স্পোর্টস ডেস্ক : ২০০০ সালে ইউরোতে প্রবল ধাক্কা খাওয়ার পরই বোধোদয় হয়েছিল জার্মানির। সেবার গ্রুপপর্ব থেকেই বাদ পড়েছিল জার্মানি। তখনই তরুণ খেলোয়াড় তুলে আনার প্রক্রিয়ায় সংস্কার করেছিল। ফুটবল একাডেমির ফসল হিসেবে ২০০৬ বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে উঠল জার্মানি। যে দলে ফিলিপ লাম, বাস্তিয়ান শোয়েনস্টেইগারের মতো তরুণরা ছিলেন। আট বছর পেরিয়ে সেই লামরাই এখন জার্মান দলের স্তম্ভ, ভরসা। তাদের হাত ধরেই এখনও জার্মান ফুটবল দাপুটে যুগটা ধরে রেখেছে।



গত চারটি বিশ্বকাপও তারা দুর্দান্ত ফুটবল খেলেছে। কিন্তু ট্রফি ধরা দেয়নি তাদের হাতে। ২০০২ সালে ব্রাজিলের কাছে হেরেছে তারা ফাইনালে। লামদের হাত ধরে ২০০৬, ২০১০ বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থান অর্জন পর্যন্তই যেতে পেরেছিল জার্মানরা। দুই আসার পর ২০১৪ বিশ্বকাপে এসে আবারও ফাইনালে ট্রফি জয়ের মঞ্চে তিনবারের সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। ১৯৯০ সালের পর আর বিশ্বকাপ জেতা হয়নি তাদের। সেবারও এই আর্জেন্টিনাকে হারিয়েই ট্রফি জিতেছিল জার্মানি। ২৪ বছরের আক্ষেপ ঘোচানোর সুযোগ সামনে। তবে তাদের প্রতিপক্ষ আর্জেন্টিনার জন্যও আজকের ফাইনাল অনেক ক্ষত, শেকড় ভাঙার উপলক্ষ। গত ২৪ বছর তো আলবেসেলেস্তেরা কোয়ার্টার ফাইনালই পার হতে পারেনি। এবার শেষ আটের গেরো পার হয়ে ফাইনালে তারা। মারাকানায় রবিবার আর্জেন্টিনা ২৮ বছর, জার্মানি ২৪ বছরের অপেক্ষা ঘুচানোর লক্ষ্যে মাঠে নামবে। বিশ্বকাপে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স দেখানো জার্মানরা তুলনামূলকভাবে বেশি মুখিয়ে আছে চতুর্থ শিরোপা নিয়ে দেশে ফিরতে।

লক্ষণীয় যে, বিশ্বকাপ ফাইনাল দ্বারপ্রান্তে। চারদিকে ফাইনাল নিয়ে কত কথা, আলোচনা, চুলচেরা বিশ্লেষণ, জল্পনা-কল্পনা। কিন্তু জার্মানদের মুখে কথা নেই। চুপচাপ ফাইনালের প্রস্তুতিতে নিবিষ্ট দলটি। গ্রুপপর্বে ঘানার সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করা ব্যতীত সব ম্যাচই জিতেছে তারা। আলজেরিয়ার সঙ্গে দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে কিছুটা ম্লান মনে হয়েছে জার্মানদের। এ ছাড়া ব্রাজিল বিশ্বকাপের আগাগোড়া জোয়াকিম লোর দল ধারাবাহিক ফুটবল খেলেছে। গোলবন্যায় ভাসিয়েছে প্রতিপক্ষদের। নিজেদের প্রথম ম্যাচেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালকে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে দলটি। সর্বশেষ জার্মান নিষ্ঠুরতার কবলে পড়েছিল স্বাগতিক ব্রাজিল। সেমিফাইনালে স্বাগতিকদের ৭-১ গোলে হারের লজ্জা উপহার দিয়েছে লোর শিষ্যরা। পরিষ্কারভাবেই রবিবার ফাইনালের ফেভারিট দল তারা। প্রতিপক্ষ আর্জেন্টিনার সঙ্গে বিশ্বকাপে প্রতিদ্বন্দ্বিতার হিসেবও এগিয়ে রাখছে তাদের। ২০০৬, ২০১০ দুটি বিশ্বকাপেই আর্জেন্টিনাকে বাড়ির টিকিট ধরিয়ে দিয়েছিল জার্মানরা। ১৯৯০ সালে ফাইনালে হারানোর ঘটনা তো আছেই। ২০১৪ সালে এসে জার্মানি একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি মঞ্চায়ন করতেই মুখিয়ে থাকবে।

