মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : রাজনগরে সুদের পাওনা টাকার জন্য বসত ঘরে ঢুকে হামলার শিকার হয়েছেন দিলোয়ারা বেগম (৩০) নামের এক গৃহবধূ ।

হামলার শিকার ঐ গৃহবধূর স্বামীর নাম জয়নাল মিয়া। তিনি রাজনগর উপজেলার ৪নং পাঁচগাও ইউনিয়নের পৈতুরা গ্রামের বাসিন্দা বলে সূত্রে জানা গেছে। রাজনগর থানায় দায়ের করা অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার (১০জুন) দুপুর ১টার দিকে ২বছর পূর্বের ৫০০শত টাকা পাওনা টাকার উপর সুদ মিলিয়ে ২ হাজার টাকা দাবী করেন বিবাদী আয়রণ মিয়া ও তার ভাই আরজু মিয়া।

এসময় দিলোয়ারা বেগমের বসতঘরে ঢুকে বিবাদী আয়রণ মিয়া ও তার ভাই দাদন ব্যবসায়ী আরজু মিয়া সুদের ২ হাজার টাকা দেয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে । এক পর্যায়ে দিলোয়ারা বেগম ১হাজার টাকা দিতে চাইলে বিবাদীগন ১হাজার টাকা নিতে অস্বীকার করায় দিলোয়ারা বেগমকে দুই ভাই মিলে লাঞ্চিত করেন এবং তার শ্লিতাহানীর চেষ্টা করেন। এই ঘটনায় আয়রণ মিয়া ও তার ভাই আরজু মিয়াকে বাদী করে রাজনগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন গৃহবধু দিলোয়ারা বেগম। মামলা নং (১৫ জিআর-১৩৯/১৮)

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে রাজনগর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) দিপক চন্দ্র দাশ জানান, পৈতুরা গ্রামে সুদের পাওনা টাকা নিয়ে আরজু মিয়া ও তার ভাই আয়রণ মিয়ার সাথে একই গ্রামের দু-পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবত দন্দ চলে আসছিল, এর জেরে ঐ গ্রামের দিলোয়ারা বেগম বাদী হয়ে আরজু মিয়া ও তার ভাই আয়রণ মিয়ার বিরুদ্ধে রাজনগর থানায় একটি মামলা দায়ের হলে গভীর রাতে মামলা করার কারনে ক্ষিপ্ত হয়ে আরজু মিয়া ও তার ভাই আয়রণ মিয়া দিলোয়ারা বেগমের বাড়িতে হামলা চালায়। তিনি বলেন এই ঘটনায় পুলিশ আসামীদের ধরতে তৎপর রয়েছে।

রাজনগর থানা সূত্রে জানা গেছে, এই ঘটনার পরদিন রাতে আরজু মিয়ার চাচাত ভাই দিলওয়ার মিয়া বাদী হয়ে ১৪জনকে আসামী করে রাজনগর থানায় পাল্টা আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং (১৮ জিআর-১৪১/১৮) । এসব হামলা মামলা ও পাল্টা মামলার ঘটনায় পৈতুরা গ্রামে আতঙ্ক বিড়াজ করছে বলেও জানা গেছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, দিলোয়ারা বেগমের কাছে পাওনা সুদের টাকাকে কেন্দ্র করে মামলার ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে আরজু মিয়া ও তার ভাই আয়রণ মিয়ার নেতৃত্ত্বে ১৫-২০ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল রবিবার গভীর রাত ৩টার দিকে দিলোয়ারা বেগমকে লাঞ্চিত করার ঘটনায় মধ্যস্থতা করতে আসা পৈতুরা গ্রামের দিলোয়ারা বেগমের পাশের বাড়ীর লোকজনের উপর হামলা চালায়।

হামলার ঘটনায় মখদুছ মিয়া (৪৫), শওকত মিয়া (৩২), আলামত মিয়া (৩০) , কালাম মিয়া (২৮) , শামীম মিয়া (১৯) , জুবেল মিয়া (১৮) , নাসির মিয়া (১৭) , জয়নুল মিয়া (১৯) ও মাসুক মিয়া সহ মোট ৯জন আহত হন। এসব ঘটনায় এপর্যন্ত রাজনগর থানায় মোট ৩টি মামলা দায়ের হয়েছে বলে সূত্র জানায়। তবে এলাকাবাসী জানান, আরজু ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে রাজনগর থানায় সর্বশেষ আলাদা দুটি মামলা দায়ের হলেও এখন পর্যন্ত রাজনগর থানা পুলিশ আসামীদের ধরতে তেমন কোন তৎপরতা নেই বললেই চলে।

এদিকে আরজু মিয়ার বিরুদ্ধে দাদন ব্যবসা, ইয়াবা ব্যবসায় সংশ্লিষ্টতা, প্রেমের ফাঁদ পেতে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে নারী ধর্ষণ সহ রাজনগর ও ফেন্সুগঞ্জ থানায় রয়েছে নানান অভিযোগে আলাদা আলাদা মামলা । এসব মামলায় তাঁকে কখনো পুলিশ গ্রেফতার না করতে পারাটা রহস্যজনক মনে করছেন এলাকাবাসী।

স্থানীয় পাঁচগাঁও ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি জুনেদ হোসেন কুটি মুঠোফোনে এপ্রতিবেদককে বলেন, আরজু মিয়ার কোন রাজনৈতিক পরিচয় না থাকলেও সে বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে বিএনপির লোকদের সাথে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকলে আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতাদের সাথে সখ্যতা তৈরি করে এসব অপকর্ম চালায় ।

অপর দিকে সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালের দিকে রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি জুনেদ হোসেন কুটি মিয়ার হাত কাটার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসামী হয় আরজু। ২০১১ সালের দিকে শাহেনা আজিজ নামে এক নারীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্র্ষন করে আরজু মিয়া। ঐ সময় এ নারী বাদী হয়ে ফেন্সুগঞ্জ থানায় আরজু মিয়ার বিরুদ্ধে মামলা মামলা দায়ের করেন । মামলা ( নং-১৩,২০১১ইং)। ২০১৬ সালের দিকে পূনরায় শাহেনা আজিজ কে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে আরজু মিয়া। পূনরায় আবার বাদী হয়ে ফেন্সুগঞ্জ থানায় মামলা করেন শাহেনা আজিজ (মামলা নং-১৬ তারিখ ২৯/০৬/২০১৬ইং) । বর্তমানে ইয়াবা ট্যাবলেট বিক্রি ও হেফাজতে রাখার অপরাধে রাজনগর থানা পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা (মামলা নং ৩৭) করেন।

এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত আরজু মিয়ার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে , তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ফোন কেটে দেন।

(একে/এসপি/জুন ১৩, ২০১৮)