নগরকান্দা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি : ফরিদপুরের নগরকান্দায় অপহরণের ২০ দিন পর স্কুল ছাত্র আলাউদ্দিন মাতুব্বর অন্তরের অর্ধ গলিত লাশ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। মঙ্গলবার দিবাগত রাত একটার দিকে উপজেলার তালমা ইউনিয়নের পাগলপাড়া গ্রামের খালের পাশে  মাটি চাপা দেয়া এ লাশ উদ্ধার করা হয়।

গত ৭ জুন রাতে তারাবিহ নামাজ পড়তে বাসা থেকে বের হয়ে আর ফেরেনি অন্তর। সে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের পাগলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা গ্রীস প্রবাসী আবুল হোসেন মাতুব্বরের ছেলে ও তালমা নাজিমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. জাকির হোসেন খান জানান, অন্তর অপহরণ মামলার আসামী মাহাবুব আলমকে পুলিশ গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অন্তরকে হত্যা করার কথা স্বীকার করে সে। তার দেখানো জায়গা থেকেই অন্তরের লাশ উদ্ধার করা হয়।

তিনি আরো জানান, গত ০৭ জুন রাতে অপহরণের পর ওই রাতেই গলায় গামছা পেছিয়ে শ্বাসরোধ করে অন্তরকে হত্যা করা হয়। পরে পাগলপাড়া গ্রামের একটি খালের পাশে মাথা নিচ দিকে দিয়ে মাটিতে পুতে রাখে।

হত্যার কারন হিসেবে আটককৃতদের বরাত দিয়ে এই কর্মকর্তা জানান, আসামী খোকনের সাথে অন্তরের পরিবারের পারিবারিক ঝামেলা ছিল, এ নিয়ে মামলাও চলছিল। সম্প্রতি খোকনের ওই গ্রামের এক নারীর সাথে পরকিয়া সম্পর্ক (আপত্তিকর অবস্থায়) দেখে ফেলে অন্তর। অপর এক আসামীর মেয়ের সাথে অন্তরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল।

সব আসামী মিলে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে স্কুল ছাত্র অন্তরকে হত্যা করে বলে জানান এই কর্মকর্তা। তিনি আরো বলেন, এটি কোন অপহরণ কিংবা মুক্তিপন আদায় এর ঘটনা ছিল না, হত্যার উদ্যেশ্যেই অন্তরকে অপহরন করেছিল তারা।

প্রসঙ্গত, গত ৭ জুন তারাবিহ নামায পড়তে গিয়ে নিখোঁজ হয় অন্তর। ৮ জুন অন্তরের মা জান্নাতি বেগম নগরকান্দা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। এর পর ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে বলে অন্তরের মায়ের মোবাইলে ফোন করে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে অপহরণকারীরা। ১৪ জুন রাতে অপহরণকারীদের বলা জায়গাতে মুক্তিপণের ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকাও দেয় অন্তরের মা। তাতেও ছেলেকে ফেরৎ না পাওয়ায় ১৫ জুন অন্তরের মা জান্নাতী বেগম এলাকার ১৬ জনকে আসামী করে নগরকান্দা থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন।

নগরকান্দা থানা পুলিশ মঙ্গলবার আসামী মাহবুব নামে একজনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। মাহবুবের তথ্য মতে পাগলপাড়া খালের পাশে মাটির নীচ থেকে অন্তরের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়।

বুধবার সকালে অন্তরের স্বজনরা আসামীদের ৫/৬ টি বাড়ী ঘর ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগ করে এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর করেছে। এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। অন্তরের লাশ উদ্ধার হওয়ার পর স্বজনদের আহাজারি ও এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

অন্তরের লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করে নগরকান্দা থানার ওসি সৈয়দ লুৎফর রহমান বলেন, এ পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরা হলেন, নগরকান্দার তালমা ইউনিয়নের মানিকদী গ্রামের মাহাবুব আলম ব্যাপারী, জুবায়ের আলম ব্যাপারী, বিলনালিয়া গ্রামের খোকন শেখ, সুজন মাতুব্বর ও পিপরুল গ্রামের জামাল মাতুব্বর।


(এনএস/এসপি/জুন ২৭, ২০১৮)