স্টাফ রিপোর্টার : সাধারণ মানুষকে অনিয়মের মাধ্যমে বিদেশে পাঠিয়ে বিপদে ফেলার অভিযোগ পাওয়া গেলে দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি। তিনি বলেন, দালালদের নিবৃত করা না হলে এই ঘটনা (প্রবাসে নির্যাতনের) আরও বৃদ্ধি পাবে।

মঙ্গলবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন দফতর ও সংস্থার সঙ্গে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) এবং নিরাপদ অভিবাসন বিষয়ক সচেতনতামূলক তথ্যচিত্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন মন্ত্রী। রাজধানীর ইস্কাটনে প্রবাসী কল্যাণ ভবনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

গত কয়েক দিনে সৌদি আরব থেকে বিপুল সংখ্যক নারী নির্যাতিত হয়ে ফিরে এসেছেন- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মন্ত্রী বলেন, ‘বিশাল নয়, বিশাল আপনারা করেছেন। এক লাখ থেকে যদি ৩ হাজার চলে আসে তাকে বিশাল বলা যাবে না। সুতরাং যারা আসছে তারা কেন আসছে- সেটা আগে খতিয়ে দেখেন, খতিয়ে দেখার পর আমরা এটার উত্তর দেব।’

নুরুল ইসলাম বলেন, ‘দালালের খপ্পরে পড়ে বিভিন্ন পর্যায়ে যারা যায়, যেমন সৌদি আরব থেকে গতকাল ও পরশু অনেক মহিলা ফেরত এসেছে। এরা কিন্তু আমাদের মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যায়নি। গেছে দালালের খপ্পরে পড়ে এবং দালাল কিছু কমিশন পেয়েছে, পাঠিয়ে দিয়েছে। পাঠানোর পরিপ্রেক্ষিতে সে চাকরি না পেয়ে আশ্রয় শিবিরে গেছে এবং আশ্রয় কেন্দ্র থেকে তাকে রিপ্যাট্রিয়েট করে আমাদের এখানে আনতে হয়েছে। এতে আমাদের যন্ত্রণা আরও বেড়ে যায়।’

দালালদের উদ্দেশে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা কেন দালালি করে এসব মানুষকে কষ্ট দেন? এই যারা কষ্ট পাচ্ছে তারা তো আমাদের দেশেরই মানুষ, আপনারাদেরই পরিচিত লোক।’

তিনি বলেন, ‘এদের (দালাল) পরিহার করতে হবে, এদের চিহ্নিত করতে হবে, এদের নিবৃত করতে হবে। যদি চিহ্নিত নিবৃত করা না যায় তবে এই ঘটনা আরও বৃদ্ধি পাবে, আমাদের মহিলারা আরও কষ্ট পাবে এবং এই কষ্টের সীমা সহ্যের সীমা অতিক্রম করতে পারে।’

‘যারা বিদেশে লোক পাঠানোর কাজ করছেন, আপনারা করেন। কিন্তু ঠিকভাবে করেন, সত্যিকার অর্থে করেন। যেখানে চাকরি আছে ওখানে পাঠান। যেখানে অত্যাচার নির্যাতন নেই ওখানে পাঠান। কিন্তু শুধু শুধু কোনো চাকরি নেই কিছু নেই ওখানে পাঠিয়ে দিয়ে মানুষকে কষ্ট দেবেন না।’

প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আগামীতে এরকম কোনো তথ্য পেলে, অভিযোগ পেলে আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেব। প্রয়োজনে পুলিশি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত বছর সাড়ে ১১ লাখ/১২ লাখের মতো মানুষকে বিদেশে চাকরি দিতে সক্ষম হয়েছি। আমরা একটুখানি বাধা সৃষ্টি করলে...আমরা মন্ত্রণালয় কর্মীরা এই কাগজ নেই, ওই কাগজ নেই, এটা দাও, সেটা দাও... যদি ঘোরাঘুরি করাত তবে এটা নেমে অর্ধেক হয়ে যেত। কিন্তু আমরা করিনি, আমাদের লোকজন করেনি। কেন করেনি? আমাদের প্রত্যেকের একটা স্পিরিট আছে। বিদেশে আমাদের লোকজজন যাক, আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা আহরিত হোক। বৈদেশিক মুদ্রা আসলে আমার অর্থনীতির চাকা সচল হবে। উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হবে। এজন্য আমরা কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করেছি, চারিত্রিকভাবে দৃঢ় স্থানে নিয়ে গেছি।’

অনুষ্ঠানে আগামী একবছরে (২০১৮-১৯) কী কাজ করা হবে তা বেধে দিয়ে বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল), ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড এবং জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) সঙ্গে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি হয়েছে। চুক্তিতে প্রবাসী কল্যাণ সচিব নমিতা হালদার ও সংস্থা প্রধানরা স্বাক্ষর করেন।

এ ছাড়া অভিবাসী হতে ইচ্ছুকরা যাতে প্রতারণার শিকার না হন সেই লক্ষে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়েছে নিরাপদ অভিবাসন বিষয়ক সচেতনতামূলক তথ্যচিত্র। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী তথ্যচিত্রটি উদ্বোধন করেন।

তথ্যচিত্রটি বিশ্বকাপ খেলার সময় বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে দেখা যাবে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়েছে।

(ওএস/এসপি/জুন ১২, ২০১৮)