধ্যে ঈশ্বরদীতে অসময়ে এই পরিমাণ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড নেই। পাবনা সুগার মিল জোন এলাকায শুক্রবার সরেজমিনে মিলগেট, মুলাডুলি, ঈশ্বরদী ও আটঘরিয়া এলাকায় অসময়ের অতিবৃষ্টিতে আখের জমিতে জলাবদ্ধতা দেখা যায়।

এ ব্যপারে বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনসস্টিউটের বিজ্ঞানী ড. সমজিত কুমার পাল জানান, আখের জমিতে পানি জমলে আখের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তবে নামলা চাষ করা হলে এবং অসময়ের অতিবৃষ্টিতে আখের রোপণকৃত চারা ডুবে গেলে এধরণের প্রতিকূলতা সৃষ্টি হতে।

মিল কর্তৃপক্ষ জানান, ক্ষতিগ্রস্থ চাষীদের আখ চাষের জন্য পাবনা সুগার মিলের ঋণ দেয়া আছে।

মুলাডুলি সাবজোনের ইসলামপুর ইউনিটের আখচাষী আব্দুল আজিজ জানান, জীবনে এতো বৃষ্টি দেখিনি। সুগার মিল হতে ঋণ নিযে ০.৩০ একর জমিতে আখ রোপণ করেছিলাম। মার্চ-এপ্রিলের অতিবৃষ্টিতে আমার জমির সমস্ত আখ বিনষ্ট হয়েছে।

ঈশ্বরদী সাবজোনের ইস্তা ইউনিটের আখচাষি বজলার রহমান জানান, কিশোর বয়স হতে আমি আখ চাষের সাথে জড়িত। পাবনা চিনিকলের নিয়মিত আখচাষী। জমিতে আখের অংকুরোদম ভালই ছিল। অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় ১ একরের চারা এবং ১ একর মুড়ি আখ সম্পূর্ণই বিনষ্ট হয়েছে। তিনি ক্ষতিপূরণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।

মুলাডুলির পাতিলাখালির কৃষক জহির উদ্দিন জানান, ৪০ বছরে এতো বৃষ্টি দেখিনি। শ্রাবণ-ভাদ্র মাসের বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে আখের ক্ষতি হয়না। তখন আখ বড় হয়ে যায়। ঋণ নিয়ে ০.৩৩ জমিতে আখ চাষ করেছিলাম। আবাদতো নষ্ট হলো। মাাথার উপর রয়েছে মিলের ঋণের বোঝা। ঋণের টাকা কিভাবে শোধ করব এই নিয়ে পড়েছি বিপাকে।

এই প্রতিকূল অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন প্রায় দুই শতাধিক কৃষক। একদিকে আখের আবাদ বিনষ্ট, আরেকদিকে সুগার মিলের ঋণের বোঝা। দিশেহারা কৃষকরা এখন কিভাবে সঙকট হতে পরিত্রাণ পাবে তার পথ খুঁজে পাচ্ছে না। এই অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্থ আখ চাষীরা সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণের দাবী জানিয়েছেন।

(এসকেকে/এসপি/জুন ০৮, ২০১৮)