উত্তম গোলদার, মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী) : জীবনের শুরুতেই দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই যেন তার নিয়তি। নুন আনতে পান্তা ফুরানোসহ নানা প্রতিকূলতার মধ্যেদিয়ে সংগ্রাম করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখেন পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার চরখালী সমবায় মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মানবিক শাখায় এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বিদ্যালয়ের একমাত্র জিপিএ -৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী মোসাম্মৎ আহ্নি আক্তার।

এটা তার কঠোর সাধনা ও পরিশ্রমের ফসল। চরখালী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেনী ও চরখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিসহ এসএসসিতে ভালো ভালো ফলাফলে উচ্ছাস থাকলেও উচ্চ শিক্ষার ব্যয় কীভাবে বহন করবে, সে চিন্তায় দিশেহারা চরখালী গ্রামের রিক্সাচালক পিতা মোঃ আবদুর রশীদ মিয়াসহ তার গোটা পরিবার।

আবদুর রশিদ বলেন, চার ছেলে, দুই মেয়েস্ত্রীকে নিয়ে আবদুর রশিদ মিয়ার ৮ সদস্যের সংসারে বড় ছেলে টিউবয়েল শ্রমিক ও তার নিজের রিক্সা চালিয়ে উপার্জিত অর্থে কোন রকম সচল রেখেছে সংসার চাকা। মাতা মাকসুদা বেগম একজন গৃহিনী। আহ্নি’র বড় ভাই ৬ষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করে বোনের স্বপ্ন
পূরনে লক্ষ্যে নিয়ে বাবার মতো টিউবয়েল শ্রমিক হিসেবে শ্রম বিক্রি শুরু করেন। এমনকি আমার মেয়ে প্রতিদিন খেয়ে স্কুলে আসতে পারতো না অভাবের কারনে।

মেধাবী ছাত্রী মোসাম্মৎ আহ্নি আক্তার জানায়, আমি লেখাপড়া করে মানুষের মতো মানুষ হবো। বড় চাকরি করে(ম্যাজিস্ট্রেট) হয়ে বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে চাই। এখন বাবার রিক্সা চালিয়ে উপার্জন ও ভাইয়ের দেয়া কিছু টাকায় কোন মতে চলে সংসার। এতদিন বাবা ও ভাই অতিকষ্টে আমার পড়ার খরচ চালালেও এখন তাদের পক্ষে উচ্চ শিক্ষার খরচ চালানো সম্ভব না। যানি না জিপিএ-৫ পেয়েও ভালো কোন কলেজে ভর্তি হতে পারবো না অর্থের অভাবে। সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতাই আমার স্বপ্ন পূরনের একমাত্র পাথেয়। এ অবস্থায় আহ্নি আক্তার ও তার পরিবার তাকিয়ে আছে সমাজের বিত্তবানদের দিকে, তাদের একটু সহানূভুতিই পারে মেধাবী এই শিক্ষার্থীর আলোকিত হওয়ার স্বপ্ন পূরন করতে।

চরখালী সমবায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ গোলাম মোস্তফা বলেন, চরখালী স্কুল থেকে আহ্নি আক্তার মেধাবী ছাত্রী হওয়ায় বিনা খরচে পড়াশুনা করে জিপিএ-৫ পেয়েছে এবং চরখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মান উজ্জল করেছে। বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকবৃন্দ তাঁর সাফল্যে কামনা করেন।

(ইউজি/এসপি/জুন ১০, ২০১৮)