বাগেরহাট ও শরণখোলা প্রতিনিধি : বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ৩৫/১ নম্বর পোল্ডারের বিভিন্ন জায়গায় অব্যাহত ভাঙ্গনে বিলিন হচ্ছে শত শত বিঘা একর জমি। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে এ জনপদের মানুষ। সম্প্রতি একাধিক স্থান ভেঙ্গে নদী গর্ভে বিলীন হওয়ায় বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বেড়িবাঁধের আশপাশে আশ্রয় নেয়া মানুষগুলো। 

এছাড়া ভাঙ্গনের কবলে পড়ে নিঃশ্ব হয়ে কেউ কেউ জীবনের তাগিদে এলাকা ছেড়ে অন্য জনপদে পাড়ি জমিয়েছে। এদিকে বিশ^ব্যাংকের অর্থায়নে কোস্টাল ইমব্যাংকমেন্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (সিইআইপি) নামে প্রকল্পের ঠিকাদারার ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় বাঁশ ও বালির বস্তা দিয়ে ভাঙ্গন ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। তবে তাদের এ চেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঐ এলাকার একাধিক জনপ্রতিনিধি।

বিগত ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরে জলোচ্ছ্বাসে ৩৫/১ পোল্ডার ভেঙ্গে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রাণহানির পরিমান ছিল সহ¯্রাধিক। এরপর দাবি ওঠে ঐ এলাকায় টেকসই বেড়িবাধ নির্মানের। এ দাবীর প্রেক্ষিতে বিশ^ব্যাংকের অর্থায়নে কোস্টাল ইমব্যাংকমেন্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (সিইআইপি) নামে প্রকল্পের আওতায় ৩শ’ কাটি টাকা ব্যয়ে বাগেরহাটের উপকূলীয় উপজেলা শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ ৩৫/১ নম্বর পোল্ডারে আওতায় ৬২ কিলোমিটার টেকসই বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে জানুয়ারীতে। কিন্তু এ কাজ শুরুর পর থেকেই নদী শাসন না করার ফলে একাধিক জায়গায় ভেঙ্গে নদী গর্ভে বিলীন হতে থাকে। এরপরও জোড়াতালি দিয়ে ভাঙ্গন ঠেকানোর চেষ্টা করছে প্রকল্পের কর্তাব্যক্তিরা।

শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের বগী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা রুস্তম আলী খা বলেন, নদী ভাঙ্গনের কারণে বার বার ঘর বাড়ি সরিয়ে নিতে হয়েছে। বাপ দাদার ভিটা মাটি বিলীন হয়েছে নদীতে। এখন অন্যের জায়গায় বসবাস করছি। কিন্তু আতঙ্কে আছি কখন এ জায়গা থেকে চলে যেতে হয়। একই গ্রামের দেলোয়ার বয়াতি বলেন কয়েক দিনের ভাঙ্গনে কয়েকশ মিটার বেড়িবাধ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে টেকসই বেরিবাধ নির্মানের কাজ কখনওই সম্পন্ন হবে না। আগে নদী শাসন করে বেড়িবাধ দিতে হবে। কোন কোন জায়গা থেকে এখন জোয়ারের পানি উপচে বেরিবাধের ভিতরে ঢুকে পড়ছে।

সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য রিয়াদুল পঞ্চায়েত বলেন, তাফালবাড়ী, পুরাতন লঞ্চঘাট, আমাদের বগী, গাবতলা, সাতঘর ও সাউথখালী গ্রামের মানুষ এ ভাঙ্গনের কারণে আতঙ্কে রয়েছি। বর্তমানে নদী ভাঙ্গনের মাত্রা বাড়ছে, বাড়ছে জোয়ারের পানি। যেকোন সময় লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়লে এলাকার কৃষিকাজ ও মৎস্য চাষে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে এ এলাকার মানুষ এমনিতেই আতঙ্কে থাকে কখন কি হয়? তারপর আছে বেড়িবাধ ভেঙ্গে প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা।

সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন বলেন, বলেশ্বর নদীর তীরে হওয়ায় এমনিতেই এ এলাকা প্রাকৃতিক ভাবে ঝড় ও জলচ্ছাসের মধ্যে বসবাস করে। আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে বলেশ্বর নদীর তীরে বেড়িবাধ নির্মান শুরু হয়। এ বেড়িবাধ নির্মানের আগে নদী শাসন করার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু নদী শাসন না করে বেড়িবাধ নির্মান কাজ শুরু করায় নির্মানাধীন অবস্থায় বারবার বেড়িবাধ ভেঙ্গে যাচ্ছে। এ নদীর তীরবর্তী প্রায় তিন কিলোমিটার বেরিবাধ ঝুকিপূর্ন।

নতুন নতুন স্থান ভাঙ্গন ও ঝুকিপূর্নের কথা শিকার করে কোস্টাল ইমব্যাংকমেন্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের (সিইআইপি) নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হান্নান বলেন, আমরা নদী শাসন করার জন্য প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। প্রস্তাবনা পাশ হলে নদী শাসনের কাজ করা হবে। তবে বর্তমানে যেসব স্থান ঝুকিপূর্ন রয়েছে সেসব স্থান জরুরী ভিত্তিতে রক্ষা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

(এসএকে/এসপি/জুন ২৮, ২০১৮)