সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : ভেজাল দুধ উৎপাদন ও বাজারে বিক্রির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সরকারের একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি সোমবার উল্লাপাড়ায় আসেন। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. ইকবাল রউফ মামুনকে আহবায়ক করে ১৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। 

এই কমিটির ৭ সদস্য তদন্ত কাজে অংশ নেন। বেশ কিছু দিন ধরে বৃহত্তর পাবনা জেলার উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, বাঘাবাড়ি, বেড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় একটি অসাধু দুধ ব্যবসায়ী চক্র রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে ভেজাল দুধ উৎপাদন করে তা বাজারে বিক্রি ও বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে আসছিল। সেই সাথে এই ভেজাল দুধ থেকে উৎপাদিত ছানায় বিভিন্ন প্রকার মিষ্টি সামগ্রী উৎপাদন ও বিক্রি হয়ে আসছিল বলে অভিযোগ ওঠে। গত এপ্রিল মাসে এ বিষয় নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় একাধিক সংবাদ প্রচার ও প্রকাশিত হয়। বস্তুত: এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তদন্তের উদ্দ্যোগ নেয়।

উপজেলা অফিসার্স ক্লাবে ড. ইকবাল রউফ মামুনের নেতৃত্বে তদন্ত দলের সদস্যদেরকে ভেজাল দুধ উৎপাদন প্রক্রিয়া দেখানো হয়। উল্লাপাড়ার কালিয়াকৈড় গ্রামের নাম ও চেহারা না দেখানোর শর্তে এক ব্যক্তি ভেজাল দুধ উৎপাদন করে দেখান। এতে পরিমিত গরুর দুধ, সয়াবিন তেল, সোডিয়াম কার্বোনেট (সোডা), চিনি, লবন ও স্বল্প পরিমানে ডিটারজেন্ট দিয়ে ব্লেন্ডার মেশিনে দুধ তৈরি করা হয়। দুধ তৈরি কারক জানান, প্রতি ৪ মন দুধে ১ মন পানি, ২ লিটার সয়াবিন তেল ও আনুপাতিক হারে অন্যান্য সামগ্রী মিশিয়ে ৫ মন ভেজাল দুধ উৎপাদন করে অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজারে বিক্রি করেন। এই প্রক্রিয়ায় ব্যবসায়ীরা প্রতি ৪ মন দুধ থেকে অতিরিক্ত উৎপাদিত ১ মন দুধের মূল্য বাবদ ২ থেকে ২,৫০০ টাকা করে আয় করে থাকেন।

তদন্ত দল প্রধান অধ্যাপক ড. ইকবাল রউফ মামুন স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদেরকে জানান, তিনি এ এলাকার খাঁটি দুধ এবং উৎপাদিত ভেজাল দুধ পৃথকভাবে সংরক্ষণ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছেন। ভেজাল দুধ প্রকৃতপক্ষে মানব দেহের জন্য কতটা ক্ষতিকর এটা নিরুপণ করা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যত দ্রুত সম্ভব পরীক্ষা স্বাপেক্ষে তিনি সরকারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন। এরপর কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। উল্লাপাড়ায় তদন্তকালে কমিটির সদস্য খাদ্য মন্ত্রনালয়ের উপ-সচিব এ.এস.এম জুবেরী, মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সহকারি পরিচালক খালেকুজ্জামান, উল্লাপাড়ার ইউএনও মোঃ আরিফুজ্জামান, ব্রাকের সিনিয়র ম্যানেজার জাকির হোসেন, মিল্ক ভিটার ডিজিএম শফিকুর রহমান, সিরাজগঞ্জের খাদ্য পরিদর্শক শহিদুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তদন্তঅনুষ্ঠানে সিরাজগঞ্জ এবং উল্লাপাড়ার বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিক বৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

(এমএসএম/এসপি/জুন ২৬, ২০১৮)