স্টাফ রিপোর্টার : অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ গাজীপুর সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং সৎ, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত প্রার্থী নির্বাচনের আহ্বানে নাগরিক সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর উদ্যোগে মানববন্ধন ও পদযাত্রা আয়োজন করা হয়েছে। 

আজ রবিবার সকালে গাজীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধনটিঅনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধন ও পদযাত্রায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ‘সুজন’ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজমুদার। সভাপতিত্ব করেন সুজন গাজীপুর জেলা কমিটির সভাপতি জনাব মুকুল কুমার মল্লিক।

এছাড়া সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী জনাব দিলীপ কুমার সরকার, সুজন গাজীপুর মহানগর কমিটির সভাপতি মনিরুল ইসলাম রাজীব, ‘সুজন’-এর আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মুর্শিকুল ইসলাম শিমুল, সুজন-এর সংগঠক পাঠান আজহার, সুজন মহানগর কমিটির সদস্য জনাব নাদিম মোড়ল, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট গাজীপুর জেলা কমিটির সহ-সভাপতি জনাব লিয়াকত চৌধুরী, শহীদ শিক্ষা পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা জনাব মো. শহীদুল ইসলাম এবং সুজন-এর গাজীপুর জেলা ও মহানগর কমিটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। উক্ত কর্মসূচিতে গাজীপুরের বিভিন্ন স্তরের নারী-পুরুষ যোগদান করেন।

মানববন্ধন চলাকালে সুজন নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ তথা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে যথাযথ ভ‚মিকা পালনের লক্ষ্যে আমরা নির্বাচন কমিশন, সরকার, রাজনৈতিক দল, নির্বাচনী দায়িত্বে নির্বাচিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গণমাধ্যম এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থী ও সমর্থকদের প্রতি এবং সৎ, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত প্রার্থীদের ভোটদানের জন্য ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানাই। নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিনে আজকের এই মানববন্ধন ও পদযাত্রার মধ্য দিয়েও আমরা সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি একই ধরনের আহŸানের পুনরাবৃত্তি করতে চাই। নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকেই তাদের দায়-দায়িত্বের কথা আর একবার মনে করিয়ে দিতে চাই।’

নির্বাচনকে সামনে রেখে মানববন্ধন ও পদযাত্রা থেকে বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট পক্ষের প্রতি কিছু আহ্বান রাখা হয়।

নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বানে বলা হয়: সাম্প্রতিককালে অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনসমূহের অভিজ্ঞতার আলোকে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করুন; সফল নির্বাচন অনুষ্ঠানের ভালো দৃষ্টান্তসমূহ অনুসরণ করুন; সকল দল ও প্রার্থীর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করুন; নির্বাচনী অনিয়মের ক্ষেত্রে কঠোরতা প্রদর্শন করুন; কালোটাকা ও পেশিশক্তির প্রভাবমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করুন; আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা। কেউ নিরপেক্ষতা ভঙ্গ করলে তাৎক্ষণিকভাবে তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করুন; আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন। তারা যেন পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ না করেন, সে ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখুন; নির্বাচনে কোনো এলাকায় ব্যাপক অনিয়ম হলে সেই এলাকার নির্বাচন স্থগিত করুন এবং প্রয়োজনে ফলাফল বাতিল করে নতুন করে ভোট গ্রহণ করুন।

সরকারের প্রতি আহ্বানে বলা হয়: অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ তথা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করুন; নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের কোনোভাবেই কোনো দলের পক্ষে প্রভাবিত করবেন না; নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি এই বার্তা দিন যে, সরকার অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ তথা সুষ্ঠু নির্বাচন চায়।

রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়: যে কোনো মূল্যে বিজয়ী হওয়ার মনোভাব পরিত্যাগ করে নির্বাচনকে একটি প্রতিযোগিতা হিসেবে গ্রহণ করুন। 'আমরা বিজয়ী হবোই' এই ধরনের বক্তব্য না দিয়ে, গণরায় মাথা পেতে নেয়ার ঘোষণা দিন; নির্বাচনসংশ্লিষ্টদের কোনো প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য কোনোভাবেই প্রভাবিত করবেন না।

নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি আহŸানে বলা হয়:
ক্স নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে নিরপেক্ষতা বজায় রাখুন; কোনো বিশেষ প্রার্থীর পক্ষে বা কোনো দলের অনুগত হয়ে কাজ করা থেকে বিরত থাকুন; ভোটকেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা ও অনিয়ম সৃষ্টিকারীসহ জাল ভোট প্রদানকারীদের পুলিশে সোপর্দ করুন এবং প্রয়োজনে ভোট গ্রহণ বন্ধ করুন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বানে বলা হয় : পক্ষপাতহীনভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করুন; কোনো প্রার্থীর কর্মী বা সমর্থকদের উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে গ্রেফতার বা হয়রানি করবেন না; আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করুন; ভোটকেন্দ্রে গমনাগমনকালে কোনো ভোটার যাতে বাধার সম্মুখিন না হন সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।

গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বানে বলা হয়:
ক্স ভোট ক্রয়-বিক্রয়ের বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখুন, এ সংক্রান্ত খবরাখবর দ্রæত প্রচার ও প্রকাশ করুন; নির্বাচনের দিনে নির্বাচনী অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার খবরগুলো দ্রæততার সাথে ফলাও করে প্রচার ও প্রকাশ করুন।

প্রার্থী ও সমর্থকদের প্রতি আহŸানে বলা হয়: নির্বাচনী আচরণবিধি যথাযথভাবে মেনে চলুন; অর্থ বা অন্য কিছুর বিনিময়ে ভোট ক্রয় থেকে বিরত থাকুন; ভোটার বা অন্য প্রার্থীর সমর্থকদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন বা কোন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাÐের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া থেকে বিরত থাকুন; নির্বাচনকে প্রতিযোগিতা হিসেবে গ্রহণ করুন এবং যে কোনো ধরনের ফলাফল স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়ার ঘোষণা দিন।

ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়: ভোট প্রদানকে গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক দায়িত্ব মনে করে সৎ, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত প্রার্থীদের নির্বাচিত করুন; অর্থ বা অন্য কিছুর বিনিময়ে অথবা অন্ধ আবেগের বশবর্তী হয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকুন; দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, যুদ্ধাপরাধী, নারী নির্যাতনকারী, মাদক ব্যবসায়ী, চোরাকারবারী, ঋণখেলাপী, বিলখেলাপী, ধর্মব্যবসায়ী, ভূমিদস্যু, কালোটাকার মালিক অর্থাৎ কোন অসৎ, অযোগ্য ও গণবিরোধী ব্যক্তিকে ভোট দেবেন না।

অনুষ্ঠানের শেষভাগে ‘সুজন’ নেতৃবৃন্দ প্রত্যাশা করে বলেন, ‘আশা করি সংশ্লিষ্ট সকলের সমন্বিত প্রয়াসের মধ্য দিয়ে আগামী ২৬ জুন ২০১৮ তারিখে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ তথা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে এবং ভোটাররা সৎ, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত প্রার্থীদের নির্বাচিত করবেন।’

(বিজ্ঞপ্তি/এসপি/জুন ২৪, ২০১৮)