রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : মাদক ভাগাভাগির সাজানো নাটক সাজিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে বাড়ি থেকে চোঁখ বেঁধে তুলে এনে এক দিনমজুরকে গুলি করে হত্যার বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে এ সংবাদ সম্মেলন করেন সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামের নিহত আনিছুর রহমানের স্ত্রী নাজমা খাতুন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নাজমা খাতুন বলেন, দেড় কাঠা জমিতে ঘরবাড়ি বানিয়ে তারা বসবাস করছেন। স্বামী আনিছুরই ছিল সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। বর্তমানে তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তারা পড়াশুনা করছে। তার স্বামী নদীতে মাছ ধরে ও নিজস্ব ছোট একটি ঘেরে মাছ চাষ করে সংসার চালাতো। তার স্বামীকে গ্রেফতার করার কথা বলে কয়েকদিন বাড়িতে এসে হুমকি দিয়ে যায় খোরদো পুলিশ ফাঁড়ির সহকারি উপপরিদর্শক এজাজ মাহমুদ।

গত ২৭ মে রবিবার দুপুরে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বাড়িতে এসে তার স্বামীকে যেখানে পাবেন সেখানে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে যান। রাতে দেয়াড়া বাজার থেকে বাড়ি ফেরার সময় ওই দারোগা তিন হাজার টাকা নেন তার স্বামীর কাছ থেকে। ২৮ মে সোমবার আনুমানিক সকাল সাড়ে ৯টার দিকে খোরদো পুলিশ ফাঁড়ির সহকারি উপপরিদর্শক এজাজ মাহমুদ ও সহকারি উপপরিদর্শক তরিকুল ইসলামসহ চারজন সাদা পোশাকে দু’ টি মোটর সাইকেলে তাদের বাড়িতে আসে। ঘরের মধ্যে শুয়ে থাকা আনিছুরকে তারা হাতকড়া পরিয়ে বাইরে নিয়ে এসে সাদা স্যাণ্ডো গেঞ্জি দিয়ে চোখ বেঁধে একটি মোটর সাইকেলে তুলে নিয়ে চলে যায়। চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্যপাড়ার ও খোরদো বাজারের অনেকেই দেখেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, ২৮ মে সকাল ১০টার দিকে তারা খোরদো ক্যাম্পে গেলে আনিছুরকে ধরে আনা হয়নি বলে জানানো হয়। পরে কলারোয়া থানায় গেলে তার সন্ধান দিতে পারেনি পুলিশ। বিকেল ছয়টা পর্যন্ত সম্ভাব্য সকল জায়গায় সন্ধান না পেয়ে কলারোয়া রিপোর্টার্স ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করতে যান। পরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতির কাছে এলে তিনি সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরী করার পরামর্শ দেন। ২৮ মে রাত আনুমানিক রাত সাড়ে ৯টার দিকে কলারোয়া থানায় গেলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার নাথ তা না নিয়ে ২/৩ দিন অপেক্ষা করতে বলেন। সেখান থেকে বাড়ি ফিরে তারা রাত ১২টার দিকে আবারো থানায় গেলে ভিতরে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। ফলে তারা বাড়ি ফিরে আসেন। ২৯ মে মঙ্গলবার সকালে সাংবাদিকদের কাছ থেকে মোবাইল ফোনে তার স্বামীর মৃত্যুর খবর পান।

সে অনুযায়ী কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেয়ে না পেয়ে থানায় আসার পর আনিছুরের গুলিবিদ্ধ লাশ দেখতে পান। পুলিশ মাদক ব্যবসার মাল ভাগাভাগি নিয়ে দু’ পক্ষের সংঘর্ষের নাটক সাজিয়ে আনিছুরকে পরিকল্পিতভাবে গুলি করে হত্যা করেছে। পরিবারের একমাত্র আয়ক্ষম ব্যক্তিকে হত্যা করে তার সংসার ও দু’ সন্তানের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। তার স্বামী কোন অপরাধী হলে তাকে আইনের আওতায় নিয়ে এসে প্রচালিত আইনে বিচার করা যেতো। তা না করে পুলিশ মানবাধিকার লঙ্ঘন করে যে ধরণের বিভষ্য হতাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে তা মেনে নেওয়া যায় না।

সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ ধরণের অমানবিক ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রিসহ প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। একই সাথে সংবাদ সম্মেলনের কারণে তাদেরকে যেন কোন প্রকার পুলিশি হয়রানি করা না হয় সেজন্য সাংবাদিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত আনিছুরের ভাই অজিহার রহমান, তার স্ত্রী ফরিদা খাতুন, আনিছুরের সদ্য এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছেলে আলী হোসেন রিয়াজ,মেয়ে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী রিমা খাতুন।

(আরকে/এসপি/জুন ০৮, ২০১৮)