সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : দু’সপ্তাহ আগেও যে যমুনার বুক উপচে পানিতে ডুবে দিয়েছিলো চরাঞ্চল। পানি নেমে যাওয়ার পর সেই বন্যাকবলিত চরাঞ্চলের বানভাসি মানুষগুলো এখন বেঁচে থাকার নানামুখি সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিদিন দিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চরাঞ্চলের নারী পুরুষসহ বিভিন্ন বয়সী ছেলে মেয়েরা দল বেঁধে যমুনায় মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

তবে এসব নারীদের মাছ ধরার কোন সরঞ্জামাদি নেই। হাতের কারিশমায় মাছ ধরে ফেলেন তারা। শুধু মাছ রাখার পাতিল শরীরের সঙ্গে বেঁধে রেখে চরের তীরবর্তী অংশ থেকে শুরু করে যমুনার বেশ গভীরে চলে যান মাছ ধরতে। পানিতে ডুব দিয়ে মাটি হাতরিয়ে তারা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরেন । আর বড়দের সাথে পাল্লা দিয়ে বিভিন্ন বয়সী ছেলে মেয়েরাও মাছ ধরতে নেমে পড়েন।

অনেকেই আবার বিভিন্ন চর এলাকায় সারিবদ্ধভাবে দ্বারকী পেতে রাখেন। আবার কেউ কেউ বেড় জাল দিয়ে মাছ ধরে থাকেন। এক্ষেত্রে তারা ছোট-বড় নৌকাও ব্যবহার করে থাকেন।
সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার মাইজবাড়ী, নাটুয়ারপাড়া, তেকানিসহ বেশ কয়েকটি চরাঞ্চল ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা যায়।

এসময় নাজমা খাতুন, আছিয়া বিবি, আসমত আরাসহ একাধিক নারী জানান, বংশ পরম্পরায় তারা মাছ ধরে আসছেন। কারণ যমুনা ছেড়ে যাওয়ার মত কোন জায়গা তাদের নেই। অদূর ভবিষ্যতে হওয়ারও সম্ভাবনা নেই। তাই যমুনার সঙ্গে যুদ্ধ করেই বেঁচে থাকতে হবে। তারা বলেন, মাছ ধরা তাদের জীবন জীবিকার অংশ। সকালে বাড়ির কাজ সেরে তারা দল বেঁধে ছোটেন যমুনায়। চরের তীরবর্তী অংশে যমুনার পানিতে নেমে পড়েন তারা। সন্ধান করতে থাকেন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।

এসব নারীরা আরো জানান, জীবিকা নির্বাহের জন্য তারা মাছ ধরেন। কেননা অভাব-অনটন তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। উপার্জনক্ষম ব্যক্তিরা যে আয় করেন তা দিয়ে সংসার চলে না। বন্যা হয়ে যাওয়ায় তাদের কাজও নেই। ফলে সংসারের অভাব আরো বেড়ে গেছে। এ কারণে বর্তমানে তাদের প্রত্যেক দিন মাছের সন্ধানে যমুনায় নামতে হয়। তারা গোলসা, ট্যাংরা, পুটি, পবদা, চিংড়ি পাতাশী, বাঁশ পাতারি, গচুঁই, শিংসহ ছোট বড় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পানিতে ডুব দিয়ে হাত ও ছোট ছোট বেড় জাল দিয়ে ধরে থাকেন।
আর এভাবেই প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সারাদিন যে মাছ ধরেন তা বিক্রি করে চলে তাদের সংসার ।

(এমএএম/এসপি/ জুন ৩০, ২০১৮)