রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি : আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে সবাই কেনাকাটায় আর জমে উঠেছে নওগাঁর রাণীনগরের বিভিন্ন এলাকায় ঈদ বাজার। এবার ক্রেতাদেরকে একটু আগে থেকেই ঈদের কেনাকাটা করতে দেখা যাচ্ছে। এর কারণ হিসাবে অনেক ক্রেতারা জানায়, ঈদের কেনাকাটা তো কম বেশি করতেই হবে তাই প্রথমেই দেখেশুনে কেনার সময় বেশ ভালো পাওয়া যায়। তাই একটু আগে থেকেই সচেতন ক্রেতারা কেনাকাটা শুরু করেছেন।  

বর্তমানে রাণীনগরের প্রতিটি মার্কেট ও বিপণী বিতান গুলোতে দেখা গেছে ঈদের আমেজ। সব দোকানেই ক্রেতার সমাগম লক্ষ্য করা গেছে। পাশাপাশি আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছে দর্জিপাড়ার কারিগররা। অনেকেই আবার ঈদের কেনাকাটার ভিড় জমার আগেই দর্জির দোকান গুলোতে পছন্দমতো কাপড় কিনে তৈরি করতে দিচ্ছেন বিভিন্ন পোশাক।

রাতভর সেলাই মেশিনের শব্দে সমাগম হয়ে থাকছে টেইলার্স পট্টিগুলো। কিছু কিছু টেইর্লাসের দোকানে সাইনবোর্ড ঝুলছে ‘ঈদের শেষ আটদিন কোনো অর্ডার নেয়া হবে না’। ছোট থেকে শুরু করে ভিআইপি দোকানের কারিগররা এখন দিনরাত ব্যস্ত। দম ফেলার সময় নেই তাদের। তবে গতবারের চেয়ে এবার প্রতিটি কাপড়ের দোকান গুলোতে দেখা যাচ্ছে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। এছাড়া শাড়ির দোকান গুলোতেও রয়েছে সমান ভিড়। শাড়ি ও তার সাথে ম্যাচ করে অন্যান্য জিনিসপত্র কেনার জন্য সবাই এখন ব্যস্ত।

এবারে ঈদে বিভিন্ন মেগা সিরিয়ালে নায়িকাদের পরিহিত পোশাকের নামের পোশাক গুলোর চাহিদা তরুণীরা বেশি ক্রয় করছে বলে বিভিন্ন দোকানীরা জানান। সবাই এই ঈদে দেশি-বিদেশি কাপড় কেনায় বেশি ব্যস্ত। এলাকার বিভিন্ন কাপড়ের দোকানে দেখা গেছে, দেশি-বিদেশি থ্রি পিস কেনার জন্য মেয়েদের উপচেপড়া ভিড়।

অপরদিকে সুযোগ হাতে পেয়ে দর্জিপাড়ার লোকেরা সময় নেই এবং কাজের অনেক ভিড় বলে দ্বিগুণ পারিশ্রমিকে অর্ডার নিতে বাধ্য হচ্ছেন। প্যান্ট ও শ্যার্ট পিস থেকে শুরু করে থ্রি-পিস, শাড়ি এবং তৈরি পোশাকের প্রতিটির মূল্য গতবারের চেয়ে এবার হাতের নাগালে আছে বলে অনেক অভিভাবকরা জানান।

প্রতিটি ম্যার্কেট ও কসমেটিক্স বিপণী বিতান গুলোতে প্রচন্ড ভিড় লক্ষ্য করা গেলেও বেশি দামের জন্য পছন্দের জিনিস অনেকেই নিতে পারছে না। রাণীনগরের বাজার মার্কেট, উপজেলা মার্কেট, আবাদপুকুর মার্কেট, কুজাইল মার্কেট ও বেতগাড়ী মার্কেট গুলো ঘুরে দেখা যায় এবারও মার্কেট গুলোতে বিদেশি কাপড়ে সয়লাব।

ভারত, পাকিস্তানি, চীন, জাপান, কোরিয়ার প্যান্ট ও শ্যার্ট পিস এবং ভারতীয় থ্রি-পিসে বাজার ভরে গেছে। দোকানিরা বলছে এগুলো বৈধভাবে আমদানী করা হয়েছে। ভারতীয় থ্রি-পিস গুলোর বেশির ভাগেরই নাম ভারতীয় ছবির নায়ক ও নায়িকাদের নামানুসারে করা হয়েছে। কুপনের মাধ্যমে সেরা বিজয়ীদের জন্য রাখা হয়েছে বিভিন্ন আকর্ষণীয় পণ্যসহ বিভিন্ন অফার।

আকর্ষণীয় অফারে অনেকেই ছুটছেন সেই সব বিপণী বিতাণ গুলোতে। বিভিন্ন মার্কেটে ঈদ বাজার করতে আসা মামুন সরকার, রিতু আক্তার, সুমি বানু, রানা হোসেন, শিউলী আক্তারসহ বেশ কয়েক জনের সাথে কথা হলে তারা জানান, প্রতি বছরের তুলনায় এবার একটু আগেই ঈদের কেনাকাটা শুরু করেছি। কারণ শেষ সময়ের দিকে তেমন একটা ভালো জিনিস পাওয়া যায় না। তাই আগেই পরিবারের পছন্দ মতো কেনাকাটা করে রাখার জন্য মার্কেটে এসেছি। এবার থ্রি-পিসসহ ছেলেদের প্যান্ট ও শ্যার্টের দাম খুবই চড়া। তাই কাপড় কিনে বানাতে দিয়েছেন। তবে মজুরি একটু বেশি।

রাণীনগর বাজারের এশিয়া টেইর্লাসের মালিক বিপ্লব জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এই বছরে ধানের দাম না থাকায় কৃষি প্রধান এই এলাকায় কৃষকরা নায্য মূল্যে ধান বিক্রয় করতে না পারায় অনেকেই পর্যাপ্ত পরিমাণে কেনাকাটা করতে পারছে না বলে চাপটা অনেকটাই কম। তবুও এবার শেষ সময়ের আগেই কাজের চাপ অন্য সময়ের তুলনায় একটু বেশি। লোকজনেরা শেষ সময়ে এসে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তাই কারখানায় কর্মরত কারিগরদের সারা রাতভর কাজ করতে হয় বলে তাদের মজুরিও একটু বেশি দিতে হয় বলে মজুরিটা কিছুটা বেশি নিতে হচ্ছে।

রাণীনগর বাজারের গার্মেন্টস ব্যবসায়ী মো: উজ্জল হোসেন জানান, এবছর শুরুর দিকে অন্যান্য বছরের তুলনায় ক্রেতাদের ভিড় একটু হলেও লক্ষণীয়। আশা রাখি এবার ঈদের পুরো মৌসুমে ক্রেতাদের ভিড়ে ঈদ বাজারের কেনাকাটা জমে উঠবে। এতে করে ব্যবসায়ীরা অন্য বছরের তুলনায় এবার লাভের মুখ একটু হলেও বেশি দেখবেন বলে তিনি আশাবাদী।

(এসকেপি/এসপি/জুন ০৮, ২০১৮)