ফাইনাল ম্যাচ প্রতিপক্ষ আর্জেন্টিনা নিয়ে কম-বেশি আলোচনা, কৌশল নির্ধারণ, মেসিকে নিষ্ক্রিয় করে রাখার ছক সবই নির্ধারণ করছে জার্মানি। আবার নিজের ঘরের দিকেও তো লক্ষ করতে হচ্ছে সবকিছু ঠিকভাবে চলার পরও। যেমনটা বিশ্বকাপের প্রথম চারটি ম্যাচ অধিনায়ক ফিলিপ লাম খেলেছেন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হিসেবে। সেখানেও তিনি সফল হয়েছে। কিন্তু তার নিজের জায়গাটা হলো রাইট ব্যাকের পজিশন। যেখানে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন লাম। এই পজিশনে তিনি সম্ভবত বিশ্বসেরাও। গত দুটি ম্যাচেই রাইট ব্যাক হয়ে খেলেছেন তিনি। রক্ষণে হামেলস, বোয়েটেংয়ের জুটি জমে উঠেছে। দুই পাশে লাম ও বেনেডিক্ট থাকছেন। মাঝমাঠের দায়িত্ব সেরে শোয়েনস্টেইগার, স্যামি খেদিরাও নিচে নেমে আসছেন। মুলার, টনি ক্রুস, মেসুত ওজিলদের মাঝেও রয়েছে চমত্কার বোঝাপড়া। বুড়ো মিরোস্লাভ ক্লোসাও তাল মেলাতে পারছেন তরুণদের সঙ্গে। জার্মান অধিনায়ক লাম তাই মনে করেন, আজ ফাইনালে অভিজ্ঞতাই হবে তার দলের বড় অস্ত্র। ৩০ বছর বয়সী এই ফুটবলার মনে করেন, সতীর্থদের ফাইনাল খেলার চাপ সামলানোর অভিজ্ঞতাই এগিয়ে রাখবে জার্মানদের।

লাম বলেন, ‘বড় ক্লাবের হয়ে বড় বড় ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা আমাদের অনেক ফুটবলারেরই আছে। এটা অবশ্যই আমাদের জন্য ইতিবাচক দিক হবে। আপনি জানেন না আপনি কতদূর যেতে পারবেন কিন্তু আপনাকে ভালো প্রস্তুতি নিতে হবে। দল হিসেবে কাজ করতে হবে এবং এখন আমরা এক ধাপ দূরে আছি।’ রবিবার ফাইনাল জেতার স্বপ্নে বিভোর লাম। জার্মানদের চতুর্থ বিশ্বকাপ এনে দেয়ার লক্ষ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি ফাইনালের দিকে তাকিয়ে আছি। আমরা শুধু বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে চাই।’ তিনি আশাবাদী তার দল বিশ্বকাপ জিতবে। তার দলের সবাইও নাকি ফাইনালের আগে মানসিকভাবে বেশ চাঙ্গা রয়েছেন।

মুলার, ক্লোসা, ওজিলদের মতো যত খেলোয়াড়ই থাকুক, বর্তমান জার্মান দলটার বড় চালিকাশক্তি লামের হাতে। ২০০৪ সাল থেকে জাতীয় দলে খেলা লাম এবার দেশকে বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ এনে দিতে চান।

(ওএস/এইচআর/জুলাই ১৩, ২০১৪)