শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট : দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহত্তর শ্রমিক সংগঠন ‘মোংলা বন্দর শ্রমিক সংঘ’ দখলের অভিযোগ উঠেছে। মোংলা বন্দরের ইতিহাসে প্রাচীন এই শ্রমিক সংঘের অফিসের তালা ভেঙ্গে রবিবার অফিস কক্ষসহ পুরো ভবন এলাকা দখল করে নিয়েছে শ্রমিদের একটি পক্ষ। শ্রমিক সংঘের অফিস দখল ইস্যুতে স্থানীয় শ্রমিকেরা দু’দলে বিভক্ত হয়ে পড়ায় মোংলা বন্দরের সাধারণ শ্রমিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও উত্তোজনা ছড়িয়ে পড়েছে। 

শ্রমিক সংগঠন সূত্র জানায়, বিগত ২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে রাষ্ট্রপতির এক আদেশে ‘মোংলা বন্দর ডক শ্রমিক পরিচালনা বোর্ড’ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় শ্রমিক সংগঠন মোংলা বন্দর শ্রমিক সংঘের সকল কার্যক্রম। কল্যালমূলক এ প্রতিষ্ঠানটি ভেঙ্গে যাওয়ায় চরম দূরাবস্থা দেখা দেয় মোংলা বন্দরে বাণিজ্যিক জাহাজে কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার অবহেলিত শ্রমিকদের দাবী বিবেচনায় নিয়ে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে তাদেরকে অবসর দেন।

এরপর থেকে স্বেচ্ছায় ‘নো-ওয়ার্ক, ‘নো-পে’ ভিত্তিক শ্রম মজুরীতে এখনও বন্দরে কয়েক হাজার শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। এ অবস্থায় মোংলা বন্দরের বাণিজ্যিক জাহাজের আগমন-নির্গমনসহ নানা ধরণের কার্যক্রম চলামন থাকায় শ্রমিক সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে শ্রমিকেরা দ্বিধাবিভক্তি হয়ে পড়েন। দ্বিধাবিভক্তিতে থাকা শ্রমিকেরা ভিন্ন ভিন্ন নামে শ্রমিক সংগঠনের রেজিষ্ট্রেশন পেতে শ্রম অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে তদবির চেষ্টার পাশাপাশি প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে একে অপরের বিরুদ্ধে মামলায় জড়িয়ে পড়েন।

এ নিয়ে বর্তমানে উচ্চ আদালতে ৪টি মামলা বিচারাধীন থাকায় মুলত ঝিমিয়ে পড়ে শ্রমিক সংগঠনের কার্যক্রম। এই অবস্থায় মো: ওমর ফারুক সেন্টুর নেতৃত্বে শ্রমিকদের একটি গ্রুপ রবিবার দুপুরে মোংলা বন্দর শ্রমিক সংঘের ভবন দখলে করে নিয়ে তারা ‘মোংলা বন্দর শ্রমিক কর্মচারী সংঘ’ নামে নতুন সংগঠনের কার্যক্রম শুরু করেন। এই অবস্থায় মোংলা বন্দর শ্রমিক সংঘের ভবন দখল হওয়া নিয়ে বন্দরের শ্রমিকদেও মধ্যে দেখা দেয় চরম ক্ষোভ ও উত্তোজনা।

এ বিষয়ে মোংলা বন্দর শ্রমিক সংঘের সাধারণ সম্পাদক একেএম সাহাবুদ্দিন বলেন, শ্রমিকদের ন্যার্য্য অধিকার ও স্বার্থ ধুলিসাৎ করতেই নতুন সংগঠন নামধারীরা নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তবে এ নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের ছাড়াও দখলদারদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই আইনি লড়াই করার কথা জানিয়েছেন তিনি।

মোংলা বন্দর শ্রমিক সংঘের প্রবাবশালী নেতা মো. মাহবুবুর রহমান মানিক বলেন, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ডক শ্রমিক পরিচালনা বোর্ড বিলুপ্ত হলেও শ্রমিক সংগঠন মোংলা বন্দর শ্রমিক সংঘ ভেঙ্গে যায়নি, কিছুটা নিষ্ক্রিয় রয়েছে মাত্র। বর্তমানে মোংলা বন্দর শ্রমিক সংঘের কার্যক্রম চালু থাকলেও একটি মহল নতুন সংগঠনের নামে জোর করে শ্রমিক সংঘটি দখল করে নিয়েছে। মোংলা বন্দর শ্রমিক সংঘের ভবন দখলদারদের উচ্ছেদ করতে কর্মসূচী দেয়া হবে।

মোংলা বন্দর শ্রমিক সংঘ দখলে নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে মোংলা বন্দর শ্রমিক কর্মচারী সংঘের সাধারণ সম্পাদক মো: ওমর ফারুক সেন্টু বলেন, বন্দরে কর্মরত শ্রমিকদের কল্যাণে নতুন করে সংগঠনের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, একটি মহল শ্রমিক স্বার্থ নয়, নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় অপপ্রচার চালাচ্ছেন।

এদিকে শ্রমিকদের মধ্যে চলমান উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে মোংলা বন্দর বার্থ অপারেটর (ষ্টিভিডরস) অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ জাহিদ হোসেন বলেন, শ্রমিকদের মধ্যে নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব নিয়ে বিভক্তিতে মোংলা বন্দরে স্বাভাবিক কার্যক্রমে বিশৃঙ্খলার পাশাপাশি কাজ কর্মে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশংকা রয়েছে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর একেএম ফারুক হাসান বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। তারপরও যেহেতু মোংলা বন্দর শ্রমিক সংঘের ভবনসহ যাবতীয় সম্পত্তির মালিক বন্দর কর্তৃপক্ষ সেহেতু দখল সংক্রান্ত বিষয়ে কোন অভিযোগ পেলে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন বন্দরের এই র্শীষ কর্মকর্তা।

(এসএকে/এসপি/জুলাই ০৩, ২০১৮)