জেএমবির সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে প্রকাশক বাচ্চুকে হত্যা
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি : প্রকাশক ও মুক্তমনা লেখক শাহাজাহান বাচ্চুকে (৬২) গুলি করে হত্যা করেন জেএমবির ঢাকা বিভাগের সামরিক কমান্ডার আবদুর রহমান (৩২)। তিন মাস আগে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের খাসমহল এলাকার একটি বাসা ভাড়া নিয়ে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করা হয়। জেএমবির সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে বাচ্চুকে হত্যা করা হয়।
বৃহস্পতিবার জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম এসব তথ্য জানান।
১১ জুন বাচ্চুকে গুলি করে হত্যার ১৩ দিনের মাথায় ২৪ জুন গাজীপুর জেলায় অভিযান চালিয়ে আবদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম জানান, সন্দেহভাজন আসামিদের গ্রেফতার করতে বুধবার দিনগত রাতে মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশ, এন্টি টেররিজিম ইউনিট, পুলিশ হেডকোয়াটার্স ইন্টেলিজেন্স উইং, বগুড়া জেলা পুলিশ এবং গাজীপুর জেলা পুলিশের সহায়তায় গাজীপুর জেলার কেওয়া পশ্চিমখণ্ড গ্রামের একটি দোতলা বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে গ্রেফতার করা হয় আব্দুর রহমানকে। তিনি লালু, সাঈদ, আক্কাস ও কাওসার ছদ্মনাম ধারণ করে বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করতেন। আব্দুর রহমান পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ থানার ঢাকাইয়া পাড়ার হোসেন আলীর ছেলে। এ সময় তার ঘরের আলমারি থেকে দু’টি ৭.৬৫ পিস্তল, ২১ রাউন্ড গুলি ও রান্না ঘর থেকে চারটি তাজা গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তিনি শাহাজাহান বাচ্চু হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
পরে তাকে নিয়ে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গাজীপুর, ঢাকা ও মুন্সিগঞ্জে অভিযান চালানো হয়। সিরাজদিখান থানার বালুরচর ইউনিয়নের খাসমহল এলাকার যে বাসা ভাড়া নিয়ে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়, তার সহযোগী বাকি জেএমবি সদস্যদের গ্রেফতার করতে পরে সে বাসায় তল্লাশি চালানো হয়। তল্লাশি শেষে রাত ১টার দিকে সেখান থেকে ফেরার পথে মোটরসাইকেলে করে আসা সহযোগীরা তাকে ছিনিয়ে নেয়ার উদ্দেশে পুলিশের ওপর গুলি চালায়। এসময় পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। একপর্যায়ে সহযোগীরা পালিয়ে যাওয়ার পর সেখানে আব্দুর রহমানকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। এ অবস্থায় আব্দুর রহমানকে উদ্ধার করে সিরাজদিখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেনেডসহ আগ্নেয়াস্ত্র ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।
এ সময় সিরাজদিখান থানার তিন পুলিশ সদস্য সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) দেলোয়ার, হাসান এবং কনস্টেবল মোশারফ আহত হন। তাদের মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একটি হত্যা ও তিনটি ডাকাতি মামলা রয়েছে। বাচ্চু হত্যাকাণ্ডে মোট ছয়জন জড়িত বলে জানা গেছে। ২০১৫ সাল থেকেই প্রকাশকের গতিবিধি লক্ষ্য করে হত্যার পরিকল্পনা করে আসছিলেন তারা।
গত ১১ জুন ইফতারের আগ মুহূর্তে মধ্যপাড়া ইউনিয়নের পূর্ব কাকালদি তিন রাস্তার মোড়ে গুলি করে হত্যা করা হয় প্রকাশক শাহজাহান বাচ্চুকে। ১২ জুন সিরাজদিখান থানায় শাহজাহান বাচ্চুর দ্বিতীয় স্ত্রী আফসানা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা চারজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
তিনি বিশাকা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ও মুন্সিগঞ্জ জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দায়িত্ব পালন করেছিলেন ‘আমাদের বিক্রমপুর’ নামের একটি অনিয়মিত সাপ্তাহিক পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবেও।
এদিকে আসামি আব্দুর রহমান নিহতের ঘটনায় স্বস্তি প্রকাশ করে প্রকাশক হত্যা মামলার বাদী দ্বিতীয় স্ত্রী আফসানা বেগম জানান, জেএমবি এই হত্যায় জড়িত থাকায় তাদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করছি। এছাড়া বাকি আসামিদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
(ওএস/এসপি/জুন ২৮, ২০১৮)