উজ্জ্বল হোসাইন, চাঁদপুর :  চাঁদপুরে আলোচিত অধ্যক্ষ শাহিন সুলতানা ফেন্সি হত্যাকা-ের মূল রহস্য উদ্ঘাটন হতে যাচ্ছে। ফেন্সির মূল খুনিরা আটক হতে শুরু করেছে। সে সরাসরি এ কিলিং মিশনে অংশ নিয়েছে এমন একজন খুনি আটক হওয়ার পরই এ রহস্যজনক হত্যাকা-ের জট খুলতে শুরু করেছে।

আটক খুনি রাকিবুল হাসান রাকিব (২৩) আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। রাকিব অ্যাডঃ জহিরের দ্বিতীয় স্ত্রী জুলেখা বেগমের চাচাতো ভাই। জুলেখার প্ররোচনা এবং নির্দেশেই খুনিরা অ্যাডঃ জহিরুল ইসলামের প্রথম স্ত্রী অধ্যক্ষ শাহিন সুলতানা ফেন্সিকে খুন করে। খুনি রাকিবের সাথে তার আরেক চাচাতো ভাই লিমনও হত্যাকা-ের সময় ছিলো। আটক রাকিব গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে চাঁদপুরের অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ কায়সার মোশারফ ইউছুফের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

এ জবানবন্দিতে রাকিব ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে। রাকিবের বাড়ি মতলব উত্তর উপজেলার ফতেপুর পশ্চিম ইউনিয়নের রাঢ়িকান্দি গ্রামে। তার পিতার নাম আব্দুল্লাহ আল-মামুন। সে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ছাত্র। রাকিবকে গত রোববার ঢাকা থেকে আটক করা হয় বলে জানা গেছে।

রাকিব আদালতে এই কিলিং মিশনের যে বর্ণনা দিয়েছে তার সারসংক্ষেপ হচ্ছে, রাকিব তার আরেক চাচাতো ভাই লিমনসহ ঘটনার দিন (২৪ জুন) ইফতারের পর পরই অধ্যক্ষ শাহীন সুলতানা ফেন্সির ষোলঘরস্থ বাসায় যায়।

তারা বাসার দরজায় দাঁড়িয়ে অ্যাডঃ জহিরুল ইসলামের খোঁজ করেন এবং অধ্যক্ষ ফেন্সিকে বলেন, তারা বিদেশ যাওয়ার কাগজপত্র অ্যাডঃ জহিরকে দেখাতে এসেছেন। ফেন্সি তখন অ্যাডঃ জহির বাসায় নেই বলার পরপরই খুুনিরা অত্যন্ত ভদ্র ভাষায় বাসার ওয়াশরুম (টয়লেট) ব্যবহার করার জন্যে অনুমতি চায়। তাদের একজন নিজেকে মেডিকেলের ছাত্র হিসেবে পরিচয় দেয়।

তখন অধ্যক্ষ ফেন্সি তাদের ভেতরে ঢুকার অনুমতি দিয়ে বলেন, আমার মেয়েও ডাক্তার। অধ্যক্ষ ফেন্সি তাদেরকে বলেন, তোমরা ইফতার করেছো? তারপর বলেন, ডাইনিংয়ে খাবার আছে খেয়ে নাও। দুই খুনি তখন ডাইনিং টেবিলে বসে খেজুর খায়। অধ্যক্ষ ফেন্সি তাদেরকে আপ্যায়ন করাতে থাকেন। এ সময়ই সুযোগ বুঝে এক খুনি বাসার তালা দিয়ে অধ্যক্ষ ফেন্সির পেছন থেকে তার মাথার পেছনে আঘাত করলে তিনি সাথে সাথে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়েন। এরপর দুজনে মিলে তালা দিয়ে একের পর এক মাথায় আঘাত করে এবং বাসার ফল কাটার চাকু দিয়ে মাথায় আরো কয়েকটি আঘাত করে। তারা ফেন্সির হত্যা নিশ্চিত করতে পলিথিন দিয়ে মুখ চেপে ধরে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর খুনিরা বাসার বাথরুমে গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে বাসা থেকে বের হয়ে লঞ্চঘাট চলে যায়।

