রূপক মুখার্জি, নড়াইল : দেশে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে অবৈধ অস্ত্রাধারীর সংখ্যা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের ছত্রছায়ায় এসব অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা লালিত-পালিত হচ্ছে। অবৈধ অস্ত্রের বাড়াবাড়ি নিয়ে নির্বাচন কমিশনও শংকিত। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান পরিচালিত হবে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশন।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ অন্যান্য নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, দেশে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা বন্ধসহ অস্ত্রধারীদের একটি তালিকা ও একটি প্রতিবেদন সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৪০টি জেলায় ৪৬৭ জন অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী অপরাধ মূলক কর্মকান্ডে সক্রিয় রয়েছে। এসব অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীদের ইন্ধন যোগাচ্ছে এবং পৃষ্ঠপোষকতা করছে ১৪১ জন রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালী ব্যক্তি। ইন্ধনদাতাদের মধ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগের ১১২ জন, বিএনপির ৭০ জন, জাতীয় পার্টির ৩ জন, ইউপিডিএফের ৯ জন, জেএসএসের ২২ জন, পূর্ব বাংলা কমিউনিষ্ট পার্টির ৭ জন। অস্ত্র কারবারী অথচ কোন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় নেই এমন ২০০ জন অস্ত্র ব্যবসায়ী রয়েছে।

এছাড়া সুবিধাবাদী অস্ত্র ব্যবসায়ী হিসেবে ৩৯ জনের নামও তালিকায় রয়েছে। এদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কিছু অসাধু সদস্যদের সঙ্গে অস্ত্র চোরাকারবারীদের যোগ সূত্র পাওয়া গেছে। এরাই মুলত চোরাচালানী পন্যের সঙ্গে দেশে আগ্নেয়াস্ত্র আনছে। পরবর্তী সময়ে এসব অস্ত্র সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। অস্ত্রধারীরা গ্রেফতার বা আটক হলেও পরে জামিনে ছাড়া পেয়ে ফের অস্ত্র ব্যবসায় লিপ্ত হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদন মতে, অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে ঢাকায় ৪০ জন, ফেনীতে ১২ জন, খাগড়াছড়িতে ৮ জন, রাঙ্গামাটিতে ১১ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫৫ জন, কুমিল্লায় ২০ জন, বান্দরবনে ২৬ জন, কক্সবাজারে ২০ জন, সাতক্ষীরায় ১৫ জন, নারায়নগঞ্জে ১৪ জন, মেহেরপুরে ১৮ জন, টাঙ্গাইলে ১৫ জন, ফরিদপুরে ৪ জন, রাজবাড়িতে ৮ জন, গোপালগঞ্জে ৫ জন, শেরপুরে ১৩ জন, সিলেটে ১০ জন, সুনামগঞ্জে ৮ জন, হবিগঞ্জে ৮ জন, নেত্রকোনায় ১০ জন, যশোরে ১১ জন, খুলনায় ৫ জন, ঝিনাইদহে ৪ জন, নড়াইলে ৬ জন, চুয়াডাঙ্গায় ১৩ জন, কুষ্টিয়ায় ১১ জন, রাজশাহীতে ১২ জন, নাটোরে ৬ জন, নওগাঁয় ২জন, জয়পুরহাটে ১৫ জন, বগুড়ায় ৬জন, রংপুরে ৪ জন, লালমনিরহাটে ৫ জন ও দিনাজপুরে ৯ জন।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, তদন্তের দায়িত্বে থাকা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় দূর্নীতিবাজ সদস্য এসব অবৈধ অস্ত্রধারীদের সহযোগিতা করছে।

প্রতিবেদনে অবৈধ অস্ত্র আমদানির রুট গুলোও চিহ্নিত করা হয়েছে। দেশে সব চেয়ে বেশি অবৈধ অস্ত্র আসছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও কুষ্টিয়া সীমান্ত এলাকা দিয়ে। রাজশাহীর গোদাগাড়ী, চারঘাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট, শিবগঞ্জ, নওগাঁ জেলার ধামাইরহাট, পত্মীতলা সীমান্ত দিয়ে দেশে অবৈধ অস্ত্র প্রবেশ করছে।

(আরএম/এসপি/জুন ১০, ২০১৮)