এদিকে ঘটনার সময় খুনি রাকিবের হাত কেটে যায়, তারা লঞ্চঘাট থেকে ব্যান্ডেজ ক্রয় করে। দুই খুনি সে রাতেই এমভি ইমাম হাসান লঞ্চে চলে যায় ঢাকা। ঢাকা থেকে লিমন চাঁদপুর চলে এলেও রাকিব চলে যায় গাজীপুর। খুন করার পর থেকে এই দুই খুনি কেউ কারো সাথে মোবাইলে আর যোগাযোগ করে নাই। তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে আটক করা হয় খুনি রাকিবকে। পুলিশ জানিয়েছে, অ্যাডঃ জহিরের দ্বিতীয় স্ত্রী জুলেখাই ফেন্সি হত্যাকা-ের মূল পরিকল্পনাকারী। ঘটনার পর পুলিশ যে জুলেখার মোবাইল জব্দ করেছিলো, সেখানে দেখতে পান রাকিব এবং লিমন ঘটনার দিন জুলেখার সাথে মোবাইলে একাধিকবার কথা বলেছে। এ সূত্র ধরেই ডিবি পুলিশ খুনিদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়।

আরো জানা যায়, ঘটনার দিন সকালে দুই খুনির একজন ঢাকা থেকে আরেকজন মতলব উত্তর থেকে চাঁদপুর আসে। তারা শহরের হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠসহ বিভিন্ন স্থানে বৈঠক করে খুনের পরিকল্পনা করতে থাকে। ইফতারের পর পরই দুই খুনি কিলিং মিশনে যায়। খুনি রাকিবের সাথে জুলেখা বেগমের নিয়মিত যোগাযোগ ছিলো। তারা মোবাইলে নিয়মিত কথা বলতো। জবানবন্দিতে রাকিব জুলেখার কথা বললেও অ্যাডঃ জহির প্রসঙ্গে কিছু বলেছে কি না, তা জানা যায়নি।

পুলিশ জানিয়েছে, হত্যাকা-ের সাথে অ্যাডঃ জহিরের সম্পৃক্ততা কতোটুকু তা নিশ্চিত করার জন্যে আরো ব্যাপক তদন্ত প্রয়োজন। এ খুনের সাথে সর্বমোট কতোজন জড়িত তা এখনো নিশ্চিত করে বলেনি পুলিশ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশ পরিদর্শক মহিউদ্দিন জানিয়েছেন, তদন্তের স্বার্থে অনেক কথাই বলা যাচ্ছে না। তবে মামলার রহস্য উদ্ঘাটন হয়েছে। বাকী আসামীদেরও দ্রুত সময়ে আটক করা সম্ভব হবে বলেও তিনি জানান।
উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী ও ফরিদগঞ্জের গল্লাক আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ শাহিন সুলতানা


অধ্যক্ষ ফেন্সি হত্যার বিচারের দাবিতে মহিলা কলেজের প্রাক্তন ছাত্রীদের মানববন্ধন

অধ্যক্ষ ফেন্সি হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে চাঁদপুর সরকারি কলেজের প্রক্তন ছাত্রীরা। মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় মহিলা কলেজ প্রাঙ্গণে মানববন্ধনে প্রাক্তন ছাত্রীদের পাশে এসে দাঁড়ায় চাঁদপুর মহিলা সংস্থার নেত্রীরা। সেই সময় মানববন্ধনে উল্লেখযোগ্যদের মধ্য ছিলো অধ্যক্ষ ফেন্সির বোন চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক ভিপি ও মেয়ে, পুষ্প, পদ্ম এবং পুষ্পের শিশু কন্যা আয়শী। মানববন্ধনে তারা ও অধ্যক্ষ ফেন্সির হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে।

(ইউএইচ/এসপি/জুন ২৭, ২০১৮)